• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১৫:৩০

রাস্তা কি তোর বাপের?

অনিরুদ্ধ ব্রতচারী :  বেচারা সড়কের কী দোষ?
 
'রাস্তা কি তোর বাপের?' রাস্তায় বেরুলে এই কথাগুলো শোনা যায়। কারণ  রাস্তায় যে যায় সেই যেন বাপের সম্পত্তি মনে করে স্বাধীন হয়। নিজেকে রাস্তার রাজাভাবে এবং মন যা চায় অর্থাৎ অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচার, দুর্ঘটনা ইত্যাদি করতে পারে। রাস্তা দিয়ে যে হেঁটে যায় এমনভাবে যায় পিছন থেকে সংকেত বা হর্ন দিয়ে তাকে তার হাঁটার জায়গায় আনতে হয়, নইলে প্রায় রাস্তার মাঝখানে চলে যায়! রাস্তা দেখলেই কেমন যেন কিছু জিনিসপত্র হাজির হয়, আলাদিনের চেরাগের কেরামতিতে যেন হঠাৎ করেই একটা দোকান হয়ে যায়। এবং সেগুলোকে কেন্দ্র করে মানুষের জটলা হয়। এই দোকান বা পসরা এমনই হয় যে ঠেলেও রাস্তার সীমানার বাইরে নেওয়া যায় না, বরং ক্রমশঃ রাস্তার মাঝখানে চলে যায়! ভদ্রলোকের শহরে রাস্তার উপর ভদ্রলোকের বাসা বাড়ির ময়লা, আবর্জনা ফেলা যেন ভদ্রলোকের ফ্যাশন! এই ময়লা যারা ফেলে তারা নিজেরাই নাক চেপে ধরে ছি ছি করতে করতে পাশ দিয়ে হেঁটে যায়! বড়ই আজব! অথচ ময়লার মালিক নিজেরাই সুন্দর করে ময়লা ব্যবস্থাপনা করতে পারে নিজের এখতিয়ারের মধ্যে। 
ময়লা ফেলছে রাস্তায় এবং স্তূপ হতে হতে রাস্তার মাঝ বরাবর চলে যায় তবুও ময়লা ফেলতেই থাকে। ময়লা কোনো কিছুর ভিতরে রেখে মুখ বন্ধ করে রাখলে গন্ধ ছড়ায় না, ময়লা দেখাও যায় না। বিশেষ করে ময়লা ফেলার জন্য সীমিতভাবে পলিথিন ব্যাবহার করা যায়। পলিথিন ব্যাগের ভিতর ময়লা রেখে মুখ বন্ধ করে রেখে দিয়ে দেখুন গন্ধ কি বেরোয় না কি পরিবেশ নোংরা করে। (পলিথিন ব্যাগে যার যার বাসার সামনে ময়লা রেখে দিলে বুঝাও যাবে না গন্ধও লাগবে না। সিটি বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করে নিবে।) অর্থাৎ আমরা নিজেরাই ময়লা আবর্জনার উৎপাদন বা তৈরি করে, নিজেরাই নোংরা করে সরকারকে গালি দিয়ে থাকি! এভাবেই বিশাল নাগরিক দায়িত্ব পালন করি! 
 
অট্টালিকা তৈরির ইট, বালি, পাথর, রড ইত্যাদি বেচারা রাস্তার উপর রেখে দেয় এবং কিছু বলাও যাবে না। কারো ক্ষতি হলে হবে, রাস্তায় জট লাগুক, মানুষের অসুবিধা হোক কিন্তু যিনি বা যারা বাড়ি করতে এসব রাখেন তারা কিন্তু মনে মনেও বিরক্ত বা দুঃখিত বা লজ্জিত হোন না। কারণ রাস্তায় রেখেছে! সচেতন দোকানের মালিক ফুটপাতে দোকানের জিনিসপত্তর রাখে এমনভাবে যে পথচারী যেতে পারে না এবং সে দোকানের ক্রেতাও আসতে পারে না! তথাপি দেখানোর জন্য সে রাখে! এটা কি অভ্যাস বা মানসিকতা! গ্রামের দিকে রাস্তার উপর ধান, খড়, পাট, মরিচ ইত্যাদি শুকাতে দেয়। দুর্ঘটনা ঘটে। 
 
রাস্তার পাশে গাড়ির বা বাইকের ডেকোরেশন বা মেরামত শপ করে কিন্তু অন্তত একটা গাড়ি নিজের দোকানে রেখে কাজ করবে এমন জায়গা রাখে না এবং রাস্তার উপর রেখেই ডেকোরেশন, মেরামত ইত্যাদি করে। কিছু বললে ঝগড়া করে দারুণভাবে!  
 
