• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ২০:৩৬

নাট্যসঙ্ঘ কানাডার নাটক রামগরুড়ের ছানা এবং পৌরাণিকএ বিমোহিত দর্শক

মৃণাল বন্দ্য, কানাডা থেকে : কলকাতার সুদর্শন পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ প্রেমে পড়েন টেকনাফের জমিদার ওয়ান থিনের একমাত্র মেয়ে অপরূপ সুন্দরী মাথিনের। তিনি। খুব ভোরে কূপ থেকে পানি নিতে আসতেন মাথিন। নিজের অজান্তেই ওই সময় মাথিনকে দেখার অপেক্ষায় থাকতেন ধীরাজ। ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় সে দৃশ্য যেন স্বর্গের অনুভূতি এনে দিত। মাথিনও এমন নীরব প্রেমের বিষয়টি বুঝতে পারলেন এবং সাড়া দিলেন। দুজনের প্রেমের সূচনা এভাবেই। ধীরাজের এই প্রেম মেনে নিতে কোনো আপত্তি ছিল না মাথিনের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের। এমন পরিস্থিতিতে ধীরাজ বাবার চিঠি পেয়ে মাথিনকে না জানিয়ে ফিরে যান কলকাতায়। অসহায়, বঞ্চিত ও প্রতারিত মাথিন মানতে পারলেন না তা। কূপের পাশেই অপেক্ষায় থাকেন ধীরাজের। জল পর্যন্ত স্পর্শ করেননি তিনি। একসময় ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। টেকনাফের সত্য এই ঘটনার উপর ধীরাজ ভট্টাচার্যের 'আমি যখন পুলিশ ছিলাম' বইটি থেকে নাটক 'পৌরাণিক'। সুব্রত পুরুর রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হলো কানাডার টরেন্টোর মঞ্চে। 
 
পৌরাণিক নাটকের আঙ্গিককে বলা যায় 'গীত-নৃত্য-মঞ্চশ্রুতিনাট্য'! এখানে একই সাথে ছিল মঞ্চক্রিয়া ও বাচিক অভিনয় অর্থাৎ 'প্লে রিডিং' বা 'স্টেজ রিডিং'এর সমন্বয়! মৌলিক গানের সাথে নৃত্যের সংযোজন ও সাথে বাচিকের সমন্বয়ে মঞ্চে যে মিথষ্ক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল তার কৃতিত্ব কেবলই নাট্য নির্দেশকের! অভিনয় করেছেন একঝাক নতুন অভিনেতা, সাথে অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ কিছু অভিনেতা।
এরপর মঞ্চস্থ হয় নাটক 'রাম গরুড়ের ছানা'। এই নাটকটিরও রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন সুব্রত পুরু। এটি একটি বিদ্রুপাত্মক বা Satire নাটক! নাটকের পুরো শরীর জুড়েই ছিল হাস্যরসের মাধ্যমে ঘটে যাওয়া সমাজের কিছু চেনা ঘটনার বিদ্রুপাত্মক উপস্থাপন! সবশেষে কমেডির চিরায়ত পরিণতির ধারায় না গিয়ে নাট্যকার আনন্দকেই প্রধান্য দিয়েছেন! নির্দেশক মানে সেই একই ব্যক্তি নাটকটি মঞ্চায়নের প্রায়োগিক জায়গায় দাঁড়িয়ে 'থার্ড থিয়েটার ফর্ম'র কথা ভেবেছেন এবং সফল ভাবে তা করেও দেখিয়েছেন! এই মুনশিয়ানার জন্য নির্দেশক অবশ্যই অভিনন্দনসহ ধন্যবাদের দাবী রাখে! 
 
