• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০৬:৪১

জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত মেহেরপুর হাসপাতালে

  • সারাদেশ       
  • ০৬ নভেম্বর, ২০২৪       
  • ১৭
  •       
  • ০৬-১১-২০২৪, ২১:২৪:৩০

পথরেখা অনলাইন : জেলায় অজ্ঞাত এক রোগে ১৮৬৭ সালে বহু মানুষের মৃত্যু হলে স্যার সিসিল বিডন গড়ে তোলেন একটি দাতব্য চিকিৎসালয়। সে সময় লোকসংখ্যা ছিল ২৫ হাজার। বর্তমানে প্রায় ৭ লাখ আর দাতব্য চিকিৎসালয়টিও রূপান্তরিত হয়েছে আধুনিক জেনারেল হাসপাতালে।

হাসপাতালটিতে বর্তমানে শয্যা সংখ্যা এখন ২৫০। এখানে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার সব ধরণের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ থাকলেও সেসব সুবিধা পাননা রোগিরা । চিকিৎসকদের অবহেলা, চিকিৎসক সংকট ইত্যাদি কারণে রোগিরা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। এসব অবস্থার বিরুদ্ধে এলাকার লোকজন বিক্ষোভ মিছিলও করেছিল। তাতেও কোন লাভ হয়নি। বরং রোগিদের আরও ভোগান্তি বেড়েছে।

দুর্গন্ধের কারণে দূর থেকেই নাকে কাপড় বেধে হাসপাতালে ঢুকতে হয়। অনেক চিকিৎসকের আছে নিজস্ব ক্লিনিক, আবার প্রাইভেট হাসপাতালের সাথে জড়িত অনেকে। হাসপাতালটিতে বর্তমানে দালালচক্র আর রোগিদের মোবাইল, নগদ টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রি চুরির ঘটনা চরমভাবে বেড়ে গেছে। দালালচক্র জোর করে হাসপাতাল থেকে রোগি ভাগিয়ে নিয়ে যায় ক্লিনিকে।  বর্তমানে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসক সংকট কারণে। বাধ্য হয়ে রোগিদের কুষ্টিয়া অথবা রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় পার হলেও মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি চালু হয়নি।

কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ১৯৯৮ সালে হাসপাতালটি চালু হওয়ার পর এডিবির অর্থায়নে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। পরে ২০০২ সালে সরকারের সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপার্টমেন্ট (সিএমএসডি) আরও কিছু আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। কিন্তু এই সমস্ত যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কক্ষ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জ্বালানী বরাদ্দ ও দক্ষ জনবল নিয়োগ না দেয়াতে সরবরাহকৃত অধিকাংশ যন্ত্রপাতিই অকেজো পড়ে আছে। ফলে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।

২০০২ সালে সরবরাহকৃত দুইটি অত্যাধুনিক ইকো-কার্ডিও আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন সরবরাহকালীন সময়ে মেশিনের ৩টি এ্যবডোমিনাল প্রোব (রোগ নির্ণয় যন্ত্র) খুলে রেখে সরবরাহ করে সংশ্লিস্ট কোম্পানী। এগুলির প্রতিটির মূল্য ২০ লাখ টাকা। এ কারণে মেশিন দুইটি কোন কাজে আসছে না। এই মেশিনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে রোগীর রোগ নিয়ে বিশ্বের যে কোন বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করার পদ্ধতিও আছে।  হাসপাতালে আধুনিক পাঁচটি অপারেশন কক্ষ থাকলেও চালু আছে মাত্র দুইটি।  

এই ব্যাপারে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, অনেক পত্র চালাচালির পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কিছু যন্ত্রপাতি চালু করে দিয়েছে। অন্যান্য যন্ত্রপাতিগুলি চালু করা গেলে আধুনিক অনেক চিকিৎসা এখানেই করা সম্ভব হবে।  

প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ টেকনিশিয়ান সংকটেও চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালটিতে। এক্স-রে টেকনিশিয়ান মোমিন উদ্দীন গত অক্টোবরে অবসরে গেছেন। ফলে ধার করা টেকনিশিয়ান দিয়ে চলে এক্স-রে কার্যক্রম।

১০০ শয্যার হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সেই ১শ বেডের লোকবল দিয়েই চলছে কার্যক্রম। মৌসুমের কারণে হাসপাতালে প্রতিদিন রোগি ভর্তি থাকছে গড়ে ৪ শতাধিক। ফলে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