রিকশা, ভটভটি, নসিমন, অটো, ইলেকট্রিক রিকশা, ভ্যান ইত্যাদি যারা চালায় তারাও রাস্তার বাম সাইড বাদ দিয়ে দ্রুতগামী লেন দিয়ে চলে! কিন্তু বলা যায় না, ঝগড়া করে! পিছনে দ্রুতগামী যান নিয়ে ভদ্রলোক ধীরে ধীরে যায়! মহাসড়কে সব থেকে ধীরে চলা গাড়ি একেবারে দ্রুতগামী লেন দিয়ে চালায় লাইসেন্স পাওয়া গাড়ি চালকরা! এরা রাস্তায় চলার নিয়ম নয়, নিজের ব্যক্তিগত মানে মুই কি হনুরে সেন্স প্রয়োগ করে! বাধ্য হয়ে বিপজ্জনকভাবে সামনে যেতে হয়। এর ফলে দুর্ঘটনা ও যানজট হচ্ছেই। এই অভ্যাস আরো কিছু যানের যেমন, কার, হিউম্যান হলার, টেম্পু, বাস, ট্রাক, মালবাহী গাড়ি ইত্যাদির আছে। টেম্পু, বাস ও হিউম্যান হলার চালকদের অভ্যাস আরো বাজে, এরা যাত্রী নামানো ও উঠানোর জন্য রাস্তার উপর একটা লেন দখল করে দাঁড়ায় এবং মোড়ে এমনভাবে দাঁড়িয়ে অবস্থান করে ফলে কোনো যান যেতে পারে না। অথচ পাশেই বাসস্ট্যান্ড। আবার বাসস্ট্যান্ড যারা নির্ধারণ করেছেন তারাও আরেক কাঠি সরস যে, এমনভাবে বাসস্ট্যান্ড করেছে সেখানে একটা গাড়ি দাঁড়ালে জট লেগে যায়, বিশেষ করে কোনো রাস্তা এসে প্রধান রাস্তায় মিলে গেছে এবং সে রাস্তা থেকে বামে মোড় নিয়ে সেই প্রধান রাস্তায় উঠবার ঠিক মোড়েই বাসস্ট্যান্ড! এমন হলে কোনো গাড়ি প্রধান রাস্তায় যেতে পারবে না বাস্তবে যায় না, দাঁড়িয়ে থাকে বা প্রধান রাস্তার মাঝ বা ডানের লেনে যেতে হয় তখন প্রধান রাস্তায় যানজট সৃষ্টি করে। আবার বাস স্ট্যান্ডে বাস দাড়ানোর সময় চালকরা মেনে চলে না। ফলে একটা বাসস্ট্যান্ডে যখন দুলতে থাকে মানে একবার এক ইঞ্চি সামনে যায় আবার এক ইঞ্চি পিছনে আসে এভাবে দুলেদুলে যাত্রীদের সান্তনা দেয়। এমন অবস্থায় পরের বাস এসে জায়গা পায়না ফলে রাস্তায় বন্ধ করে। তখন পিছনের বাস ডানে মোড় নিয়ে পুরো রাস্তার উপর ত্যাড়া হয়ে যায় এবং পুরো রাস্তায় চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবুও সামনের চালক নড়ে না। তবে যেই দেখে একই লাইনের আরেকটা বাস আসে বা আগে যায় তখন চালক আচমকা দ্রুত চালায় এবং নানান বাজে ঘটনা ঘটায়। বাসস্ট্যান্ডে অহেতুক সময় নিয়ে বাস দাঁড়িয়ে থাকলে যাত্রীরা রাগ করে, বকা দেয়, অনেকে বাস থেকে নেমে যায় বিরক্ত হয়ে। এই অসভ্যতা যাত্রীদের সাথে চলছে যুগের পর যুগ ধরে। বাসের, টেম্পুর যাত্রীদের মানুষ মনে করা হয় না অন্যান্য পরিবহনের মতো মাল মনে করে। ধাক্কা দিয়ে তোলে (যাত্রী নিজেই জোর করে ঠেলে ওঠে), ঠেলে ঠেলে প্যাক করে আবার ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয়। কিছু বললেই এমন অকথ্য ভাষায় ঝগড়া শুরু করে যে লজ্জায় আর কেউ কিছু বলে না। অনেককে রাস্তার মাঝখানে নামিয়ে দেয়। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটছে, নারী যাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা করছে। অর্থাৎ সেবা প্রদানকারী যানবাহন প্রতিষ্ঠানের নিরপত্তা, ভদ্রতা, সুবিধা, নীতি, আদর্শ ও সততার সাথে সেবা দেবার মত মানসিকতা তৈরি করা হয় নি এই বড় সেক্টরে। এই সেবা সেক্টরের মালিক অর্থাৎ যানবাহনের মালিকের দায়িত্ব সেবার উন্নত মান নিশ্চিত করা। এরপর মালিক সমিতি, চালক সমিতি, শ্রমিক সমিতি, ইউনিয়ন কত কি প্রচন্ড ক্ষমতাবান প্রফেশনাল সংগঠন আছে তাদের দায় যে পেশার মানোন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা সেটা করেনি; বরং তারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে বিশ্রী কিছু পুষে রেখেছে। এই সংগঠনগুলো দায় এড়াতে পারে না। এজন্য সেবা সেক্টরের এই খাতের কর্মীদের সেবাপ্রদানের স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার দিকে নজর দেবা জরুরী। এ খাতে সেবা পেতে মানুষ এসবের জন্য অর্থ খরচ করছে এবং করবে।  
 
