দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : এ বছর ঈদুল ফিতরের ঈদযাত্রায় সড়কে সর্বাধিক বাহন ছিল মোটরসাইকেল। দুই চাকার বাহনে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তাই ঈদুল আজহায় মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। ১৯ জুন বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক’ এক কর্মশালায় এই সুপারিশ জানায় সংস্থাটি। বিআরটিএর সুপারিশগুলো হলো, জাতীয় মহাসড়ক মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা। তবে জাতীয় মহাসড়ক সার্ভিস রোড থাকলে উক্ত সার্ভিস রোডে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে; দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে চলাচল করা মোটরযান এবং অনুমোদিত ওভারটেকিং করা মোটরযানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা; জাতীয় মহাসড়কে হিউম্যান হলার, থ্রি হুইলারসহ নসিমন, করিমন, ইজিবাইক ইত্যাদি চলাচল বন্ধ করা; ফুটওভার ব্রিজ অথবা জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারসহ রাস্তায় চলাচল ও পারাপারের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে পথচারী এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা; পেশাদার গাড়ি চালকদের ট্রাফিক সাইন, ট্রাফিক আইন এবং দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতনমূলক স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রাখা; খেলাপি এবং যথাযথ কাগজপত্র বিহীন মোটরযানের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা এবং জাতীয় মহাসড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা।
কর্মশালায় বিআরটিএ জানায়, গত ঈদযাত্রার ৬ দিনে জাতীয় মহাসড়কে ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এসব দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ও ৯২ জন আহত হয়। ঈদুল ফিতরের সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন। কেননা দেশে কয়েক বছর ধরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনাও। বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান ২ হাজার ২১৪ জন, যা ওই বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩৫ শতাংশ। ২০২১ সালে দেশে আগের বছরের চেয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ ও মৃত্যু ৫১ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছিল শুধুমাত্র ঈদুল ফিতরের আগে-পরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত হয়েছেন। রেল ও নৌপথ মিলিয়ে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন মোট ৪৪৩ জন। আর সব মিলিয়ে আহত হয়েছেন ৮৬৮ জন। এর মধ্যে ঈদযাত্রায় ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত এবং ১১০ জন আহত হন।
জাতীয় মহাসড়কে আসন্ন ঈদে বিআরটিএ মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন, জানতে চাইলে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, এই বিষয়ে আমার প্রতিক্রিয়া মিশ্র। বিআরটিএ প্রাথমিক সুপারিশ দিয়েছে। গত ঈদে আমরা দেখেছি আগে-পরে গড়ে প্রতিদিন ১৫ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যাটা কিন্তু অনেক বেশি। আসন্ন কোরবানির ঈদে গতবারের চেয়ে সড়কে চাপ বেশি থাকবে। কারণ পশু পরিবহনের ট্রাকগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, মোটরসাইকেল এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ একটি যানবাহন। ঈদের সময় এটি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। বিআরটিএর এ সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি এটাও বলতে চাই, শুধুমাত্র মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের করলে চলবে না। মহাসড়কে আমাদের যে ইজিবাইক, ভটভটি, করিমন, নসিমন চলে; ২০১৫ সাল থেকে কিন্তু এসব মহামান্য হাইকোর্ট থেকে চলাচল বন্ধের কথা বলা হয়েছে। এদেরকেও মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাদিউজ্জামান বলেন, সরকারের অবশ্যই প্রস্তুতি থাকতে হবে যেন গণপরিবহনের যাত্রী হয়রানি না হয়, ভাড়া নৈরাজ্য না হয়, টিকিট কালোবাজারি না হয়। জনগণ যেন সুশৃঙ্খলভাবে যাতায়াত করতে পারে। না হলে কিন্তু যাত্রীসাধারণ ভোগান্তিতে পড়বে। তাই সরকারকে সবদিকেই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
দেশকন্ঠ/অআ