দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে সিলেট মহানগর ও জেলার প্রায় ৪৪২ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথের (সওজ) আওতাধীন আটটি সড়কের ৭২ কিলোমিটার, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১৪০ কিলোমিটার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ২৩০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সড়কগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। তবে পানির মধ্যে যানবাহন চলাচল করায় আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে সড়কগুলোর। যার কারণে বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ২৩ মে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক), সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো স্থায়ীভাবে সংস্কার করতে সাড়ে ৩০০ থেকে পৌনে ৪০০ কোটি টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে তাৎক্ষণিক সড়কগুলো যান চলাচলের উপযোগী করতেই লাগবে ২০-২৫ কোটি টাকা।
এদিকে সিলেটে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত, পুনর্নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত বাসাবাড়ির তালিকা প্রণয়ন এবং নগরকে বন্যামুক্ত রাখতে করণীয় নির্ধারণে একটি উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক), সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। এ কমিটির যৌথ প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। রোববার সিটি করপোরেশনের আয়োজনে নগর ভবনের সম্মেলনকক্ষে সব দপ্তর-সংস্থা ও অংশীজনকে নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় নগরীর উপদ্রুত এলাকার নাগরিকদের ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সভায় বর্ষাকালে যাতে বন্যার পানি নগরীতে প্রবেশ করতে না পারে, এজন্য স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নগরের মধ্যে যেসব এলাকার নদীপাড় নিচু, সেসব পাড় উঁচু করা হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডের প্রায় ১২৫ কিলোমিটার সড়কে বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া নতুন করে সম্প্রসারিত সিটি করপোরেশনের নতুন ওয়ার্ডগুলোর প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৪০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব সড়ক সংস্কারে ঠিক কত টাকা লাগবে তা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। আমাদের প্রকৌশলীরা সড়কগুলো পরিদর্শন করে ক্ষতির পরিমাণ ও সংস্কারে কত টাকা ব্যয় হবে তা নির্ধারণ করছেন। তবে এসব সড়ক সংস্কারে আনুমানিক শতকোটি টাকা লাগবে। সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জেলায় সওজের ১০টি সড়কের প্রায় ৭২ কিলোমিটার এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাড়ি চলাচলের জন্য তাৎক্ষণিক এসব সড়ক সংস্কারের জন্য কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা ও স্থায়ীভাবে সংস্কারের জন্য ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা লাগবে। টাকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে সড়কগুলো সংস্কারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবির বলেন, এলজিইডির আওতাধীন বন্যাকবলিত ১০টি উপজেলায় ৬৬টি সড়কের ২৩০ কিলোমিটার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জেলা ও উপজেলার এসব সড়কে পানি থাকায় পুরোপুরি ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাচ্ছেনা। তবে এগুলো সংস্কারে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা লাগতে পারে। এদিকে সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। নগরের বাসাবাড়ি ও সড়কগুলো থেকে পানি নেমে গেলেও ময়লা-আবর্জনার পচা দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস উঠেছে। এক সপ্তাহ ধরে পানিতে নিমজ্জিত বাসাবাড়ির অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে অনেক এলাকা এখনো প্লাবিত রয়েছে। সুরমা নদীর পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে ২৩ মে দুপুর থেকে সুরমা নদীর পানি সিলেট সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সিলেটের অন্যতম নদী ও কুশিয়ারা, গোয়াই, সারির পানি আরও কমেছে।
দেশকন্ঠ/অআ