ঢাকা বা কোনো শহরের রাস্তায় আপনি আছেন ত কী দেখছেন? দেখেছেন চালকরা ইচ্ছেমত লেন পরিবর্তন করছে, গাড়ির সামনের অংশ একদিকে তো পিছনের অংশ আরেক দিকে  মানে ত্যাড়া। হঠাৎ করেই ডান বা বাম পাশ দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এক গাড়ির গা ঘেঁষে মানে ইঞ্চিখানেক ফাঁকা রেখে আরেক চালক গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছে। সে নিজে বা যাত্রী কেউই বের হতে পারবে না। জরুরী হলে গাড়ি এদিক সেদিক নিতেও পারবে না। সে প্রফেশনাল ড্রাইভার বা শিক্ষিত কোন সেলফ ড্রাইভার, রাস্তায় এলে এমনই হয়!
 
মোটর বাইকের বেপরোয়া চলাচল তো জীবন শেষ করে দিচ্ছে! এদের সবথেকে ভয়ংকর অভ্যাস হলো হর্ন বাজানো। পুরো শহর ঘুরলে ১/২ বারের বেশি হর্ণ বাজানো লাগবে না। কিন্তু ফাঁকা রাস্তা দিয়ে গেলেও হর্ন বাজায়। এটা যে পথচারীর কানের ক্ষতি করছে। বাসার পাশ দিয়ে রাস্তা এবং সে রাস্তায় মোটর সাইকেল চালিয়ে কেউ গেলে বুঝা যায় হর্ন কাকে বলে! মোটর বাইকের মালিক ও চালক সবাই শিক্ষিত ভদ্র লোক। তথাপি হর্ন বাজিয়ে অন্যের ক্ষতি করার কাজ করে চলেছে নির্দ্বিধায়।  
 
শুধু মোটর বাইক নয় অন্য যানবাহনের চালকরা প্রয়োজন না হলেও হর্ন বাজাবে। রাস্তায় কোন কিছু না দেখা গেলেও হর্ন দেয়, কয়েক সেকেন্ড দাড়ালে হর্ন দেয়, ওভার টেক করবে না তবুও হর্ন দেয়, পাড়ায় চলা বাইক ও গাড়িগুলো একেবারে মানুষের গায়ের কাছে এসে হর্ন দেয় (যারা হর্ন দেয় না তারা না কি গাধা) অর্থাৎ কানের বারোটা বাজিয়ে দেয়। কোন কোন ধরনের হর্ন বাজানো নিষেধ, কোথায় কোথায় হর্ন বাজানো নিষেধ এসব কেউই মানে না কারণ না মানলে কোন শাস্তি হয় না। আইন প্রয়োগে শিথিলতা যেহেতু প্রমাণিত সেহেতু যানবাহনের মালিক, চালক ও কর্মীরা নিজেদের সৎ ইচ্ছা, আন্তরিকতা এবং দয়া দিয়ে সুন্দর ও শৃংখলা পরিবেশ তৈরি করতে পারে। যেমন গাড়িতে থাকা ভদ্রলোক যদি হর্ন বাজানো অভ্যস্থ ড্রাইভারকে বলে দেয় যে, 'আমি যতক্ষণ গাড়িতে আছি হর্ন দিবে না।' বাইকে চালানো শিক্ষিত ভদ্রলোক যদি ভাবেন যে হর্ন দিয়ে অন্যের ক্ষতি করব না তাহলেও একটা কল্যাণের কাজ হয়। 
 
