মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : এ যেন অনুমিতই ছিল। শুধুমাত্র ঘোষণাটাই কেবল বাকি ছিল। সেটাও এলো গতকাল দুপুরে। সাবেক অধিনায়ক ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ছাড়াই আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক প্যানেল।
টানা তিনদিন দুইজনের কথার পর অনেকটা ইতি ঘটেছে এই ব্যাটারের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার। অথচ মাঠ থেকে রিয়াদকে বিদায় দেবার কথা বলেছিলেন খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বিশ্বকাপের দল ঘোষনা করার একদিন আগেও তিনি জানাতে পারেননি রিয়াদ বিশ্বকাপের দলে থাকবেন কিনা। তার আগেরদিন জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও একই কথা বলেছিলেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ গুরুত্বপূর্ন ক্রিকেটার হলেও দলে তার জায়গা পাওয়ার বিষয়ে পরিস্কার কিছু বলেননি সাবেক এই অধিনায়ক। ক্রিকেট বোর্ডের অতি গুরুত্বপূর্ণ এই দুজনের কথার পর আর রিয়াদের জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে আশার কিছু পাওয়া যায়নি। সে হিসেবে এখন আর মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার বিষয়টিও তাই ঝুলে গেল। এর আগে এশিয়া কাপ শেষ হওয়ার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষনা দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। সে কারণে এবার তিনি দলে ছিলেন না।
বলা যায় মুশফিক-রিয়াদ কারোরই আর মাঠ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কুড়ি ওভারের ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়া হলোনা। টি-টোয়েন্টি থেকে এখন পঞ্চপান্ডবের মধ্যে বাকি রইলেন কেবল সাকিব আল হাসান। এই বাহাতি অলরাউন্ডার এখন টেষ্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক। বিশ্বকাপের দলেও সিনিয়র বলতে কেবল এই সাকিবই রয়েছেন। দলে ফিরেছেন লিটন দাস, নুরুল হাসান সোহান, ইয়াসির আলি চৌধুরি রাব্বি, হাসান মাহমুদ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। আর সর্বশেষ খেলা এশিয়া কাপ থেকে বাদ পড়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, এনামুল হক বিজয়, মুশফিকুর রহিম, পারভেজ হোসেন ইমন ও শেখ মেহেদি হাসান। যদিও মেহেদিকে বিশ্বকাপের জন্য স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত থাকা বাকিরা হলেন, শরিফুল ইসলাম, সৌম্য সরকার ও রিশাদ হোসেন। বিশ্বকাপের দল ঘোষনার আগে নাটক বেশ জমে উঠেছিল। গল্পের নায়ক-খলনায়ক দু’জনই ছিলেন টি-টোয়েন্টির সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নেতৃত্ব হারিয়েছেন আরও আগেই, বিশ্বকাপ দলেও নাকি রাখা হচ্ছে না তাকে, এমনটা শোনা গিয়েছিল। এই ক্রিকেটারের ভাগ্যে কি আছে, সেই সংশয় ছিল।
তাহলে কি নীরববেই রিয়াদ অবসরে যাবেন? অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে। দেশের আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম সমালোচনা সইতে না পেরে হঠাৎ করে টি-টোয়েন্টি থেকে আবসর নিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি হয়তো বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে যাবেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন মুশফিক। তার কাছে মনে হয়েছিল, বিশ্বকাপের দলে থাকবেন না এই উইকেটিকিপার ব্যাটসম্যান। মুশির বিষয়টি ভালো লাগেনি বিসিবি সভাপতির। তিনি বলেন, ‘মুশফিক মাঠের বাইরে থেকে অবসর নিয়েছে, এটা আমাদের কাছে খারাপ লাগে। আমি শেষ দিন পর্যন্ত বলে যাবো মুশফিক আমাদের সেরা ব্যাটার।’ অভিষেকের পর থেকে ১৫ বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের হয়ে ১২১ ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ২৩.