মাহফুজুর রহমান সোহাগ : এক একর (১০০ শতাংশ) জমিতে বোরো আবাদে নিজের জমিতে কমপক্ষে ৫ হাজার বা তারও বেশি ও বর্গা বা মেদি জমিতে ক্ষেত্র বিশেষ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষকরা। এতে তারা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ধানের উৎপাদন হ্রাস, শ্রমিক সংকট, শ্রমিকের মজুরি বেশি এবং ধানের দাম কম থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা হতাশা ও বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষকরা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় চলতি মৌসুমে ২২ হাজার ৭৫৬ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ৫০ হাজার টন। ইতিমধ্যে উপজেলাজুড়ে পুরো দমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। চলতি বছর ফলন কম ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এক একর জমিতে আগে যেখানে ৮০ থেকে ১২০ মণ ধান হতো এবার তা ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ মণ ধান হচ্ছে। বর্তমানে এক মণ ধানের দাম ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা। সে হিসেবে এক একর জমির ৬০ মণ ধান ৭৫০ টাকা বিক্রি করলে ৪৫ হাজার টাকা। খরচের হিসেব করলে দেখা যায়, নিজের জমি হলে এক একর জমি প্রস্তুত করতে ৪ হাজার, বীজ ও বীজতলা ৪ হাজার, ধানের চারা রোপন ৬ হাজার টাকা, সার ও কীটনাশক ৬ হাজার, সেচ দেওয়া ৫ হাজার, জমি নিরানী ২ হাজার, ধান কাটতে ১২ থেকে ১৫ হাজার, মাড়াই করতে ২ হাজার, এরপর ধান বাজারে বিক্রি ২ হাজার টাকা। এ হিসেবে এখানে কমপক্ষে কৃষকের ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা লোকসান। আর যদি জমি বর্গা বা মেদি নেওয়া হয় তাহলে আরো ১৫ হাজার টাকা যোগ হয়।
শিমুল তলা গ্রামের মো. জুয়েল মিয়া(৪৮) বলেন, আমি ১৮ (৯০ শতাংশ) কাঠা জমি ১৬ হাজার টাকায় মেদি নিয়ে বোরো আবাদ করে ২০ হাজার টাকা লোকসানে আছি। তাছাড়া চক যোগানিয়া ইউনিয়নের আমিরুল ইসলাম (৪৩) বলেন, এবার ধানে শিল পড়া ও ধানে চিটা ধরা, উৎপাদন কম, কামলার দাম বেশি থাকায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। সারা বছরের পরিশ্রমের একমাত্র সম্বল এ ধান। ধান আবাদে এখন যে খরচ তাতে কিন্তু ধানের দাম যদি ঠিক না থাকে তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচবো। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ আমরা যেন ধানের ন্যায্য দাম পাই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবীর বলেন, কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ না করে পুরনো জাতের ধান আবাদ করায় ধানে পোকার আক্রমনে ফলন কমেছে। যে সমস্ত কৃষক জমি বর্গা বা মেদি নিয়ে আবাদ করেছেন তারা কিছুটা লোকসানের মধ্যে থাকবে।
উৎস : দৈনিক আনন্দবাজার
দেশকন্ঠ/রাসু