আরো করুন লাগে যখন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ট্রাফিক পুলিশ হাত তুলে যানবাহন চলাচল ঠিক করে সেই ব্যক্তিটির ঠিক পিছনে গিয়ে হর্ন দেয়! এতটা নিষ্টুর কেন? পুলিশের উচিত শাস্তি দেওয়া, কিন্তু উদারতা দেখায়। আর সে সুযোগে আরো খারাপ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এসব বিষয়ে ছাড় দেওয়ার পরিণতি যে কত খারাপ সে তো পুলিশ নিজেই ভুক্তভোগী। দেখুন মহাখালী ফ্লাইওভার এর দুইপ্রান্তে ঠিক ওঠবার ও নামার মুখে রাস্তার মাঝখানে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলে চালক (এ কারণে যাত্রী সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে) এটা বন্ধ করার জন্য পুলিশকে নানান সময়ে সচেতন নাগরিক বলেছিলেন, পুলিশ নিজেও দেখেছে কিন্তু কোনো প্রতিকার মেলেনি শেষে সেখানেই এক পুলিশ সদস্যের বাস চাপায় করুন মৃত্যু হয়েছে! তবুও তথৈবচ। 
 
এখন দেখা যাচ্ছে কে কাকে কি বলবে, কেই বা মেনে চলবে এবং কে বা মানাবে অবস্থা হয়েছে। যে মানুষগুলো নিজের সামান্য স্বার্থ নিয়ে দারুণ সোচ্চার সেই মানুষগুলো রাস্তায় এলে যেন আরো বেশি স্বার্থ নিয়ে কঠোর হয়ে যায় যে এক ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে  দিতে রাজি না, 'এটা রাস্তা আমার অধিকার আছে আমি এমন ভাবেই যাব, হর্ন দিব, দাঁড়াব পারলে যা ইচ্ছা করেন।' 
 
গাড়ির মালিক, চালক ও যাত্রীদের এরকম আচরণ পক্ষান্তরে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনাচার এর উপর দারুন কুপ্রভাব যে ফেলেছে এটা সত্য। অপরদিকে এধরনের অসভ্য, ত্যারামো আচরণ আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দুর্বলতাকে তুলে ধরে যা শুধু নিজের সুবিধাকে প্রাধান্য দেয়, অপরের মর্যাদা, সম্মান ও শ্রদ্ধা দেয় না, দিতে জানে না। কিছু লোক নাগরিকদের হেয় করছে, তাদের কারণে নাগরিক বিরক্ত হচ্ছে, জীবন চলে যাচ্ছে, অসুস্থ হচ্ছে, কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। 
 
কোন ধরনের যানবাহন রাস্তায় চলবে সেটা ঠিক করে বিআরটিএ-কে গাড়ি চালাবে সেটাও ঠিক করে বিআরটিএ, কোনো গাড়ি রাস্তায় চলতে দিবে না, ডাম্পিং করবে সেটাও দেখে বিআরটিএ। ভালো মন্দ, যোগ্য অজোগ্য যে ধরনের গাড়ি রাস্তায় চলুক না কেন দায় বিআরটিএ-র। মোটর সাইকেল, সিএনজি, অটোরিকশার ক্ষেত্রেও বিআরটিএ। অর্থাৎ বিআরটিএ-র দায় দায়িত্ব পরিবহন বা যানবাহন সেক্টরে সুশৃংখল প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এজন্য সরকার জনবল, অবকাঠামো, বাজেট এবং আইন দিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে কোনো ঘাটতি নেই। 
 
