• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০০:৪৫
সোনালি আঁশে ভরপুর ভালোবাসি ফরিদপুর

পদ্মা সেতু স্বপ্ন দেখাচ্ছে ফরিদপুরের পাট চাষিদের

দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : ফরিদপুর জেলার ব্র্যান্ডিং স্লোগান ‘সোনালি আঁশে ভরপুর, ভালোবাসি ফরিদপুর’। নয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর জেলা সোনালি আঁশ পাটের জন্য বিখ্যাত। এই জেলায় মানসম্পন্ন পাট উৎপাদিত হয়, যা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।
 
এদিকে জেলায় রয়েছে ২২টি জুটমিল। এসব মিলের উৎপাদিত পাটপণ্য সুতা রপ্তানি করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু ফেরিঘাটে যানজটের কারণে সেসব পণ্য চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সময় মতো পৌঁছানো সম্ভব হতো না। এ জন্য বিদেশি ক্রেতাদের কাছে চুক্তির খেলাপ হতো মিল মালিকদের। ফেরিঘাট থেকে ফিরে আসতো রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক। ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন মিল মালিকরা। বন্ধ থাকতো জুটমিল, শ্রমিকরা হয়ে পড়তেন কর্মহীন। পদ্মা সেতু চালুর ফলে পাটপণ্য রপ্তানিতে এই ভোগান্তি আর থাকবে না।
 
জেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ পাটের সবুজ পাতাগুলোতে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। সালথায় সমাদৃত সোনালি আঁশ পাটের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসলই হচ্ছে পাট। যুগের পর যুগ ধরেই বাণিজ্যকভাবে পাট আবাদ করে স্বাবলম্ভী এখানকার প্রান্তিক চাষিরা। তাই অন্যবারে মতো এবারও কৃষকের যত স্বপ্ন পাটকে ঘিরে। এরই মধ্যে পাটের চারাগুলো বেশ বড় হয়ে উঠেছে। কৃষকরাও তীব্র গরম আর ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ব্যস্ত সময় পার করছেন সোনালি আঁশ পাটের পরিচর্যা কাজে। তবে অধিকাংশ কৃষকদের পরিচর্যা কাজ শেষ হয়েছে। এখন কেবল পাট কেটে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে ঘরে তোলার পালা। এবার পাটের ফলন হবে বাম্পার। তবে পানির অভাবে জাগ দেওয়া নিয়েও শঙ্কায় রয়েছে পাট চাষিরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুরের মধ্যে সালথা উপজেলাকে পাটের রাজধানী বলা হয়। প্রতিবছর এ উপজেলায় ১২ থেকে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করা হয়। যা মোট আবাদি জমির ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ। 
 
বিভিন্ন এলাকার পাট চাষিরা জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে পাটের দরপতন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও পাটের আঁশ ছাড়ানো পানির অভাবে কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ১ বিঘা জমিতে গড়ে ৮ থেকে ১০ মণ পাট উৎপাদন হয়। আর প্রতি মণ পাট সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা থেকে ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে বাজার মূল্য হিসেবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এদিকে অল্পসংখ্যক কৃষক যারা পাট চাষ করছেন, জ্যৈষ্ঠ মাস শেষ হয়ে আষাঢ় মাস শুরু হয়েছে তেমন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় ও এলাকার বেশিরভাগ খাল, বিল শুকিয়ে যাওয়ায় চিন্তিত কৃষক। পানি না থাকায় পাট পচানো নিয়ে শঙ্কায় কৃষক। এতে পাটের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
 
 
সালথার ভাওয়াল ইউনিয়নের পুরুরা গ্রামের কৃষক পলাশ জানান, বর্তমানে একজন দিনমজুরের দৈনিক হাজিরা ৬oo টাকা থেকে ৭০০ টাকা। এক বিঘা জমির পাট কেটে তা জাগ দিয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলতে যে পরিমাণ দিনমজুর লাগে তাতে আগের খরচ মিটিয়ে মণ প্রতি পাটের দাম পড়ে ২০০০ টাকার বেশি। আবার পাট পচনের খাল-বিলগুলোর মধ্যে প্রায় সব খালেই অধিকাংশ সময় পানি থাকে না, আবার কোনো কোনো খাল মাছ চাষ করায় পানি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পাট জাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই পাট চাষে তেমন আগ্রহ নেই তাদের। প্রতিবছর মণপ্রতি পাটের বাজার মূল্য ২০০ থকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। রামকান্তপুর ইউনিয়নের হাবেলি গ্রামের কৃষক আজিজ জাগো নিউজকে বলেন, গত দুবছর থেকে ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে পাট জাগ দেওয়া ও পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তাই এখন পাট চাষ ছেড়ে দিয়ে শাক-সবজি ও মরিচের চাষ করি। এতে পরিশ্রম কম লাভ বেশি।
 
এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল বারি বলেন, সব মিলিয়ে উপজেলায় বিজেআরআই-৮ ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। এবছর সালথা উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে এরমধ্যে ৫০০ হেক্টর জমিতে রবি-১ আছে যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। তাছাড়াও রবি ১ বীজের জন্য কৃষকের এখন দিন দিন আগ্রহ বাড়াচ্ছে আশা করি আগামী বছর রবি ১০০ হেক্টর বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন, উপজেলায় মোট আবাদি জমির ৯২ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও আবাদ বেশি হচ্ছে অর্থকরী ফসলটির। মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। রোগ ও পোকা-মাড়ক দমন ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য আন্তপরিচর্যার বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে মাঠ পর্যায় কাজ করছেন উপ-সহকারী কর্মকর্তাবৃন্দ। প্রত্যাশা করছি আশানুরূপ ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠবে। বোয়ালমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রীতম কুমার হোড় জাগো নিউজকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এবার পাটের আবাদ বেশি হচ্ছে। মাঠের সার্বিক পরিস্থিতিও ভাল। রোগ ও পোকা-মাড়ক দমন ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য আন্তপরিচর্যা বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন উপ-সহকারী কর্মকর্তাবৃন্দ। আশানুরূপ ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে বলে মনে করিছ।
 
মধুখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ৮৬০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাষ হয়েছে ৮৫৫৫ হেক্টর। পাট বপনের পর অনুকূল আবহাওয়া ও সময় মতো বৃষ্টি পাওয়ার কারণে পাটের আকার এবং আঁশের পরিপক্কতা ভালো হবে। পাট পঁচানোর জন্য সময় মতো পানি হলে এবছর পাটের ফলন হবে আশাব্যঞ্জক। মধুখালীর রায়পুর ইউনিয়নের ব্যাসদী, লক্ষীনায়রনপুর, রায়পুর, গোপালদি মেগচামী ইউনিয়নের মেগচামী মাঠ, নরকোনা মাঠ, কলাগাছি মাঠ, গাজনা ইউনিয়নের মথুরাপুর মাঠ, কোরকদি মাঠ, আড়পাড়া মাঠ, নওপাড়া মাঠ এলাকায় দেখা যায় প্রচুর পরিমাণে পাটের চাষ হয়েছে। পাট দেখলে মন ভরে যায়। কৃষকেরা জানান, সময় মতো পানি হলে পাট পঁচাতে কৃষকের সমস্যা হবে না।
 
মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলভীর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এবছর আবহাওয়া পাট চাষের উপযোগী হওয়ায় পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ৮৬০০ থাকলেও পাট বীজ বপন হয়েছে ৮৫৫৫ হেক্টোর জমিতে। যা গতবারের চেয়ে ২ হেক্টর পরিমাণ বেশি কৃষকের আগ্রহ আর আমাদের প্রচেষ্টায় আজকের এ অবস্থান। এ ছাড়া গত বছর পাট চাষিরা পাটের দাম ভালো পাওয়ায় এবছর চাষিরা পাট চাষে আগ্রহী হয়েছেন। দাম ভালো পেলে কৃষকের উপকার হবে। যথা সময়ে পাট পচানোর জন্য পানির ব্যবস্থা হলেই হবে।
 
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক,কৃষিবিদ ড. হজরত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ফরিদপুর জেলা পাটের জন্য বিখ্যাত। মাটি, আবহাওয়া পাট চাষের জন্য উত্তম। এ জেলার সোনালি আঁশের জন্য সুখ্যাতি রয়েছে। চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে দেড় লক্ষাধিক চাষি পাটের আবাদ করেছেন। জেলায় মোট এক লাখ ২৪ হাজার হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে চলতি মৌসুমে ৮৬ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে যা থেকে উৎপাদন হবে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বেল (১৮০ কেজিতে ১ বেল) পাট।
দেশকন্ঠ/রাসু

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।