মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : ২০১৬ সালের সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বশেষ ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। সেবার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হতে হয়েছিল। ৬ বছর পর আবারো শিরোপা জয় থেকে এক ম্যাচ দুরে সাবিনা খাতুনের দল। তবে এবার প্রতিপক্ষ ভারত নয়, নেপাল। অর্ধ যুগ আগের মতোই এবারো লাল-সবুজের দলকে লড়তে হচ্ছে আরেক স্বাগতিক দলের বিপক্ষে। সেটাই দলের জন্য বড় টেনশনের নাম। কারণ নেপালের বিপক্ষে জয়ের মতো পরাজয়ের রেকর্ডও রয়েছে বাংলাদেশের। স্বাগতিক হিসেবে তারা এগিয়ে থাকবে, তবে বাংলাদেশ এখনো নারীদের সাফে অপরাজিত দল।
আসরে সবচেয়ে বড় কথা এখনো কোন গোল হজম করেনি গোলাম রব্বানী ছোটনের শীষ্যরা। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফুটবল খেলা দলটির কাছে শিরোপা চাওয়াটা তাই বাড়াবাড়ি কিছু হবে না। কোচ থেকে শুরু করে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা এবার শিরোপা জিতেই দেশে বিমানে উঠতে চান। তাইতো বলাই যায় শিরোপা জয় করা ছাড়া অন্য কিছু ভাবছেনা বাংলাদেশ দল। এর আগে ভুটানের জালে গোল উৎসব করে ফাইনাল নিশ্চিত করেছেন নারী জাতীয় দল। গ্রুপ পর্বে ১২ গোল করার পর এবার সেমিফাইনালে করলেন আট গোল। চার ম্যাচে ২০ গোল করা বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে এবার নেপাল। গত বৃহস্প্রতিবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক নেপাল।
এর আগে প্রথম সেমিফাইনালে বাংলাদেশ ৮-০ গোলের বড় ব্যবধানে ভুটানকে হারিয়ে ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে। এই প্রথমবার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেই ভারত। আগের পাঁচবার তারা কেবল ফাইনাল খেলেনি, ট্রফিও ঘরে নিয়ে গেছে। প্রথমবার ভারতহীন ফাইনাল দেখতে যাচ্ছে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। এর আগে নেপাল চারবার এবং বাংলাদেশ একবার রানার্সআপ হয়েছে মেয়েদের সাফে। ফাইনাল নিশ্চিত করার পর ভুটানের বিপক্ষে জয়টা কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনকে উপহার দিলেন সাবিনা খাতুনরা। বাংলাদেশ অধিনায়ক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ’ছোটন স্যার আমাদের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। তারই ফল এখন আমরা পাচ্ছি। আমরা এই জয়টা স্যারকে উৎসর্গ করছি।’ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ভারত ও ভুটানকে বড় ব্যবধানে হারিয়েই কোনো উৎসব করতে রাজি নন। ট্রফি হাতে নিয়েই চূড়ান্ত উৎসব করতে চান সফল এই কোচ। ফাইনালে আগে ছোটন বলেন, ’সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে গত ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয়ের পর মেয়েদেরকে স্যালুট দিয়েছিলাম। আমার প্রথম লক্ষ্য ছিল ফাইনাল। সেটা পূরণ হয়েছে। এবার ট্রফি জিতে দেশে ফিরতে চাই। এরপর চুড়ান্ত উদযাপন করব দলের সকলকে নিয়ে।’