একইভাবে রিক্সা ও ভ্যানের লাইসেন্স দেয় পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন। রিকশা ভ্যান অতিরিক্ত সংখ্যায় হবে না কম হবে, রাস্তার নিয়ম কানুন না মেনে বিশৃংখলা জন উৎপাত করবে কি না এসব দেখার দায় ও দায়িত্ব সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার। তাদের অধীন এলাকার রাস্তার শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব তাদের। এই কর্তৃপক্ষ বেশ দাপটের সাথেই বাংলাদেশে বিরাজ করছে, তারা নিজেরা আয় করে আবার সরকার আইন ও অর্থ দুটোই দিয়েছে, আন্তর্জাতিক সাহায্য ইত্যাদির ব্যবস্থাও সরকার করে দিয়েছে। অর্থাৎ সব কিছু ষোল আনা আছে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার। ইচ্ছা করলে সুন্দর ব্যবস্থাপনা দেখিয়ে দিতে পারে। এ জন্য পুলিশ বা সরকারের অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে থাকে। 
 
শুধু ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েই ৯৯% শৃংখলা রক্ষা করা সম্ভব ডিজিটাল এই যুগে। বিআরটিএ-এর গাড়ির নম্বর প্লেট এবং চালকের লাইসেন্স এই দুটোতে যানবাহন চলাচল আইন প্রয়োগকারী (বিআরটিএ, পুলিশ) সংস্থার যোগ থাকতে হবে এবং তথ্য শেয়ার থাকতে হবে। যেন আইন ভঙ্গ করলে গাড়ির নম্বর প্লেট দিয়েই সব বের করে শাস্তি দেওয়া যায়। কারণ গাড়ী আসল, গাড়ি না হলে ড্রাইভার, আইন, কানুন কিছুই থাকবে না। অর্থাৎ প্রথম দায় গাড়ি মালিকের। কোন ঘটনায় তাৎক্ষণিক ধরা না গেলে সিসি টিভির ক্যামেরায় প্রাপ্ত গাড়ির নম্বর অনুযায়ী মালিক খুঁজে বের করে নোটিশ ইস্যু করবে কর্তৃপক্ষ। সেখানে দিন তারিখ সময় লেখা থাকবে এবং বলা হবে এই সময় যে গাড়ি চালাচ্ছিল তাকে হাজির করতে। তাহলে শৃংখলা রক্ষা হবে। 
 
সড়কে শৃংখলার জন্য যানবাহন মালিক এবং ব্যবহারকারী বিশেষ করে যাত্রীদের সদিচ্ছা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যিনি গাড়ির মালিক তিনি ড্রাইভার নিযুক্ত করেন তিনি কখনোই চান না তার ড্রাইভার যখন তখন ট্রাফিক রুল ভঙ্গ করুক, গাড়ি ও সে আটক থাকুক, শাস্তি পাক বা জরিমানা দিক। গাড়ি চালকও চায় না জরিমানা দিয়ে আয় শেষ করতে। তাহলে রাস্তার শৃংখলা রক্ষায় রাস্তার নিয়ম কানুন মেনে চলতে সমস্যা কেন? যে নিয়ম কানুন সুরক্ষা দেয় সেটা মেনে না চলার মধ্যে কোন বাহাদুরি নেই। গাড়িতে যে মালিক বা যাত্রী থাকেন তিনি যদি ড্রাইভারকে বলেন লেন মেনে গাড়ি চলবে, নিরাপদ দুরত্ব রেখে গাড়ি দাঁড় হবে, হর্ন বাজবে না, ত্যাড়া করে গাড়ি দাঁড় হবে না, তারাহুরো চলবে না। অন্যকে বিরক্ত করে এমন কিছু করা যাবে না। তাহলেই যেমন গাড়ি মালিকের রুচি ও ভাবমূর্তি প্রকাশ পায় তেমনি শৃংখলা রক্ষা হয় এবং নাগরিক বিরক্ত হয় না। কোন মালিক চায়না ঘষা লাগতেই গাড়ীর বারোটা বাজিয়ে ড্রাইভার গাড়ি এনে হাজির করুক। আর যদি আসেও মালিক কি তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে! মনে হয় মালিক খুব পছন্দ করে নইলে ৯৯% গাড়ি ঘষা খাওয়া কেন? যারা যাত্রী তাদেরকেও একই কাজ করতে হবে ড্রাইভারকে বাধ্য করতে হবে নিয়ম মেনে চলতে। যাত্রীকে যেন আলু পটোলের মত কোন প্রোডাক্ট মনে না করে যা ইচ্ছা ব্যাবহার করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে যাত্রীকে। 
 
