দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : সুরমা ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণাসহ ১১ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগসংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দুদিন বৃষ্টিপাতের এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। শনিবার (১৮ জুন) রাত পৌনে ৯টার দিকে এসব তথ্য জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. শাহীনুল ইসলাম। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে ‘নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস’ অংশে বলা হয়, সুরমা ব্যতীত দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কতিপয় স্থানে মাঝারি থেকে ভারী, কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
এ সময়ে তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার কাছাকাছি অথবা উপরে অবস্থান করতে পারে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. শাহীনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দুদিন বৃষ্টিপাতের এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশেই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাতে বৃষ্টি বাড়তে পারে। বেশ কয়েকটি বিভাগে প্রবল বজ্রপাতসহ ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ মাসে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও বৃষ্টি হবে। বন্যাকবলিত সিলেটে বৃষ্টির পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দুদিন অর্থাৎ ২০ জুন পর্যন্ত সেখানে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি বলেন, সিলেটে এ মাসের প্রতিদিনই বৃষ্টির আভাস রয়েছে। ২০ তারিখের পর এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানাব।
লালমনিরহাট : গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে জেলার চারটি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ১৫ হাজার ৫০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
শেরপুর : গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে জেলার নকলা, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের ৯৭টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ১ হাজার ৯৫০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নেত্রকোণা : জেলার ছয়টি উপজেলার (দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মদন, খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ) ৩৯টি ইউনিয়নের ৭ হাজার ২৩০টি পরিবারের ৩১ হাজার ৬৯০জন লোক এবং ১২ হাজার ৫০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ময়মনসিংহ : জেলার ধোবাউড়া উপজেলার নিতাই নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ১১৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ১ হাজার ৫০০টি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিলেট : জেলার কয়েকটি উপজেলা প্লাবিত। সুরমা, কুশিয়ারা, গারিগোয়াইন ও খোয়াই নদীর পানি সব কয়টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পানি কমছে। বহু মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধারে কাজ করছে।
সুনামগঞ্জ : গত কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল এবং উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, জগন্নাথগঞ্জ, দ. সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধর্মপাশায় ৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম : গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম সদর, রৌমারী, চর রাজিবপুর, চিলমারী ও উলিপুর, উপজেলার নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হয়ে ৪০-৪৫টি গ্রামের ১১-১২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।
২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং ২৮৩ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে জেলার ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি চিলমারী পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। সিলেটে ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দুদিন বৃষ্টিপাতের এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
শনিবার আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদের সই করা এক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আজ (শনিবার) বিকেল ৫টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও প্রবল বজ্রপাতসহ ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতি ভারী (৮৯ মি.মি. বা তার অধিক) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন বন্যাকবলিত সিলেট এবং সুনামগঞ্জে ৯০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুক্রবার পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়, লাখ-লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে যায়। উদ্ধারের জন্য সিভিল প্রশাসন জলযান নিয়ে মাঠে নামে। সিলেট এবং সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জানিয়েছিলেন, পানিবন্দির তুলনায় জলযান অপ্রতুল। প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, দেশের ১০ জেলার ৬৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত। এসব এলাকার মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। বলা হচ্ছে, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন বন্যা হয়নি।
দেশকন্ঠ/অআ