কবির হোসেন : করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিধিনিষেধের মধ্যে গত দুই বছর দেশে ঈদ উদযাপিত হওয়ায় অনেকেই কর্মস্থলে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে দীর্ঘদিন প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হয়নি। এবার দেশে সংক্রান্ত বিধিনিষেধ থাকায় না স্বাভাবিক রূপে ঈদ উদযাপিত হবে। তাই স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এবার বেশিরভাগ মানুষ রাজধানী ছাড়ছে। ঈদের আগে ২৮ এপ্রিল জরুরি সেবা বাদে সরকারি-বেসরকারি সব অফিসের ছিল শেষ কর্ম দিবস। তাই অফিস শেষে মানুষ যেভাবে পারছেন রাজধানী ছাড়ছেন। সকাল থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটে ঘরমুখো মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
মো. আরিফুর রহমান কাজ করেন একটি বেসরকারি অডিট ফার্মে। যাবেন নোয়াখালী। সকালেই সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে চলে এসেছেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, অফিস শেষ করে গেলে সবে কদরের নামাজটা ঠিকঠাক পড়তে পারব না। আমার ইচ্ছে বাড়ি গিয়ে পড়ার। আর তাই সকাল সকাল বের হয়েছি। গত দুইটা ঈদে করোনা বিধিনিষেধের কারণে সেভাবে উদযাপন করতে পারিনি। অনেক কিছুতে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। এবার যেহেতু করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক, আশা করি সবার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারবো।
মহাখালী বাস টার্মিনালের একটি কাউন্টারে সামনে পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন মুকসিমুল হাসান। যাবেন শেরপুরের নকলায়। বাস কখন ছাড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউন্টার থেকে জানালো কিছুক্ষণ পরেই বাস ছাড়বে। ভিড় এড়াতে পরিবারের সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। নানা কারণে পাঠানো সম্ভব হয়নি। তাই একসঙ্গে যাচ্ছি। ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদ আসলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ভাড়া একটু বেশি নেয়, তবে এবার নির্ধারিত ভাড়া নিয়েছে।
এদিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে দুপুরের পর থেকে ভিড় বাড়ছে যাত্রীদের। স্ত্রী-সন্তান পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই ট্রেনের অপেক্ষায় আছেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, টিকিট কাটার জন্য টানা একদিন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখন ভালোভাবে বাড়ি পৌঁছাতে পারলেই খুশি। গত কয়েকটা ঈদ ভালোভাবে কাটেনি। আশা করি, এবার ভালো সময় কাটবে।
রয়েল পরিবহনের কমলাপুর কাউন্টারের ম্যানেজার শরীফ উদ্দিন বলেন, সকাল থেকে যাত্রীদের তেমন চাপ ছিল না। তবে বিকেল থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়বে। কারণ আজ অনেকের অফিস ছুটি হয়ে যাবে। এদিকে অফিস ছুটির মানুষ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ায় রাজধানীর কিছু কিছু পয়েন্টে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ প্রসঙ্গে সহকারী পুলিশ কমিশনার (রমনা ট্রাফিক জোন) মো. রেফাতুল ইসলাম দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ইতিমধ্যে অনেকে ঢাকা ছেড়েছেন। বিকেলে অফিস ছুটির পর কিছু পয়েন্টে জ্যাম বাড়ছে। সন্ধ্যার জ্যামটা বাড়তে পারে। কারণ প্রায় সবগুলো বড় পয়েন্ট দিয়ে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সংস্থা। এছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মহাখালী, গাবতলীসহ রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বিআরটিএ।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমে যাওয়ায় এবারের ঈদে গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি মহাসড়কে যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীদের ভোগান্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংগঠনটি।সেই সঙ্গে ঈদযাত্রায় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
দেশকণ্ঠ/আসো # সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক