দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গত আট বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে সংস্থাটি সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যায় সেসময় সংস্থাটি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশীয় বাজারে দাম সমন্বয়ের কোন উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু যখনই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে তখনই জ্বালানি বিভাগ থেকে বিপিসির লোকসানের কারণ দেখিয়ে দাম সমন্বয় বা দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে গত নভেম্বর মাসে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো হয়।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিপিসি গত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর থেকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত কোনো বছরই জালানি তেল বিক্রি করে লোকসান দেয়নি। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ছিল ৪৮ হাজার ১২২ কোটি ১১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে তেল বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি নিট মুনাফা করেছে এক হাজার ২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপিসি লোকসান গুণছে, এই অজুহাতে দাম বাড়ানোর জন্য জ্বালানি বিভাগ থেকে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে তেলের দাম বাড়ানো হতে পারে বলে সূত্র জানায়। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ক্রমান্বয়ে তেল, গ্যাস, সার ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। তবে তা ভোক্তাদের সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, তেলের দাম বাড়ানো বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ভোক্তাদের যাতে তেমন কোনো অসুবিধা না হয় সে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
গত ৯ জুন অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২’তে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বিপিসির লাভ-লোকসানের খতিয়ানও উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে পরিসংখ্যান দিয়ে দেখানো হয়েছে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর থেকে বিপিসি তেল বেচে মুনাফা করা শুরু করে। সে বছর মুনাফার পরিমাণ ছিল চার হাজার ১২৬ কোটি ৮ লাখ টাকা । এর পরের অর্থবছর ২০১৫-২০১৬ তে মুনাফা করে ৯ হাজার ৪০ কোটি ৭ লাখ টাকা। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মুনাফা আট হাজার ৬৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে একইভাবে মুনাফা করেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর পাঁচ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর চার হাজার ৭৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পাঁচ হাজার ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছর সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মে ২২ মে পর্যন্ত মুনাফা হয়েছে এক হাজার ২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে বিপিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিপিসি এখন চাপে পড়েছে। প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটির প্রায় শতকোটি টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। কিন্তু এতেও আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হতো না, যদি না আমাদের রিজার্ভে পর্যাপ্ত অর্থ থাকতো। বিপিসির রিজার্ভে থাকা প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা একটি আইনের বলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে। ফলে লোকসান পুষিয়ে নিতে তেলের দাম বাড়াতে হবে, অথবা ভর্তুকি দ্বিগুণ করতে হবে। সূত্র জানায়, বিপিসি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করছে যাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে পদ্মা ওয়েলের নামে ঢাকার শাহবাগে ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ১২তলা ভবন নির্মাণ। এটি একটি আবাসিক ভবন হবে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামেও এ ধরনের বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
দেশকন্ঠ/অআ