দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : মস্তিষ্ক, স্পন্দিত হৃদযন্ত্র আর শরীরের অন্যান্য প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি করতে পারে এমন ব্লকসহ বিশ্বের প্রথম ‘কৃত্রিম ভ্রূণ’ তৈরির দাবি করেছেন যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। বিশ্বে প্রথমবারের কৃত্রিম এই ভ্রূণ তৈরি করা হয়েছে ইঁদুরের স্টেম সেল থেকে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম ভ্রূণ তৈরির দাবি করা হয়েছে বলে মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডিম্বাণু অথবা শুক্রাণু ব্যবহার করার বদলে কেমব্রিজের অধ্যাপক ম্যাগডালেনা জের্নিকা-গোয়েৎজ নেতৃত্বাধীন বিজ্ঞানীদের একটি দল স্টেম সেল ব্যবহার করে কৃত্রিম ভ্রূণের মডেলটি তৈরি করেছে। যা শরীরের স্টেম সেল এবং প্রায় যেকোনো ধরনের কোষের পার্থক্য করতে পারে। শরীরের একটি আদি কোষ হলো স্টেম সেল। সাধারণত জন্মের পর একটি কোষ থেকে সব ধরনের কোষ তৈরি হয়। মানুষের শরীরে অন্তত ২০০ রকমের কোষ রয়েছে। আর এসব কোষ নির্দিষ্ট একটি কোষ থেকে তৈরি হয়। আদি কোষকে ব্যবহার করে নতুন যেকোনো ধরনের কোষ তৈরি করা যায়।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি, ডেভেলপমেন্ট ও নিউরোসায়েন্স বিভাগের ম্যামালিয়ান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্টেম সেল বায়োলজির অধ্যাপক ম্যাগডালেনা জের্নিকা-গোয়েৎজ। গবেষকরা বলেছেন, আদিম স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে উপস্থিত তিন ধরনের ভিন্ন ভিন্ন স্টেম সেলকে এমন এক পর্যায়ে আনা হয়েছিল, যেগুলো গবেষণাগারে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার অনুকরণ করে মিথস্ক্রিয়া শুরু করে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গবেষকরা একটি নির্দিষ্ট ধরনের জিনের উৎপাদন উসকে দেন এবং সেসবের মিথস্ক্রিয়ার জন্য বিশেষ পরিবেশ তৈরি করেন। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা স্টেম সেলগুলোকে পরস্পরের সাথে ‘মিথস্ক্রিয়ায়’ রাজি করাতে সক্ষম হন।
গবেষকদের বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘আমাদের ইঁদুরের ভ্রূণের মডেল শুধুমাত্র মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়নি, বরং একটি স্পন্দিত হৃৎপিণ্ডও তৈরি করেছে। এতে এমন সব উপাদান রয়েছে যা শরীরের গঠনে ভূমিকা রাখে।’ কেমব্রিজের অধ্যাপক ম্যাগডালেনা জের্নিকা-গোয়েৎজ বলেছেন, ‘এটি অবিশ্বাস্য যে আমরা এখন পর্যন্ত এতদূর আসতে পেরেছি। আমাদের বিজ্ঞানীদের বছরের পর বছরের স্বপ্ন ছিল এটি। এক দশক ধরে আমাদের কাজের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল এটি এবং অবশেষে আমরা সফল হয়েছি।’
কেন কিছু গর্ভধারণ ব্যর্থ এবং কিছু সফল হয় তা বোঝার জন্য কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জের্নিকার দল গত এক দশক ধরে গর্ভাবস্থার এই প্রথম ধাপগুলো নিয়ে গবেষণা করছে। কেমব্রিজের এই অধ্যাপক বলেন, স্টেম সেল ভ্রূণের এই মডেলটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি আমাদের এমন একটি পর্যায়ে বিকাশমান কাঠামোর প্রবেশযোগ্যতা দেয়, যা সাধারণত মায়ের গর্ভে ক্ষুদ্র ভ্রূণ রোপণের জন্য লুকিয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, বহিরাগত কোষগুলো ভ্রূণের কোষের সাথে কেবল রাসায়নিকভাবে নয় বরং যান্ত্রিকভাবে বা স্পর্শের মাধ্যমে ভ্রূণের বিকাশকে নির্দেশ করার জন্য যোগাযোগ করে।
দেশকন্ঠ/অআ