শেষ চারের ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের গোলবার অক্ষত রাখার রেকর্ডটা ধরে রাখলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ২০১০ সালে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানকে গ্রুপ পর্বে ৯-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। ২০১২ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বে ভুটানের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় পান সাবিনারা। ২০১৯ সালের সাফে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ২-০ গোলের জয় পায় বাংলাদেশের মেয়েরা। ভুটানের বিপক্ষে যেমন রেকর্ডটা ধরে রাখার স্বস্তি আছে তেমনে একটা অশ্বস্তিও অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সামনে। নেপালের বিপক্ষে এর আগে কোনো সাফেই জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। ২০১০ সালে সেমিফাইনালে ৩-০, ২০১৪ সালে সেমিফাইনালে ১-০ এবং ২০১৯ সালে গ্রুপ পর্বে ৩-০ গোলে নেপালের কাছে হার স্বীকার করেছেন সাবিনা খাতুনরা। অবশ্য অতীতের এসব বিষয় নিয়ে ভাবছেন না মেয়েদের কোচ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা ছোটন। নেপাল-ভারত ম্যাচের ফলাফল জানার আগেই বলে দিয়েছেন, ‘ফাইনালে যে প্রতিপক্ষই আসুক আমরা তা নিয়ে ভাবব না। আমরা জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে চাই।’ যে কোনো দলকে হারানোর জন্যই প্রস্তুতি সেরে নিয়ে আজকে মাঠে নামছেন গোলাম রব্বানী ছোটনের শীষ্যরা।
এদিকে পরিশ্রম করলে তার যে ফল পাওয়া যায় সেটা আরও একবার বাংলাদেশের মেয়েরা প্রমাণ করেছে। সাফের ফাইনালে খেলা এটাই প্রমাণ করে। নেপালে শেষ ম্যাচের আগে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের মেয়েরা। এর আগে গ্রুপ পর্বে মালদ্বীপকে ৩-০, পাকিস্তানকে ৬-০ ও ভারতকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে ওঠেন সাবিনারা। ভুটানের বিপক্ষে সহজ জয় প্রত্যাশিত থাকলেও বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন তারা। ছয় বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। ভুটানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। বলা যায় প্রতিপক্ষের জন্য মুর্তিমান এক আতংকের নাম হয়ে আছেন এই ষ্ট্রাইকার। এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য সাবিনাদের। সেমিফাইনালে বড় জয় পাওয়ায় স্বপ্নের পরিধি আরও বেড়েছে তাদের। সাবিনা ফাইনালের আগে বলেন, ‘ফাইনালে মাঠে প্রতিপক্ষ হিসেবে নেপাল থাকলে আমরা নিজের সর্বোচ্চটা সব সময় দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। ভুটান গোল হজম করলেও দারুণ খেলেছে তারা। বাংলাদেশের নারী ফুটবল যে উন্নতি করেছে তার চিত্রটা আপনারাই দেখছেন। মাঠ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এটা কারও জন্য নেগেটিভ কারও জন্য পজিটিভ হবে। ভুগবে দুই দলই। ফাইনালে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছিনা আমি।’
২০১৬ সালে আমাদের কাজি সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি হওয়ার পর স্বপ্ন দেখেছিলেন ভালো কিছু করতে গেলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। ২০১৬ অক্টোবরে কম বয়সী মেয়েদের নিয়ে এই ক্যাম্প শুরু হয়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে এএফসি অনূর্ধ্ব ১৬-এর ফাইনাল রাউন্ড পর্যন্ত যেতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সেখানে বাংলাদেশ বিশ^চ্যাম্পিয়ন উত্তর কোরিয়া, রানার্সআপ দক্ষিণ কোরিয়া ও তৃতীয় হওয়া জাপান গ্রুপে ছিল। সেই সব ম্যাচটি দলের জন্য দারুণ অভিজ্ঞতাটা কাজে দিয়েছে। এবারের সাফে দুইটি হ্যাটট্রিক করেছেন সাবিনা খাতুন। সর্বোপরি এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৩২টি গোল করেছেন। এমন দুর্দান্ত পারফম্যান্স ফাইনালেও চায় পুরো বাংলাদেশ। শিরোপা জিতেই দেশে ফিরতে চায় বাংলাদেশ দল। এখন অপেক্ষা সেই মহেন্দ্রক্ষন আসে কিনা, নাকি আবারো হতাশ হতে হয়।
দেশকণ্ঠ/আসো