দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : খালেদ আহমেদ বলেছিলেন, ম্যাচ পাঁচ দিনে নিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তবে সেজন্য ব্যাটারদের ‘সাহায্য’ চেয়েছিলেন এই পেসার। খালেদ তৃতীয় দিনের শেষ বিকালে ঝলক দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, ব্যাটাররা নিজেদের কাজ ঠিকঠাক করলে পাঁচ দিনে না যাক, জেতার সম্ভাবনা ভালোভাবেই তৈরি হতো বাংলাদেশের। কিন্তু সেসবের কিছুই হয়নি। আবারও সেই ব্যাটিং-ই ডোবালো বাংলাদেশকে! অ্যান্টিগা টেস্টের তৃতীয় দিন শেষেই আসলে ম্যাচের ‘ফল নিষ্পত্তি’ হয়ে গিয়েছিল। অপেক্ষা ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতার। সেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ফেললো মাত্র আধাঘণ্টায়, ৭ ওভারেই। ব্যাটিং বিপর্যয়ে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের হার ৭ উইকেটে। চতুর্থ দিনের সকালে জিততে ৩৫ রান দরকার ছিল ক্যারিবিয়ানদের। জন ক্যাম্পবেল ও জার্মেইন ব্ল্যাকউড কোনও বিপদ ছাড়াই লক্ষ্যটা টপকে যান। ফলে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো স্বাগতিকরা।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় দ্বিতীয় ইনিংসেও পথ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে লোয়ার মিডল অর্ডারে সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসান সোহানের জুটিতে লিড নেয় সফরকারীরা। যদিও নতুন বল নেওয়ার পর আবার এলোমেলো। দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট ২৪৫ রানে। তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেয় ৮৪ রানের টার্গেট। তখনই আসলে জয়ের সব আশা শেষ বাংলাদেশের। তবে হাল ছাড়েনি। বিশেষ করে, শুরুতেই খালেদ যেভাবে আগুন ছড়ান বোলিংয়ে, নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানরা ৯ রানে হারায় ৩ উইকেট। কিন্তু আফসোস, স্কোরে বেশি রান নেই স্বাগতিকদের! স্বপ্ন ফিকে হতে থাকে দিনের আলো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। ক্যাম্পবেল ও ব্ল্যাকউড মিলে বিপদ বাড়তে দেননি। ফলে জয় থেকে মাত্র ৩৫ রান দূরে থাকতে শেষ করে তৃতীয় দিনের খেলা।
চতুর্থ দিনে ক্যারিবিয়ানরা কত দ্রুত জয় নিশ্চিত করে, সেটিই ছিল দেখার। অন্যদিকে অলৌকিক কিছুর আশায় থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু অবিশ্বাস্য কিছু করতে দেখাতে পারেননি বাংলাদেশের পেসাররা। চতুর্থ দিন শুরু হতে হতেই শেষ! মাত্র ৭ ওভারে জয় নিশ্চিত করে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ছক্কা মেরে জয় নিশ্চিত করা ক্যাম্পবেল অপরাজিত থাকেন ৫৮ রানে। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে তিনি ৬৭ বলের ইনিংসটি সাজান ৯ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায়। অন্যদিকে ব্ল্যাকউড ৫৩ বলে ২ বাউন্ডারিতে অপরাজিত থাকেন ২৬ রানে। তৃতীয় দিনে আশার আলো দেখানো খালেদ চতুর্থ দিনে কিছু করতে পারেনি। আগের দিনের ৩ উইকেট নিয়ে ৮ ওভারে তার খরচ ২৭ রান। স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের আর কোনও বোলারের সাফল্য নেই। এর আগে ব্যাটিং ব্যর্থতায় প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে করে ২৬৫ রান। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা দ্বিতীয় ইনিংসে ঢেকে দেবে, এই প্রত্যাশা থাকলেও আবারও সেই একই পরিণতি। তবে সাকিব ও সোহানের হাফসেঞ্চুরিতে ২৬৫ রান করতে পারে সফরকারীরা। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন কেমার রোচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংসে ৩২.৫ ওভারে ১০৩ (সাকিব ৫১, তামিম ২৯, লিটন ১২; জোসেফ ৮.৫-২-৩৩-৩, সেলস ১০-২-৩৩-৩, মায়ার্স ৫-২-১০-২, রোচ ৮-২-২১-২) ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৯০.৫ ওভারে ২৪৫ (সোহান ৬৪, সাকিব ৬৩, জয় ৪২, তামিম ২২, শান্ত ১৭, লিটন ১৭; রোচ ২৪.৫-১০-৫৩-৫, জোসেফ ১৯-৬-৫৫-৩, মায়ার্স ১৩-৩-৩০-২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : প্রথম ইনিংসে ১১২.৫ ওভারে ২৬৫ (ব্র্যাথওয়েট ৯৪, ব্ল্যাকউড ৬৩, বনার ৩৩, ক্যাম্পবেল ২৪, মোটি ২৩*; মিরাজ ২২.৫-৬-৫৯-৪, খালেদ ২২-৪-৫৯-২, এবাদত ২৮-৮-৬৫-২) ও দ্বিতীয় ইনিংসে (লক্ষ্য ৮৪) ২২ ওভারে ৮৮/৩ (ক্যাম্পবেল ৫৮*, ব্ল্যাকউড ২৬*, রেইফার ২; খালেদ ৮-০-২৭-৩)।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যাচসেরা : কেমার রোচ।
দেশকন্ঠ/অআ