নাটক দুটিতে অভিনয় করা জনপ্রিয় অভিনেতা মাহমুদুল ইসলাম সেলিম বলেন- “সকলের ভাল অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের! আলো ও আবহ সঙ্গীতের ব্যবহার, শব্দযন্ত্রের ত্রুটিহীনতা, মঞ্চসজ্জার অনারম্বরতা, সব মিলিয়ে দর্শক আনুকুল্য, মুহুর্মুহ করতালি ও চুড়ান্ত আনন্দ নিয়ে দর্শকদের মঞ্চত্যাগ! এই সবই নাটকের সাথে যুক্ত প্রতিটি নাট্যবন্ধুকে পরিতৃপ্তি দিয়েছে নিঃসন্দেহে!”
গত ২ ও ৩ নভেম্বর টরন্টোতে মঞ্চস্থ হয়েছে নাট্যসঙ্ঘ, কানাডা'র তৃতীয় ও চতুর্থ প্রযোজনা 'রামগরুড়ের ছানা' এবং 'পৌরাণিক'। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে নাট্যসঙ্ঘ, কানাডা তাদের প্রতিটি প্রযোজনাতেই মৌলিক নাটক নিয়ে কাজ করেছে। নাট্যকার ও নির্দেশক সুব্রত পুরু বলেন- 'রামগরুড়ের ছানা' নাটকটি মূলত প্রবাসজীবনের বিভিন্ন টানাপোড়েন, মানসিক দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধহীনতা, প্রচারমুখী জীবন-যাপন প্রভৃতি বিষয়গুলোর উপর একটি স্যাটায়ারভিত্তিক পরিবেশনা। এখানে নেতিবাচক বিষয়গুলোর দৃষ্টিকোণভিত্তিক উপস্থাপনায় দর্শক যখন চরিত্রের সাথে নিজেদের মিল খুঁজে পেয়ে প্রায় একটা ঘোরের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে তখনই ইতিবাচক একটি আবহ তৈরীর মাধ্যমে নাটক শেষ হয় এই বার্তা দিয়ে যে, আমরা এই প্রবাসজীবনে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও একটি শুভ ও সুন্দরকে লালন করি। 'পৌরাণিক' মূলতঃ একটি শ্রুতি-মঞ্চ নাটক। এখানে ধীরাজ ভট্টাচার্যের 'আমি যখন পুলিশ ছিলাম' বইটির মাথিন মূখ্য চরিত্র। যে তার প্রিয়ের প্রতীক্ষায় দিন গুণতে গুণতে অবশেষে ঝরে যায়। মাথিনের সাথে গ্রীক প্রেমের উপাখ্যান, রাধা-কৃষ্ণের বিরহপালা, আবহমান বাংলার বিভিন্ন প্রেমের উপাখ্যানের সংযোজন দর্শক-শ্রোতাদের এই বার্তাই দেবে যে, প্রেম চিরন্তন, ভালবাসা যুগে যুগে সর্বজয়ী।‘
 
প্রবাস জীবনের প্রচন্ড ব্যস্ততা স্বত্বেও প্রায় ৫ মাস নিয়মিত মহড়া শেষে মঞ্চস্থ হয় নাটক দুটি। নাটকে প্রতিটি গান লিখেছেন নাট্যকার নিজেই। মিউজিকে কাজ করেছেন অমিতাভ দাস ও মামুন কায়সার। সেলিম চৌধুরী ও মিহির দাশ আলোক পরিকল্পনা ও প্রক্ষেপণের দায়িত্বে ছিলেন। শব্দ নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন শমী সাত্তার। সুভাষ দাশ, স্নিগ্ধা চৌধুরী, নবনী ও গোলাম রব্বানী শিহাব নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন। 
নাটক দুটিতে অভিনয় করেছেন— মাহমুদুল ইসলাম সেলিম, অনুপ সেন গুপ্ত, সুভাষ দাশ, ইশরাত দীপ্তি, ম্যাক আজাদ, এলিনা মিতা, আশরাফ রানা,আশরাফি নাহিদ, মৃণাল বন্দ্য, জুসী ডায়না বিশ্বাস, অনিন্দিতা বিশ্বাস, অমিত গোমেজ, তাপস দেব, নবনী তাহসীন, সুকন্যা দাশ, সুচেতা পুরু। নাটক দুটির মাঝে গান পরিবেশন করেছেন প্রথমদিনে অতিথি শিল্পী সোনালী রায় ও পরের দিন শিল্পী রণি প্রেন্টিস রায়। ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আবিদ কনক। উৎসবের প্রাইম স্পন্সর হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত। 
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।