নিয়মিত ভাবেই ধারণ সক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে হাসপাতালে।ওয়ার্ডে স্থানসংকুলান না হওয়ায় বারান্দার মেঝে ও সিঁড়ি ঘরে ঠাঁই নিতে হয় রোগীর। এ অবস্থায় সবাইকে বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েডসহ ঋতু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। সব চেয়ে বেশি ভিড় শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও শিশু, মহিলা, পুরুষ, ডায়রিয়া ও গাইনি ওয়ার্ড মিলে প্রায় সাড়ে চারশ রোগী ভর্তি আছে।

এখানে প্রতিদিন আউটডোরে চিকিৎসা নেয় পাঁচ শতাধিক রোগী। ৭ লাখ জনসংখ্যার হাসপাতালটিতে শিশু শয্যা আছে মাত্র ২৫টি। অথচ প্রতিদিন শিশু ওয়ার্ডে গড়ে ভর্তি থাকে ৪০ থেকে ৬০ জন। ফলে বেড সংকটের কারণে হাসপাতালটির সিঁড়ির মুখে ও ওয়ার্ডের বাইরে খোলা বারান্দায় চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে রোগিরা। হাসপাতালের কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। রাউন্ড দিতে রোগিদের ডিঙ্গিয়ে যেতে হয় চিকিৎসকদের ।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার জানান, নতুন ভবনটি চালু হলে রোগীদের আসন সংখ্যা আরো বাড়বে। তাছাড়া অসচেতনতার কারণে মৌসুমি রোগ বাড়ছে। ভর্তি থাকা রোগীদের খাবার স্যালাইন ও ওষুধ প্রয়োজন মতো দেয়া হচ্ছে। তবে লোকবল সংকটের কারণে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জনা ত্রিশেক দালাল হাসপাতাল থেকে রোগিদের ভাগিয়ে নিযে যাচ্ছে আশপাশের বিভিন্ন ক্লিনিকে। কমিশন ভিত্তিকদালাল হিসেবে কাজ করছে বিভিন্ন ফার্মেসীর কর্মচারী, রিক্সাচলক, ক্লিনিক ও প্যাথলজিস্টরা ।

হাসপাতালের কয়েকজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও ওই দালালীর সাথে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোন দালালকে হাসপাতাল চত্বর থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরা আটক করে জেল হাজতে প্রেরন করলে তার জামিনের ব্যয়ভার অন্য দালালরা বহন করে বলে জানা গেছে।  

দীর্ঘদিন ধরে এসব দালালের হাতে জিম্মি রোগী ও তাদের স্বজনেরা। অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন দালালকে ভ্রাম্যমান আদালত আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। জামিনে বের হয়ে ফের সক্রিয় হয় হাসপাতালে।    

হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোকেয়া খাতুন জানান, চিকিৎসক সংকটে সেবিকারা চিকিৎসা দিচ্ছে। বড় সমস্যা প্রতিদিনই কোন না কোন বেড থেকে রোগির মোবাইল ও মূল্যবান সামগ্রি চুরির ঘটনা ঘটছে। দিনে রাতে সবসময় চুরি আতংকে থাকতে হয়।

জনবলের খতিয়ান: মেহেরপুর হাসপাতাল ২৫০ শয্যার হলেও এখনও সেই ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে কার্যক্রম। ১শ’ বেডের বিপরীতে ২৯০ জনের পদ থাকলেও বর্তমানে ৭৮টি পদ শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র কসালটেন্ট, সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, সিনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি, জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি, জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থো-সার্জারি, জুনিয়র কনসালটেন্ট প্যাথলজি ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার পদ এখনো খালি।  ফলে হাসপাতালটি চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় বলে জানান    

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জামির হাসিব সাত্তার। তিনি জানান, হাসপাতালের টিকিট কাউন্টার, ল্যাব কাউন্টারের রোগিদের লাইনে পকেটকাটা দলের অত্যাচার মারাত্মক। দালাল চক্র এখানে সক্রিয় আছে। তবে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় দালালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় জেল-জরিমানা করা হয়েছে। হাসপাতালটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। তারপরও দালালদের উৎপাত, পকেটমারদের দৌরাত্ম বন্ধ করা যায়নি।
পথরেখা/এআর

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।