আরিফ সোহেল : ১৩ মে, ২০২২। ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক ৪টা ৫০ মিনিট। জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়ত আসন পূর্ণ; পাশে উপচে দর্শক। কেন্দ্রবিন্দুতে বিক্রমপুরের দুই কৃতী সন্তান। তাদের অর্জনকে সম্মাননা জানাতেই সংবর্ধনার আয়োজন। প্রধান অতিথিসহ সবাই তখন দর্শক সারিতে। মঞ্চে মাইক্রোফোনে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের নাছির উদ্দিন জুয়েল সভাপতির অনুমতি নিয়ে জানালেন— ‘অনুষ্ঠান শুরু করছি। এখন সূচনা সঙ্গীত নিয়ে আসছেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সুমা রায়।’ তার মুগ্ধ করা সূচনা সঙ্গীতের পিঠে আরেটির পর মঞ্চে আসেন স্বনামধন্য রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ড. মকবুল হোসেন। তিনি শুনালেন একে একে ৩টি। এর মধ্যে একটি সভাপতির বিশেষ অনুরোধে। এ-দুইয়ের হৃদয় ছোঁয়া গানে বিমোহিত হলেন অভ্যাগতরা। দুই গুণী শিল্পীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন শায়লা তিথী এবং আরিফ সোহেল। শেষ হলো প্রথমপর্ব।
যাদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন; তাদের একজন অনুজীব বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, যিনি ২০২২ সালে বিজ্ঞানে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ স্বীকৃতি একুশে পদক। অন্যজন খ্যাতিমান কথাশিল্পী, কবি, সম্পাদক, গীতিকার ও সঙ্গীতশিল্পী অধ্যাপক ঝর্না রহমান। ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বিক্রমপুরের এ-দুই কৃতী সন্তান আবার অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনেরও নির্বাহী পর্ষদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়পর্বে অতিথিদের মঞ্চে আসন গ্রহণের পালা। শুরুতেই ছিল শ্রদ্ধা নিবেদন। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের ‘বঙ্গীয় গ্রন্থ জাদুঘরের জাতীয় কমিটির সভাপতি এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী সদ্য প্রয়াত এএমএ মুহিতের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা। তারপরও দীর্ঘ সমৃদ্ধ ভাষণ-বক্তৃতা-অনুভূতি প্রকাশ যখন শেষ হয়েছে; ততক্ষণে সময় রাত প্রায় ৮টা। কিন্তু তখনো কানায় কানায় পূর্ণ অডিটোরিয়াম।
প্রধান অতিথির ভাষণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেছেন, ‘আমি বিক্রমপুরের একজন মুগ্ধ ভক্ত। এই অঞ্চলের কৃষ্টি-সভ্যতা আমাকে খুব আপ্লুত করে। আমি দুই-একবার বিক্রমপুরে গিয়েছি। তারা অতিথি বেশ পরায়ন। বিক্রমপুর একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল। সারাদেশ যদি বিক্রমপুরের মতো হতো; তা বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যেত।’ তিনি দুই সংবর্ধিত ব্যক্তিত্বের জন্য শুভ কামনা করে বলেন, ‘তারা শুধু বিক্রমপুর নয়, বাংলাদেশের গর্ব।’ প্রধান অতিথি তার ভাষণ শেষে সম্মাননা প্রাপ্ত দুই জনের হাতে উপহার হিসেবে দুটি তৈলচিত্র তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন সভাপতি ড. নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ‘আমরা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ববাসীর সামনে বিক্রমপুরকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি। মাটি খুঁজে প্রত্নতত্ত্ব পেয়েছি। যা বাংলাদেশের জন্য এক নতুন ইতিহাস। সংবর্ধিত দুই কীর্তিমানের অর্জন; অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। কারণ তারা আমাদের সংগঠনেরই সদস্য। তাদেরকে সংবর্ধিত করে আমরাও গর্বিত।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এম এ মান্নান এমপিকে পুষ্পার্ঘ দিয়ে বরণ করেছেন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি ডা. আবদুল মালেক ভুঞা। অন্যান্য অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মো. কবির ভুঞা কেনেডি, শামিমা নাসরিন, মুজিব রহমান, আবু হানিফ, আবুল কালাম আজাদ, ইসলাম শেখ এবং আবদুর রউফ। অনুষ্ঠানে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. নূহ-উল-আলম লেনিন অতিথিদের উত্তরীয় পড়িয়ে দিয়ে আয়োজনের রাজসিক জৌলস বাড়িয়েছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব। সংবর্ধিতদের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া [ডা. মো. আনোয়ার হোসেন] এবং কামরুন্নেসা হোসেন [অধ্যাপক ঝর্না রহমান]। মানপত্র দুটি সংবর্ধিত দুই গুণীজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। শুভেচ্ছা ভাষণ দিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। দ্বিতীয়পর্বের অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও রামপাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হাসান। সম্মাননাপ্রাপ্ত অধ্যাপক ঝর্না রহমান ও ড. মো. আনোয়ার হোসেন তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। আর দর্শক সারিতে থাকা প্রাজ্ঞজন, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং সাধারণ সংস্কৃতিবান দর্শকরা সমৃদ্ধ ভাষণকে স্বাগত জানিয়েছেন করতালিতে। অনেকের মনের বাতিঘরে তখন হয়তো জ্বলে উঠেছে এই সংগঠনের স্লোগানটি— ‘আমরা আলোর পথযাত্রী। যা ছুঁয়ে গেছে সংবর্ধিত আলোকিত দুই কৃতী সন্তানকেও।
দেশকণ্ঠ/আসো