আরেকটা বিষয় নতুন ও পুরাতন যানবাহন সড়কের শৃংখলা রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। নতুন যানবাহন দ্রুত  নষ্ট হোক এটা মালিক চালক চায় না। তাই সাবধানে চালায়।  অপর দিকে পুরনো যান হলে ইচ্ছেমত ঘষা, ধাক্কা ইত্যাদি লাগানো হয় এতে ধরার উপায় থাকেনা বিধায় মালিক ড্রাইভারকে কোনো শাস্তি দিতে পারে না। তাই অন্তত শহরের রাস্তায় পুরনো গাড়ি না রাখায় উত্তম হবে। 
 
পরের চিত্র দেখুন রাস্তা খোড়াখুড়ি এই চিত্র প্রায় শহরের এবং অতিপুরাতন। যুগের পর যুগ মানুষ বিরক্ত হচ্ছে, গালি দিচ্ছে। যারা খোড়াখুড়ি করে তারাও আছে। প্রতিবছর রাস্তা খুড়বে ভোগান্তি থাকবে। এটাই যেন শহরের সংস্কৃতি। ওয়াসা, টেলিযোগাযোগ দপ্তর, বিদ্যুৎ দপ্তর, গ্যাস দপ্তর এরা রাস্তা খুড়ে বিদীর্ণ করে। এই দপ্তরের লোকজন জনগণের অর্থে কিন্তু প্রায় প্রতিবছর উন্নত দেশে গিয়ে দেখে আসে বা জ্ঞান অর্জন করে আসে (প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরিত পত্রে এমনই লেখা থাকে।) সদাশয় সরকার জনগণের সুখ ও শান্তির কথা চিন্তা করে অনুমতি দেয় আশায় থাকে উন্নত শহরের মতই এরাও ব্যবস্থা করবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন দেখা গেছে, যাচ্ছে এবং যাবে। এর মূল কারণ আইন ও আর্থিক তথা সক্ষমতা নয়। কারণ হচ্ছে কর্তৃত্ব ও মানসিকতার। একেকটা কর্তৃপক্ষ কে কার থেকে বড়, কার ক্ষমতা বেশি এসব মুখ্য ভূমিকা পালন করে। নইলে এরা সুসমন্বয় করে অর্থসাশ্রয় করে এবং গণউপদ্রব বা নাগরিক বিরক্তির জন্ম না দিয়েই নিজেদের কাজ সম্পাদন করতে পারত। কিন্তু আগে কখনো করে নি। আর আগের দৃষ্টান্ত বলে দিচ্ছে ভবিষ্যতেও করবে না। অদ্ভুত ব্যাপার হলো এরা নাগরিকদের বিরক্ত করে আর সিটি বা পৌর নির্বাচনে প্রার্থীরা সুখে রাখার ওয়াদা করে! শেষে ভোটারের কাছে ওয়াদা ভঙ্গকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়! কার দোষে কার কপাল পুড়েছে! নীতি কথা বা নসীহত করে এদের ক্ষমতার ও কর্তৃত্বের সংঘাত থামানো যাবে না। বরং এদেরকে এক ড্রেনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এজন্য ড্রেনগুলো সে রকম গভীর, প্রশস্ত এবং স্তর সম্পন্ন করতে হবে। যেমন উন্নত দেশে দেখা যায়, তাদের ড্রেন বা টানেল প্রযুক্তি ব্যাবহার করা যায়। এভাবেই সংস্থাগুলোর মধ্যেকার কর্তৃত্বের মানসিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।   
 
বিদেশিদের বাংলাদেশে আসবার যে আমন্ত্রণ আমরা করি, কিন্তু তাদেরকে এরকম অসভ্য আতিথেয়তা কি দিব আমরা? আমাদের আতিথেয়তার যে পুরনো সুনাম শুধু বসতে আর খেতে দেবার না কি আরো অনেক অনুসঙ্গ যোগ হয়েছে, বিশ্বের সাথে লীন হয়েছে সেগুলো একত্রে ভাবতে হবে। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পোক্ত করতে নাগরিক সেবা, নাগরিক তুষ্টি এবং নাগরিকের ব্যাবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি সেদিকে নজর দিতেই হবে। নইলে শুধু আচরনিক কারণে বিশ্বের অনেক উন্নয়ন ধ্বংস হয়েছে সে রুপ কিছু বাঙালীর জীবনে ঘটুক নিশ্চয় আমরা চাই না। 
দেশকণ্ঠ/আসো
 

  মন্তব্য করুন
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।