দেশকণ্ঠ প্রতিবেদক : মোসাদ্দেক হোসেনের দূরন্ত বোলিংয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতা আনলো সফরকারী বাংলাদেশ। ৩১ জুলাই সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। ২০ রানে ৫ উইকেট নেন মোসাদ্দেক। তিন ম্যাচ সিরিজে এখন ১-১ সমতা বিরাজ করছে।
প্রথম টি-টোয়েন্টির মত টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে জিম্বাবুয়ে। বল হাতে শুরুতেই আক্রমণে ছিলেন মোসাদ্দেক। ইনিংসের প্রথম বলেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন তিনি। রেজিস চাকাবভাকে শিকার করেন মোসাদ্দেক। ঐ ওভারের শেষ বলেও উইকেট শিকারের আনন্দে মাতেন মোসাদ্দেক। পুরো ইনিংসে বাংলাদেশকে চাপে রাখা ওয়েসলি মাধভেরেকে শিকার করেন মোসাদ্দেক। চার দিয়ে ইনিংসের খাতা খুলেছিলেন প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ৬৭ রান করা মাধভেরে। ৪ রানেই থামেন তিনি। প্রথম ওভারেই ২ উইকেট নিয়ে ক্ষান্ত হয়ে যাননি মোসাদ্দেক। নিজের দ্বিতীয় ওভারেও উইকেট নিয়েছেন তিনি। এবার তার শিকার জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন আরভিন। ১ রান করেন তিনি।
প্রথম ও দ্বিতীয় ওভারের পর তৃতীয় ওভারেও উইকেট শিকার অব্যাহত রাখেন মোসাদ্দেক। নিজের ডেলিভারিতে নিজেই ক্যাচ নেন সিন উইলিয়ামসের। ২টি চারে ৮ রান করেন উইলিয়ামস। প্রথম ৩ ওভারেই ৪ উইকেট নেয়া মোসাদ্দেককে প্রথম স্পেলেই তার বোলিং কোটা শেষ করে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। তাই ইনিংসের সপ্তম ওভারেও আক্রমনে ছিলেন মোসাদ্দেক। ঐ ওভারে নিজের ও জিম্বাবুয়ের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটান মোসাদ্দেক। মিল্টন শুম্বাকে ৩ রানে বিদায় দেন মোসাদ্দেক। ফলে ২০ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন মোসাদ্দেক। ইনিংসে তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় এমন- ৪ ওভারে ২০ রানে ৫ উইকেট। চতুর্থ বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন মোসাদ্দেক। মোসাদ্দেকের ঘুর্ণিতে ৩১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে জিম্বাবুয়ে। সেখান থেকে ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন তারপরও দেখছিলো স্বাগতিকরা। কারন উইকেটে ছিলেন গতকালের ম্যাচের নায়ক সিকান্দার রাজা। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ২৬ বলে অনবদ্য ৬৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছিলেন রাজা। চরম বিপর্যয়ের মাঝে আরও একবার নিজেকে মেলে ধরেন রাজা। রায়ান বার্লকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন তিনি। প্রথম ৩২ বলে কোন বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি মারতে পারেননি তারা। আফিফের করা ১৩তম ওভারে ১টি করে চার ও ছক্কা মারেন রাজা-বার্ল। মুস্তাফিজের করা ১৫তম ওভারে রাজার ব্যাট থেকে পরপর দু’টি চার আসে। ঐ ওভারের শেষ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন রাজা। ৪৪ বলে অর্ধশতকের দেখা পান তিনি।
১৭তম ওভারে রাজার ছক্কায় শতরানে পৌঁছায় জিম্বাবুয়ে। ১৮তম ওভারে বার্লকে শিকার করে জুটি ভাঙ্গেন বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদ। ষষ্ঠ উইকেটে ৬৫ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৮০ রান যোগ করেন রাজা ও বার্ল। ৩১ বলে ৩২ রান করেন বার্ল। পরের ওভারে রাজার লড়াকু ইনিংসের ইতি টানেন মুস্তাফিজ। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৩ বলে ৬২ রান করেন রাজা। তার ইনিংসের সুবাদে শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৫ রানের সংগ্রহ পায় জিম্বাবুয়ে। মোসাদ্দেক ছাড়াও বাংলাদেশের পক্ষে ১টি করে উইকেট নেন মুস্তাফিজ-হাসান।
সিরিজ বাঁচাতে ১৩৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে সাবধানে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার ও লিটন দাস। প্রথম ২ ওভারে ১০ রান তুলেন তারা। তবে তৃতীয় ওভারে মারমুখী হয়ে উঠেন লিটন। ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৭ রান তুলেন লিটন। বাউন্ডারি দিয়ে চতুর্থ ওভার শুরু করেছিলেন লিটন। কিন্তু ঐ ওভারে শাহরিয়ারকে হারায় বাংলাদেশ। ৮ বলে ৭ রান করেন শাহরিয়ার। এরপর ক্রিজে আসেন আনামুল হক। বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে লিটনকে সঙ্গ দিয়েছেন তিনি। বাউন্ডারিতে রানের চাকা সচল রাখেন লিটন। তাতে ৩০ বলেই টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৫৩তম ম্যাচে ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছান লিটন।
হাফ সেঞ্চুরির পর থামতে হয় লিটনকে। নবম ওভারের শেষ বলে উইলিয়ামসের এলবিডব্লিউর শিকার হন তিনি। ৩৩ বলে ৫৬ রান করেন লিটন। তার ইনিংসে ৬টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো। আনামুলের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ২৭ বলে ৪১ রান তুলেন লিটন। দশম ওভারে থামতে হয় আনামুলকে। রাজার বলে মাসাকাদজাকে ক্যাচ দেন তিনি। ২টি চারে ১৫ বলে ১৬ রান করেন আনামুল।
আনামুল-লিটনের জুটিতেই জয়ের পথ সহজ হয়ে যায় বাংলাদেশের। শেষ ১০ ওভারে ৫৪ রান দরকার পড়ে টাইগারদের। বাকী কাজটুকু সাড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত ও আফিফ হোসেন। তাড়াহুড়া না করে ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যান তারা। ৪৮ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৫ রান তুলেন শান্ত-আফিফ। আফিফ ২৮ বলে ৩০ এবং শান্ত ২১ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচ সেরা হন মোসাদ্দেক। আগামী ২ আগস্ট সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হবে।
জিম্বাবুয়ে : ১৩৫/৮ [মোসাদ্দেক ৫/২০]
বাংলাদেশ : ১৩৬/৩ [লিটন দাস ৫৬, আফিফ ৩০*]
ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মোসাদ্দেক হোসেন (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা।
দেশকণ্ঠ/আসো