দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : করোনার কারণে দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২৯ মে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। কলকাতা থেকে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে এসেছে বন্ধন এক্সপ্রেস। এর মাধ্যমে আবার শুরু হল প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল। এছাড়া, রোববার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে মৈত্রী এক্সপ্রেস। ১ জুন থেকে ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে প্রথমবারের মতো যাত্রী পরিবহন করবে মিতালী এক্সপ্রেস। আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল শুরু উপলক্ষে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন দিল্লি সফরে রয়েছেন। ২৯ মে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০ সালের ১৫ মার্চ থেকে বন্ধ হয় ঢাকা-কলকাতা, খুলনা-কলকাতা রুটে চলাচল করা ট্রেন মৈত্রী ও বন্ধন। আর ২০২১ সালে উদ্বোধন হয়ে থাকা ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে চলাচল করা ট্রেন মিতালী প্রথমবারের মতো ১ জুন থেকে যাত্রী পরিবহন শুরু করবে। এ সব ট্রেন চলাচলের জন্য সোমবার (২৩ মে) সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর আগে, ভারতীয় রেলওয়ের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানোর পরে গত ২২ মে ট্রেন চলাচল শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মৈত্রী এক্সপ্রেস, বন্ধন এক্সপ্রেস এবং মিতালী এক্সপ্রেস চলাচল শুরু করার জন্য রেলওয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, ২৯ মে থেকে আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ও বন্ধন এক্সপ্রেস পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি ও রুট অনুযায়ী চলাচল শুরু করবে। তবে ভাড়া আর আগের মতো থাকছে না। ডলারের দাম বাড়ায় এ সকল ট্রেনের যাত্রীদের গুণতে হবে বাড়তি ভাড়া। মৈত্রী এক্সপ্রেসে ঢাকা-কলকাতা এসি কেবিনের ভাড়া প্রতি সিট ভ্রমণ কর ৫০০ টাকাসহ তিন হাজার ৫০৫ টাকা আগে থেকে নির্ধারণ করা থাকলেও এবার ১০০ টাকা বাড়িয়ে তা করা হয়েছে তিন হাজার ৬০৫ টাকা, আর এসি চেয়ার ভ্রমণ করসহ দুই হাজার ৫০৫ টাকার পরিবর্তে দিতে হবে দুই হাজার ৫৭০ টাকা। এছাড়া, ১-৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড় প্রযোজ্য হবে। তবে তা নির্ধারিত হবে পাসপোর্ট অনুযায়ী। ঢাকা-কলকাতা পথে সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মৈত্রী ঢাকা থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন ছেড়ে যাবে। বন্ধন এক্সপ্রেসে খুলনা-কলকাতার ভাড়া এসি সিট দুই হাজার ৫৫২ টাকা, এসি চেয়ার এক হাজার ৫৩৫ টাকা। তবে পাঁচ বছরের নিচে সকল শিশুদের ভাড়া ৫০ শতাংশ কমে নির্ধারণ হবে। এটি প্রথম দিকে বাংলাদেশের খুলনা থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার ছেড়ে যেত এবং দুপুরে কলকাতা যাত্রা শুরু করে। এরপর পেট্রাপোল, যশোরের বেনাপোল হয়ে যশোর হয়ে খুলনা পৌঁছায়। এছাড়া, এই ট্রেনে এক্সিকিউটিভ চেয়ার ও এসি চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রী অনধিক সর্বোচ্চ দুইটি লাগেজে ৩৫ কেজি আর অপ্রাপ্ত বয়স্ক ৫ বছর বয়সী যাত্রী সর্বোচ্চ ২০ কেজি মালামাল বিনা মাশুলে নিজে বহন করতে পারবে। প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রীর ক্ষেত্রে ৩৫ কেজির ওপরে ৫০ কেজি হলে ২ মার্কিন ডলার মাশুল দিতে হবে। আর এর থেকে বেশি হলে অতিরিক্ত ওজনের জন্য ১০ ডলার অতিরিক্ত মাশুল দিতে হবে। আর অপ্রাপ্ত বয়সীদের ক্ষেত্রে ২০ কেজির বেশি ৩৫ কেজি হলে ২ মার্কিন ডলার মাশুল দিতে হবে আর তার বেশি হলে দিতে হবে অতিরিক্ত ১০ ডলার। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে যাত্রা শুরু করে মৈত্রী এক্সপ্রেস। ওই যাত্রার উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর দুই দেশের মধ্যে এ ট্রেন যাত্রার সূচনা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর খুলনা-কলকাতা পথে বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচলের সূচনা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কোলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। প্রাথমিকভাবে একদিন করে চালু হলেও পরে বাড়ানো হয় উভয় ট্রেনের ট্রিপ। বাংলাদেশ- ভারতের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে দুই দেশের মধ্যে চালু করা তৃতীয় ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস। ঢাকা-জলপাইগুড়ি পথে চলাচলের উদ্দেশ্যে ২০২১ সালের ২৭ মার্চ এই ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। এটি ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে গিয়ে ভারতের শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়িতে গিয়ে থামবে। মিতালী উদ্বোধনের পর এবারই যাত্রী পরিবহন করতে যাচ্ছে।
দেশকন্ঠ/অআ