দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : স্মলপক্স বা গুটিবসন্ত প্রতিরোধে বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ‘ইমভানেক্স’ নামে একটি টিকা। এখন থেকে সেটি মাঙ্কিপক্সের জন্যেও ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। ২৪ জুলাই ওষুধ কোম্পানি বাভারিয়ান নরডিক এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর এএফপির। ড্যানিশ প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইইউর ওষুধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার সুপারিশক্রমে মাঙ্কিপক্স থেকে সুরক্ষায় গুটিবসন্তের টিকা ইমভানেক্সের বিপণন স্বীকৃতি বাড়িয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। এই অনুমোদন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য দেশের পাশাপাশি আইসল্যান্ড, লিচেনস্টাইন এবং নরওয়ের জন্যেও প্রযোজ্য। গুটিবসন্ত প্রতিরোধে ২০১৩ সালে ইমভানেক্স ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল ইউরোপ। গুটিবসন্তের ভাইরাসের সঙ্গে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বেশ মিল পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ১৯৮০ সালে নির্মূল হওয়া এই অসুখের তুলনায় মাঙ্কিপক্স অনকে কম সংক্রামক ও কম বিপজ্জনক। এর আগে, গত শনিবার (২৩ জুলাই) মাঙ্কিপক্স প্রাদুর্ভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তারা বলেছে, বিশ্বের সরকারগুলো ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে চেষ্টা চালালেও ভাইরাসটি আরও ছড়িয়ে পড়ার ‘সুস্পষ্ট ঝুঁকি’ রয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থাটির পক্ষ থেকে এটিই সর্বোচ্চ সতর্কতার মাত্রা। ২০০৭ সালে চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইবোলা, জিকা, কোভিড-১৯, পোলিওসহ মাত্র ছয়টি রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য এই সতর্কতা জারি করেছে তারা। গত জুনে ডব্লিউএইচও প্রধান তেদ্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেছিলেন, তিনি মাঙ্কিপক্সকে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ হিসেবে দেখলেও জরুরি সতর্কতা জারির মতো ভাবছেন না। তবে গত বৃহস্পতিবার প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে আলোচনার পর নিজের মত বদলেছেন তিনি। মাঙ্কিপক্সের নামকরণ করা হয় ৬৪ বছর আগে, ১৯৫৮ সালে। সর্বপ্রথম মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস খুঁজে পাওয়া যায় বানরের শরীরে। ১৯৭০ সালে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে যখন গুটিবসন্ত নির্মূলের জোর চেষ্টা চলছে, তখনই মাঙ্কিপক্সের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এরপর থেকে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষের মধ্যে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়েছে, যা এখন ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বিশ্বে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৭০টির বেশি দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ১৬ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে জুনের শেষ থেকে জুলাইয়ের শুরু পর্যন্ত সংক্রমণের হার বেড়েছে ৭৭ শতাংশ। সংস্থাটি জানিয়েছে, পুরুষ সমকামীদের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরে আফ্রিকায় মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ মহাদেশের বাইরে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) তথ্য বলছে, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সেরে উঠছে। ভাইরাসটি একটি ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে, যা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা বলেছেন, ব্রণ বা ফোস্কার মতো দেখতে ওই ফুসকুড়ি খুব যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।
দেশকন্ঠ/অআ