দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের কাছে দুর্ভোগের দিনও যেন এগিয়ে আসছে। তাই যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে এবারের ঈদযাত্রায় থাকছে ৮৭টি লঞ্চ ও শতাধিক স্পিডবোট। এছাড়া ঈদের সময় মোট ১০টি ফেরি এই নৌরুটে যানবাহন পারাপার করবে বলে জানা গেছে। তবে দিন-রাত ২৮ ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস থাকবে কি না সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাট সূত্র জানিয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে নৌযানগুলো সর্বশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাধারণ মেরামত সম্পন্ন হয়েছে বলে ঘাট সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, ঈদের আগেই সবগুলো লঞ্চের রুট পারমিট, সার্ভে সনদসহ টুকটাক মেরামত সম্পন্ন করেছে মালিকপক্ষ। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে, নৌরুটে পারাপার হওয়া যাত্রীরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ লঞ্চেই পর্যাপ্ত পরিমাণে জীবনরক্ষাকারী বয়া নেই। তাছাড়া লাইফ জ্যাকেটও দেখা যায় না। প্রতিটি লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী পারাপার করা হয়ে থাকে। বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীদের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম নৌরুট মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া। এই বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুট হয়ে ঈদ মৌসুমে দৈনিক লক্ষাধিক মানুষ পারাপার হন। ঈদের আগে ঘরে ফেরা এবং ঈদ শেষে কর্মস্থলে যোগ দেওয়া মানুষের ঢল নামে এই দুই ঘাটে। অধিক যাত্রীদের চাপে এসময় শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়। স্পিডবোটসহ নৌযানে শুরু হয় বাড়তি ভাড়ার উৎসব! এছাড়া ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ অধিক যাত্রী পারাপার করা হয়। সব মিলিয়ে এক দুর্ভোগের ঈদযাত্রায় পরিণত হয় এই নৌরুট।
এদিকে, গত এক বছর ধরে এই রুটে ফেরি চলছে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে। কখনো দীর্ঘদিন ফেরি বন্ধ আবার, কখনো কিছু সময় চলাচলসহ সীমিত সংখ্যক ফেরি শুধু দিনের বেলায় চলছে। আর বন্ধ রাখা হয়েছে ভারী যানবাহন চলাচল। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাত্র ৫/৬ টি ফেরি দিয়ে নৌরুট সচল রাখাকে এক ধরণের প্রহসনও বলছেন এই রুট ব্যবহারকারীরা। ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও পদ্মা পার হতে না পারার যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা রয়েছে যানবাহনের চালকদের। আসন্ন ঈদেও ফেরিতে বড় ধরনের দুর্ভোগের শঙ্কা করছেন চালকরা। লঞ্চে ঢাকা থেকে আসা যাত্রী মো. মইনুল হক বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ছে। সামান্য বাতাস হলেই ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। ঈদের ছুটিতে নৌরুটে যাত্রীদের ঢল নামে। এসময় লঞ্চ ও স্পিডবোট কঠোর প্রশাসনিক নজরদারিতে রেখে চালানোর দাবি জানাচ্ছি। তাছাড়া নৌযানে পর্যাপ্ত সংখ্যা জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকা প্রয়োজন। সে তুলনায় কিছুই দেখা যায় না। আরেক যাত্রী মো. মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়টা হচ্ছে কালবৈশাখী ঝড়ের। হঠাৎ করেই আবহাওয়া খারাপ হয়ে উঠতে পারে। ঈদযাত্রায় অধিক সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী যেন নৌযানে বহন করতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার লঞ্চ ঘাট সূত্রে জানা গেছে, এই নৌরুটে বর্তমানে ৮৭টি লঞ্চ রয়েছে। পাশাপাশি শতাধিক স্পিডবোট চলছে। লঞ্চগুলোর মধ্যে বড় লঞ্চের সংখ্যাই বেশি। যা দুইশতাধিক যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। এছাড়া ১৩৫ ও দেড়শো যাত্রী বহনে সক্ষম লঞ্চ রয়েছে ১০ থেকে ১২টি। যেসব লঞ্চে ছোটখাটো ত্রুটি ছিল তা এরইমধ্য মেরামত সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া ঈদের ভিড় হওয়ার আগেই লঞ্চগুলো আরও একবার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে। লঞ্চে বর্তমানে ৪৫ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ঈদে ভাড়া বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে নৌরুটের উভয় ঘাট মিলিয়ে শতাধিক স্পিডবোট রয়েছে; যা নিবন্ধিত। ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী নৌযানগুলো যাত্রী পারাপার করছে।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে পাঁচটি ফেরি চলছে। অন্যদিকে শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি-শিমুলিয়া রুটে চলছে দুটি ফেরি। মোট সাতটি ফেরি চলছে দুই রুটে। তবে ঈদের আগে আরও তিনটি ফেরি যুক্ত হবে নৌরুটে। মোট ১০টি ফেরি চলবে। তবে বাংলাবাজার রুটে ২৪ ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস থাকবে কি না সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঈদের সময় মোট ১০টি ফেরি চলবে। ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন বলেন, ঈদের চাপ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। ৮৭টি লঞ্চ চলবে নৌরুটে। যেহেতু ঝড়ের মৌসুম, সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেই লঞ্চ চলাচল করবে। ধারণক্ষমতার বাইরে কোনো যাত্রী বহন করা হবে না। আবহাওয়া বৈরী হয়ে উঠলেই আমরা নৌযান চলাচল বন্ধ রাখি। আশা করি ঈদে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবেন।
দেশকন্ঠ/অআ