দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : চা শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ৩০০ টাকার দাবি বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি চা শ্রমিক উন্নয়ন কমিশন গঠন করা জরুরি বলে মনে করছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। রোববার আইপিডির নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান তার সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে এমন অভিমত জানান। ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের ন্যায্য দাবিকে পুরোপুরি আমলে না নিয়ে দৈনিক ১৪৫ টাকা করার যে প্রস্তাব সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের পক্ষ থেকে রাখা হয়েছে, সেটি চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যূনতম বেঁচে থাকবার অধিকারকে নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করে আইপিডি।
বিগত দশকগুলোতে চা শিল্পের ক্রমবর্ধমান উন্নতি ও বিকাশ পরিলক্ষিত হলেও চা শ্রমিকদের ভাগ্যের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি, যা অত্যন্ত বিস্ময়কর ও হতাশাজনক। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্য-বঞ্চনা-শোষণের দুষ্টচক্রে আবর্তিত হতে হচ্ছে, বিপরীতে চা শিল্প মালিকদের বিত্ত-বৈভব বাড়ছে ক্রমাগত। যেকোনো শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে গেলে তার শ্রমিকদের সম্মানজনকভাবে খেয়ে-পরে বাঁচবার অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, আমাদের নিকটবর্তী দেশ ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং ভিয়েতনামে ৩০০-৩৫০ টাকা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতে উপরোক্ত মজুরি স্ব-স্ব দেশের ন্যূনতম ভাতার তুলনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনেক কম। ইন্দোনেশিয়ায় ৯৩ ভাগ, ভিয়েতনামে ৪৯ ভাগ এবং ভারতে ৬৬ ভাগ চা শ্রমিক দেশের ন্যূনতম ভাতার তুলনায় কম মজুরি পেয়ে থাকেন।
এ প্রেক্ষাপটে এবং বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির অসহনীয় বাস্তবতায় চা শ্রমিকদের দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবি অত্যন্ত ন্যায্য, মানবিক ও ন্যূনতম জীবন ধারণের মৌলিক মানবাধিকারের দাবি। দেশের শ্রম আইন, বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এ দাবি মেনে নিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য শ্রম অধিদপ্তরকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ নিতে জোর দাবি জানাচ্ছে আইপিডি। ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট মনে করে, চা শ্রমিকদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার জন্য অতি জরুরি ভিত্তিতে ‘চা শ্রমিক উন্নয়ন কমিশন’ গঠন করা প্রয়োজন। উক্ত কমিশন চা শ্রমিকদের মজুরিসহ মৌলিক নাগরিক সুবিধা যথা- শিক্ষা, চিকিৎসা, সুষম পুষ্টি, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, বাসস্থানসহ সব মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিতে সরকারকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেবে। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরে চা শিল্প সংশ্লিষ্ট দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সুবিধাবঞ্চিত ও পশ্চাদপদ রেখে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে চা শিল্প মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের যথাযথ করণীয়সমূহ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
দেশকন্ঠ/অআ