৫৭ গড়ে ২ হাজার ১২২ রান করেছেন সাবেক এই টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। তবে বয়স যত বেড়েছে পারফরম্যান্সের ততই অবনতি হয়েছে। সবশেষ ১৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৮.৪ গড়ে ২৬১ রান করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার, যেখানে স্ট্রাইকরেট ছিল ১০১.৫৫। আর এই কারণে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল থেকে বাদ পড়া অনেকের কাছেই ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অনেকেই ধারণা করছেন, বিশ্বকাপে না হলেও নিউজিল্যান্ডে আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজে তার অবসরের ঘোষণা আসতে পারে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে রিয়াদ কি থাকছেন? বড় এই প্রশ্নের উত্তরে রহস্যই ছিল গত কয়েকটা দিন। টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরণ শ্রীরাম ছুটি শেষে ঢাকায় এসে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে মিরপুরে প্রথম অনুশীলন করান টি-টোয়েন্টি দলের সম্ভাব্যদের নিয়ে। ছিলেন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও। গ্যালারিতে বসে পর্যবেক্ষণ করেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। ম্যাচ পরিস্থিতির অনুশীলনে দুটি ভিন্ন ভূমিকায় ব্যাট করতে দেখা যায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। প্রথম দফায় নিচের দিকে সøগ ওভারে নেমেছিলেন। পরের দফায় পাওয়ার প্লেতে নেমেছিলেন তিনি। প্রথম সাত নম্বর পজিশনে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সঙ্গে স্লগ ওভারের পরিস্থিতিতে নামেন রিয়াদ। শ্রীরাম ফিল্ডিং পজিশন সাজিয়ে শেষ ছয় ওভারের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেন। মাহমুদউল্লাাহ রিয়াদ অবশ্য সেবার থিতু হতে সময় নিয়েছেন। পরে মেরেছেন এক চার ও এক ছয়। এরপর ওপেনারের ভূমিকায় সৌম্য সরকারকে নিয়ে নামেন তিনি। তিন দফায় তিনটি বড় শট খেলেন রিয়াদ। প্রতিবার এক ওভার করে সুযোগ পান তারা। প্রথমবার সৌম্য খেলতে পারেন কেবল এক বল, এক রান নিয়ে মাহমুদউল্লাহকে স্ট্রাইক দেওয়ার পর বাকি পাঁচ বল খেলে তিনি মারেন এক বাউন্ডারি। পরের দফায় সৌম্য এক চার, এক ছয় মেরে রিয়াদকে দিলে তিনিও মারেন এক ছয়। শেষ দফায় মাহমুদউল্লাহ এক চার মেরে সৌম্যকে স্ট্রাইক দিলে তিনি মেহেদী হাসান মিরাজের বলে আউট হয়ে আবার সুযোগ পেয়ে বাকি ২ বলে তুলেন চার রান। আসলে এসব কিছু ছিলনা।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে যে বিশ্বকাপের দলে রাখা হবেনা এমনটা আগে থেকেই ধারনা পাওয়া গিয়েছিল। তাকে বাদ দিয়েই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য আজ ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে নুরুল হাসান সোহানকে। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে একটি অর্ধশতক পেয়েছিলেন তখনকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। এর পর থেকেই এ সংস্করণে ছন্দে নেই তিনি। বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৬.৫৪ গড় ও ১০২.৮২ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন এ ব্যাটসম্যান। এশিয়া কাপের দুই ম্যাচে ২০ পেরিয়েছেন, তবে এক ম্যাচে স্ট্রাইক রেট ছিল ৯২.৫৯, অন্যটিতে ১২২.৭২। ২০০৭ সাল থেকে এ সংস্করণে খেলেছেন রিয়াদ। এবার তাকে বিদায় বলতে হচ্ছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), সাব্বির রহমান রুম্মান, মেহেদী হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, লিটন কুমার দাস, ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি, নুরুল হাসান সোহান (সহ-অধিনায়ক), মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন চৌধুরী, হাসান মাহমুদ, নাসুম আহমেদ, নাজমুল হোসেন শান্ত।
স্ট্যান্ডবাই : শরীফুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন, শেখ মেহেদী হাসান, সৌম্য সরকার।
দেশকণ্ঠ/আসো