পথরেখা অনলাইন : লাল, সাদা, হলুদ, পিংক, মেজেন্টা, কমলা, রানী গোলাপি কিংবা জাম রঙের জারবেরা ফুলের যেন খেলা চলছে মাঠজুড়ে। ফুলেল সুবাস ও শোভায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শীতের কোমল ছোঁয়াতে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোন চিত্রশিল্পী রং তুলিতে মনের খেয়ালে এঁকেছেন জারবেরা।
রঙিন জারবেরা চাষ করে নিজের জীবন ও সংসার জীবনেও রঙিনতার ছোঁয়া দিয়েছেন ফুল চাষী আফছার আলীর। মাত্র দুই বছরে ৮ লাখ টাকা লগ্নি করেছেন। এর মধ্যে বিক্রি করেছেন ৩০ লাখ টাকার।
সদর উপজেলার সাবগ্রাম ইউনিয়নের গোবরধনপুর গ্রামের আফসার আলী ২০২২ সালে বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয় এবং উচ্চমূল্যের ফুল জারবেরা চাষ করছেন। পড়ালেখা করে চাকরির পিছন না ছুটে উদ্যোগ নিয়েছেন ফুল চাষের। দুই বছর পরে সফলতাও পেয়েছেন।
জারবেরা অ্যাসটারেসি পরিবারভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ফুল। জার্মান পরিবেশবিদ ট্রগোট জার্বারের নামানুসারে এ ফুলটির নামকরণ করা হয়েছে।
এটি আন্তর্জাতিক ফুল বাণিজ্যে কাট ফ্লাওয়ার (ঈঁঃ ভষড়বিৎ) হিসেবে উল্লেখযোগ্য ১০টি ফুলের মধ্যে অন্যতম। কাট ফ্লাওয়ারের জন্য ও বেশী দিন ফুলদানীতে সতেজ রাখতে জারবেরার জুড়ি নেই।
বীজের মাধ্যমে জারবেরার বংশবৃদ্ধি করা যায়। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত গাছে মাতৃগাছের সকল গুনাবলী বজায় থাকে না, তবে পদ্ধতিটি সহজ। এ পদ্ধতির সুবিধা হলো বীজের মাধ্যমে রোগ-পোকা আক্রমণের আশংকা কম থাকে ।
আফসার আলী এক বিঘা জমিতে তিনি টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এ চাষ শুরু করেন। পলিনেট হাউজ নামে তার বাগানে লাল, সাদা, হলুদ, পিংক, মেজেন্টা, কমলা, রানী গোলাপি ও জাম রঙের জারবেরা ফুল শোভা পাচ্ছে। ভারতের পুনে থেকে জারবেরা ফুলের বিভিন্নজাত সংগ্রহ করে আমদানি করে চাষ শুরু করেন তিনি। চারা রোপণের তিন মাসের মধ্যেই প্রথম সফলতা পান আফসার। দুই বছরে তার ৮ লাখ টাকা খরচ হলেও ফুল বিক্রি করেছেন প্রায় ৩০ লাখ টাকার। পাশাপাশি এ চাষী গোলাপ চাষেও সফলতা পেয়েছেন। তিনি থাই গোলাপের বাগান করেছেন।
ফুল চাষ করে চাষী আফছার আলী সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন। দুই দিন পর পর ফুল তুলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগসহ ঢাকাতে এ ফুল বিক্রি করছেন তিনি। বাণিজ্যিকভিত্তিতে জারবেরা চাষে এখন লাভের মুখ দেখছেন।
ফুল চাষী আফছার আলীর বাগান ঘুরে দেখা যায়,পলিনেট হাউজ নামের এ বাগানে বাহারি রঙের জারবেরা ফুল ফুটে আছে। রঙ অনুযায়ী চারাগুলো আলাদা আলাদা সারিতে রোপণ করা হয়েছে। জারবেরা চাষে খরচ বেশি হলেও এর লাভও বেশি। খরচ বেশি হওয়ার প্রধান কারণ জারবেরা বাগানের উপরে পলিশেড দিতে হয়। একটি শেডেই খরচ পড়ে প্রায় ৬ লাখ টাকার মতো। তবে একবার শেড দিলে সেটি ৫ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত ব্যবহারের উপযোগী থাকে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাষী আফছার আলীকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সরকারিভাবে শেড তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এতে করে চাষ খরচ অনেকট কমে গেছে।
ফুলচাষীরা জানান,জারবেরার চারা লাগানোর ৯০ দিনের মধ্যেই ফুল দেয়। প্রতিদিন বাগান থেকে দুইশ থেকে আড়াইশ ফুল উঠানো যায়। ফুলের দাম সব সময় পাইকারী বাজারে ১২ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। তবে জারবেরা গাছের পরিচর্যা বেশি করতে হয়। গাছে পচন রোগ বেশি মাত্রায় হয়। জারবেরা ফুল গাছ থেকে তোলার পর ১০ থেকে ১৫ দিন এবং গাছে ফোটা অবস্থায় ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। ফলে এর চাহিদা অনেক।
উদ্যোক্তা আফছার আলী জানান,সারা বছর ধরেই জারবেরা ফুল ফোটে। তবে এপ্রিল-মে হলো ভরা মৌসুম। সব ধরনের জলবায়ুতেই এরা বেঁচে থাকতে পারে। উজ্জ্বল রোদের সঙ্গেই সখ্যতা বেশি। বাংলাদেশে শীত ও শীতের শেষ ভাগে জারবেরা ভালো হয়ে। পলিশেড করে চাষ করলে সারা বছরই ভালো ফলন হয়। একটি জারবেরা ফুল গাছের জীবনকাল প্রায় চার বছর। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে একটি গাছ থেকে বছরে ৮০ থেকে ৯০টি ফুল পাওয়া যায়।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, উচ্চমূল্যের এ ফুল চাষে চাষীদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। বগুড়া জেলা ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী আবহাওয়া এবং মাটি বিদ্যমান রয়েছে। জারবেরা ফুল চাষ করে চাষীদের ভাগ্য বদলেছে। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ফুলচাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। বগুড়ার সদর,শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর এবং শেরপুর উপজেলায় বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করছেন কৃষকরা।
পথরেখা/এআর