• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৭ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০১:১৯
ভয়াবহতা ইতিহাস ছাড়িয়ে গেছে

বানের পানিতে ভাসছে সিলেট

  • জাতীয়       
  • ১৮ জুন, ২০২২       
  • ৮৬
  •       
  • ১৮-০৬-২০২২, ১২:০৪:৫৩

সিলেট প্রতিনিধি : বন্যার এমন ভয়াবহ রূপ আগে দেখেনি সিলেট। বন্যার পানির এমন আকস্মিক বৃদ্ধিতে হতভম্ব লাখ লাখ মানুষ। লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েও জায়গা পাচ্ছেন না। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে খাবি খাচ্ছে সিলেটের বানভাসি মানুষ। গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে মানবিক সংগঠকগুলো সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। ২৪ ঘণ্টার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে ভেসে গেছে লাখো লাখে বাসা-বাড়ি।
 
শুধু সিলেট নগর নয়, সিলেটজুড়েই দ্রুত পানি বাড়ছে। জেলার বেশিরভাগ এলাকায়ই পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে শুক্রবার দুপুর থেকে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। কোনো কোনো জায়গায় বিজিবি সদস্যরাও বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।
 
১৫ জুন থেকে সিলেটের নিচু এলাকায় পানি জমে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার দিনগত রাতের মধ্যেই সিলেট নগরের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যায় বন্যার পানিতে। গত ১৫ মে এ বর্ষায় প্রথম দফায় বন্যা হয় সিলেটে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে, মে মাসের বন্যায় গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি হয় সিলেটে। তবে চলমান বন্যা গত মাসের রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে। 
 
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। টেলিফোন নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে ও দুর্ঘটনা এড়াতে সিলেট নগরের কিছু উঁচু অংশ ছাড়া পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। বলা যায় সিলেট বিভাগ কার্যত সারাদেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ১৭ জুন দুপুরে নগরের ঘাসিটুলা এলাকা সকালেও  শুকনো ছিলো। শুক্রবার এই সড়কে এখন কোমরপানি। বাসা-বাড়িতে খাটের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এত দ্রুত সময়ের মধ্যে এমন ভয়াবহ বন্যা আমি কোনোদিন দেখিনি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে তো সিলেট নগরসহ জেলার কোনো জায়গা তলাতে বাকি থাকবে না।
গত মে মাসের মাঝামাঝিতে আসা বন্যার পানি নবাবরোডে ওঠেনি। কিন্তু এবার সেই সড়কে এখন হাঁটুর উপরে পানি। এলাকার দোকানপাট, প্রাইভেট ক্লিনিক, এলজিইআরডি অফিস, বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রাতিষ্ঠানসহ সবগুলো স্থাপনা এখন পানির নিচে। লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে গিয়েও জায়গা পাচ্ছে না। বন্যায় আগে একসঙ্গে এত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। মে মাসের বন্যায় উপশহরের মোড়ে পানি ওঠেনি। এবার উপশহরের মোড়ও তলিয়ে গেছে।
 
এবারের বন্যায় সিলেট নগরের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট জেলার ভারতের সীমান্তঘেঁষা উপজেলা গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট এবং সিলেট সদর। এই ৫ উপজেলার প্রায় পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক, গোয়াইনঘাট-সালুটিকর-সিলেট সড়কও পানির নিচে। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী এ উপজেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ। বাহনের অভাবে প্লাবিত এলাকার মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রেও আসতে পারছে না। তাদের উদ্ধারে শুক্রবার থেকে নেমেছে সেনাবাহিনী। ইতোমধ্যে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলায় বন্যার্তদের সহযোগিতায় সেনাবাহিনী কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসনে। জেলার দক্ষিণ সুরমা, জকিগঞ্জ, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক উপচে পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট-ছাতক রেললাইনের বিশ্বনাথ অংশ পানির নিচে ডুবে গেছে। এ কারণে ওই রুটে ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে।
 
গত ৩ দিনে সিলেটের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১২২ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এ কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢালে সিলেটে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃষ্টির পানি ঢল হয়ে বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় প্রবেশ করেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস বলছে, আগামী ৩ দিন উজানে ভারতীয় অংশে ও বাংলাদেশ অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। সিলেটে নিরাপত্তার স্বার্থে পানি নিমজ্জিত এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে কুমারগাঁও উপকেন্দ্র তলিয়ে গেলে দুই জেলার ৯০ শতাংশ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়বে। কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের ভবনও পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। যাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নতুবা নিরাপদ স্থানে চলে আসতে বলা হচ্ছে। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে সেনাবাহিনী তাদের বিশেষ ধরনের নৌকা নিয়ে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। 
 
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে সিটি করপোরেশন রয়েছে। ভয়াবহ এই বন্যা মোকাবিলায় বিত্তবানসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা নিজ নিজ এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন। মেয়র বলেন, কুমারগাওয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। সেনাবাহিনীও এখানে কাজ করছে। সেনাবাহিনী বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রে ঢুকে পড়া পানি সিটি করপোরেশনের সাকার মেশিন দিয়ে শুকানোর কাজ করা হচ্ছে।
 
অপরদিকে বন্যা পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের জরুরি সর্তক বার্তা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আকস্মিক বন্যার কারণে শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, মুরাদপুর, ঘাসিটুলা এবং আশপাশ প্লাবিত হওয়ায় জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে পানিতে কোনো বৈদ্যুতিক তার, খুঁটি বা অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি পড়ে থাকলে অথবা গাছপালা বৈদ্যুতিক লাইনে পড়লে, স্পর্শ না করে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে দ্রুত অত্র দপ্তরের ০১৬২৫০৩৮৭৮৪ এবং ০২৯৯৬৬৩৩১৭৩ নম্বরে ফোনে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।