দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের পথে সরকারের আরও একটি পদক্ষেপ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেশের সর্বপ্রথম স্থাপিত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। ৬ জুলাই গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে চুয়েট আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি এই আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর সেন্টারে নির্মিত শেখ জামাল ডরমিটরি ও রোজী জামাল ডরমিটরির উদ্বোধন করেন। আর আইসিটি মন্ত্রণালয় প্রান্ত থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
আইসিটি মন্ত্রণালয় প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। চুয়েট প্রান্তে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, চুয়েট ভিসি, চুয়েট আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্প পরিচালক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। উদ্যোক্তা তৈরি এবং জ্ঞান-ভিত্তিক কোম্পানি গড়ে তুলতে বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের বিজনেস ইনকিউবেটর থাকলেও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এটিই প্রথম। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আইডিয়াগুলোকে বাস্তবায়ন এবং একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ-অবকাঠামো সহায়তা দেওয়া হবে। চুয়েটের এই উদ্যোগটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ধরনের বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এই ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়ার মাঝে একটা সেতু বন্ধন সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণের যে অঙ্গীকার করেছে, তা বাস্তবায়নে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের মতো অবকাঠামো অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। কারণ এখান থেকেই উদ্ভাবিত হবে নতুন নতুন আইডিয়া এবং সেসব আইডিয়াকে বাস্তবায়নে রূপ দেওয়ার একটি ক্ষেত্র হবে এসব আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। এসব অবকাঠামোই হবে আমাদের আগামীর তরুণ প্রজন্মের মেধা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিকাশকেন্দ্র। যাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেমের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের পরিচালক এবং চুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম মশিউল হক ৫ জুলাই সাংবাদিকদের বলেন, এই আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে। উদ্যোক্তা এবং ব্যবসার জন্য সম্পূর্ণ ইকো-সিস্টেম রয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্টগুলোতে কীভাবে বাস্তব প্রকল্প এবং পণ্যে রূপ দেওয়া যায় আমরা সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে অফিস স্থাপন করতে ইতোমধ্যে ক্লিকপ্যাড- অস্ট্রেলিয়ান, এলজি-বাটারফ্লাই, হুয়াওয়ে, ওয়ালটন যোগাযোগ করছে বলে জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদান; বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইটি শিল্পের মধ্যে কার্যকর সংযোগ স্থাপন; বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে সুযোগ সৃষ্টি এবং ভৌত অবকাঠামো তৈরি করা। চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে ২২০ জনের প্রশিক্ষণ তথা ইনকিউবেশনের সুযোগ রয়েছে। বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, এমআইটির গবেষণা ও উদ্ভাবনের দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানে তারা শিল্পের চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা দিচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা করেছে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। এখানে শিক্ষার্থীদের আইডিয়া ও উদ্ভাবনী ধারণাকে ইনকিউবেট করার সুযোগ করে দেওয়ার ফলে বড় বড় উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, যা জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির প্রসার ঘটিয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই সরকার চুয়েটে এই শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করেছে সরকার।
দেশে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ গ্র্যাজুয়েট বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাস করে বের হয়। এদের মধ্যে অনেকেই থিসিস, রিসার্চ কিংবা ফাইনাল ইয়ার প্রজেক্টের উদ্ভাবনী আইডিয়া জমা দেন। এর মধ্য থেকে যেসব থিসিস, রিসার্চ কিংবা ফাইনাল ইয়ার প্রজেক্টের উদ্ভাবনী আইডিয়াগুলোর অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে সেগুলো বাণিজ্যিকী করণে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ইনকিউবেটর প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে। চুয়েটের এই প্রকল্পটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করবে সরকার, ২০১৭ এর জুলাই থেকে শুরু করে ২০২২ এর জুন পর্যন্ত নির্ধারিত মেয়াদেই ইউনিক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ১১৭ কোটি ৯ লাখষ টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ১১৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় সব কাজ শেষ করেন সংশ্লিষ্টরা। বাকি ৩ কোটি ২২ লাখষ টাকা সাশ্রয় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়।
৫ জুলাই শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, চুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রায় ৫ একর (৪.৭ একর) জমির ওপর ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ইনকিউবেশন ভবন এবং ৩৬ হাজার বর্গফুটের ৬ তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ইনকিউবেশন ভবনের মধ্যে রয়েছে—স্টার্টআপ জোন, আইডিয়া/ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্ট্রর্মিং জোন, ই-লাইব্রেরি, ডাটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, বঙ্গবন্ধু কর্ণার, এক্সিবিশন/প্রদর্শনী সেন্টার, ভিডিও কনফারেন্সিং কক্ষ, সভাকক্ষ প্রভৃতি। উদ্যোক্তা ও গবেষকদের কাজের সুবিধার্থে একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ল্যাব, একটি মেশিন লার্নিং ল্যাব, একটি বিগ ডাটা ল্যাব, অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোন, একটি সাব-স্টেশন ও সোলার প্যানেল রয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও আইটি ফার্মের জন্য পৃথক কর্নার, অত্যাধুনিক সাইবার ক্যাফে, ফুড কোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, রিক্রিয়েশন জোন, মেকার স্পেস, ডিসপ্লে জোন, প্রেস/মিডিয়া কাভারেজ জোন, নিজস্ব পার্কিং সুবিধা প্রভৃতি। অন্যদিকে মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবনে ২৫০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সুসজ্জিত অডিটোরিয়াম এবং ৩০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পৃথক ৮টি কম্পিউটার ল্যাব কাম সেমিনার কক্ষ রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ৪ তলাবিশিষ্ট পৃথক দুটি (১টি নারী ও ১টি পুরুষ) আবাসিক ডরমিটরি ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি ডরমিটরিতে ৪০টি কক্ষ রয়েছে। এছাড়া দুটি মিনি সুপার কম্পিউটার সম্বলিত অত্যাধুনিক গবেষণা ল্যাব শিগগিরই স্থাপিত হতে যাচ্ছে।
দেশকন্ঠ/অআ