দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নৌপথে বিশেষ সার্ভিস দেবে সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানির লঞ্চগুলো। এতে করে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি রুটে স্বাভাবিক সময়ের থেকে দ্বিগুন, তিনগুণ, অনেক ক্ষেত্রে চারগুণ পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করবে ২৮ এপ্রিল থেকে। তবে এবারও বরিশাল নদীবন্দরে অধিক সংখ্যক লঞ্চের বার্দিং (নোঙ্গর) করা নিয়ে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। যার ফলে বরিশাল নদীবন্দরেই ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষগুলোর। বরিশাল নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পন্টুনের যে ধারণ ক্ষমতা রয়েছে তা দিয়ে কোনভাবে অভ্যন্তরীণ ও সরাসরি দূরপাল্লার (ঢাকা- বরিশাল) রুটের লঞ্চগুলোকে বার্দিং করতে দেওয়া হচ্ছে। ভায়া রুটের লঞ্চগুলো কোনো দিন লঞ্চের সঙ্গে, আবার কোনো দিন সম্ভব হলে পন্টুনে বার্দিং করে। এর বাইরে জায়গা সংকটের কারণে সরকারি জাহাজের ঘাটে গ্রীন লাইনসহ সাইড বার্দিং প্রয়োজন, এমন লঞ্চগুলোকেও বার্দিং করতে দেওয়া হচ্ছে।
বরিশাল নদীবন্দরের পল্টুনের দায়িত্বরতরা বলছেন, দিনে দিনে লঞ্চের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বেড়েছে। তাই বন্দরে থাকা ১২০ ফুটের একটি পন্টুনে বর্তমান সময়ের মাত্র তিনটি লঞ্চকে বার্দিং করাতে জায়গার সংকট দেখা দেয়। বরিশাল নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এখানে মোট পন্টুন রয়েছে ৬টি। এর মধ্যে দূরপাল্লার অর্থাৎ ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ বার্দিংয়ের জন্য ৩টি এবং বাকি তিনটি অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চের জন্য। যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট হিসেবে মোট পন্টুনের দৈর্ঘ্য অর্থাৎ বার্দিং স্পেস ৭২০ ফুট। সেই হিসেবে ৩৬০ ফুট জায়গা দুরপাল্লার রুটের লঞ্চের জন্য। আর এই হিসেবে তিনটি পন্টুনে একসঙ্গে ৭টি লঞ্চ বার্দিং করা যায়। সর্বোচ্চ হলে ভায়া ছাড়া দৈনিক ট্রিপের ৮টি পর্যন্ত লঞ্চ একসঙ্গে বার্দিং করে বরিশাল নদীবন্দরে। তার ওপর এবার ঈদে ভায়াসহ প্রায় ২৮টি লঞ্চ চলাচল করবে এই নদীবন্দর দিয়ে। যাত্রীরা বলছেন, ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে লঞ্চগুলো যদি বরিশাল নদীবন্দরে একসঙ্গে এসে না পৌঁছায়, তাহলে বাড়ি ফেরা মানুষের তেমন সমস্যা হবে না। তবে বরিশাল থেকে ঢাকায় যাওয়ার সময় সমস্যাটা প্রকট হবে। যদিও বিগত বছরগুলোতে বিকেলের দিকে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে কষ্ট কিছুটা লাঘবের চেষ্টা করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারপরও কিছু লঞ্চ পন্টুনে বার্দিং করতে না পেরে অন্য লঞ্চের পেছনে বা পাশে নোঙ্গর করেছে। আর সেই লঞ্চে যাত্রীদের ওঠাই হয়ে যায় দুর্ভোগের ও ঝুঁকিপূর্ণ। আর এ কারণে প্রায় প্রতিবারই নদীতে পরে যাওয়াসহ দুর্ঘটনা কিছু ঘটেছেই।
এবারের ঈদ যাত্রায়ও একই ভোগান্তি আর দুর্ঘটনার শঙ্কা করছেন যাত্রীরা। এমনকি এবার যাত্রীর চাপ আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কাও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে পন্টুন সংকট। এ অবস্থায় শঙ্কা আর দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণে সতর্কতা অবলম্বন ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় দেখছেন না বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঢাকা-বরিশাল রুটের সুন্দরবন লঞ্চের মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, নৌবন্দরের তিনটি পন্টুনে নিয়মিত ৭টি লঞ্চই একসঙ্গে ভিড়তে কষ্ট হয়ে যায়। তারমধ্যে ঈদের সময় চলাচল করা ১৭ থেকে ১৮টি লঞ্চ একযোগে কীভাবে ঘাটে ভিড়বে সে নিয়ে প্রতি বছরই আমাদের দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। এছাড়া পন্টুনের একপাশে গত ছয়মাস ধরে একটি অকেজো ড্রেজার পড়ে আছে। সেটা এখনো সরানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় পন্টুন সংকটের কারণে একটি লঞ্চের পেছনে আরেকটি লঞ্চ বার্দিং করতে হয়। যাত্রীদের ওঠা-নামা করতে এক লঞ্চ থেকে আরেক লঞ্চে যেতে হয়। এতে দুর্ঘটনাও ঘটছে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কেউ কেউ লঞ্চ থেকে পড়েও যান। আবার অনেক সময় একটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঘাট ত্যাগের পরে অপর লঞ্চ ঘাটে বার্দিং করে যাত্রী তুলছে। যেটা আরেক ভোগান্তি। লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বরিশাল নদীবন্দরের পন্টুন নিয়ে ভোগান্তি নতুন নয়। আমরা বরাবরই বরিশাল নদীবন্দরে পন্টুন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। তারা বছরের পর বছর ধরে শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছেন, তা বাস্তবায়ন করেন না।
এদিকে সম্প্রতি ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের নিরাপত্তায় ১২ দফা দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মরকলিপি দিয়েছে বরিশাল নৌ-যাত্রী ঐক্য পরিষদ। ওই ১২ দফার মধ্যেও বরিশাল নদী বন্দরে পন্টুন সম্প্রসারণের দাবিটি ছিল অন্যতম। সার্বিক বিষয়ে বরিশাল নদীবন্দরের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বরিশাল নদীবন্দর আধুনিকায়ন এবং পন্টুন সংখ্যা বাড়ানোর প্রকল্পটি অনেক বড় একটি প্রকল্প। এটিতে অর্থ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। এ প্রকল্পের টেন্ডার এরই মধ্যে হয়েছে। তবে বরাদ্দ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকে একটু জটিলতা রয়েছে। এ কারণে কাজ শুরু হচ্ছে না। অর্থ বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।
দেশকন্ঠ/অআ