স্পোর্টস রিপোর্টার : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে শেষ প্রস্তুতির টুর্নামেন্ট খেলে একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে বাংলাদেশকে। নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানকে নিয়ে এই ত্রিদেশিয় সিরিজে চারটি ম্যাচ খেলে কোন ম্যাচ না খেলেই অষ্ট্রেলিয়ার বিমানে উঠতে হয়েছে সাকিব আল হাসানের দলকে। শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে পরাজিত হলেও পুরো আসরে সবচেয়ে ভাল খেলেছে। ১৭৩ রান করে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করতে হয়েছে। তবে হারের বৃত্ত ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি।
বিশ্বকাপে কেমন করবে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কাকতালীয়ভাবে এই সিরিজের নাম ছিল বাংলা ওয়াশ। বাংলাদেশের ডিটারজেন্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটির নামের সাথে মিল রেখে ধবল ধোলাই হয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ বাংলা ওয়াশ নামের সিরিজে এখন বাংলাদেশই বাংলা ওয়াশ। ম্যাচের ১৯তম ওভারে ৬ রান দিয়ে রিজওয়ানের উইকেট তুলে দিয়ে ক্ষীণ একটা আশা জাগিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। তবে শেষ ওভারে সাইফউদ্দিনের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সে আশাটা উবে গেল একেবারে। পাকিস্তানের কাছে এবার ৭ উইকেটে হারল বাংলাদেশ। ১৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান শুরুর দুই ওভারে তোলে ৬ রান। তবে তৃতীয় ওভারে শরিফুল ইসলামকে চার মেরে হাত খোলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তাসকিনের পরের ওভারে বাবরও চার মেরে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন। সই যে দুর্দশার শুরু বাংলাদেশের, তার শেষ হলো না আর। ইনিংসের সপ্তম ওভার পর্যন্ত অন্তত একটি করে চার বের করেছে পাকিস্তান।
এর মাঝে ৪, ৫ আর ৬ নম্বর ওভারে চার এসেছে দুটো করে। অবস্থা বেগতিক দেখে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিজেই আসেন আক্রমণে। সে ওভার থেকে অবশ্য পাকিস্তান কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেনি। তুলতে পেরেছে ৪ রান। সাকিব পাকিস্তানের চার মারায় লাগাম টানতে পারলেও উইকেট ফেলতে পারেননি। হয়নি পরের দুই ওভারেও তাতে পাকিস্তান দশ ওভার শেষে তুলে ফেলে ৭৩ রান। এরপর ১১তম ওভারে রিজওয়ান ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ফাইন লেগে, তবে সাইফউদ্দিন সেটা তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন। এরপরের ওভারে নিজে বোলিংয়ে এসে দেন ১৯ রান। তাতে পাকিস্তান ম্যাচটা দ্রুতই শেষ করে দেওয়ার আভাস দেয়। তবে পরিস্থিতিটা বদলায় ইনিংসের ১৩তম ওভারে। হাসান মাহমুদ সে ওভারের তৃতীয় বলে বদলি ফিল্ডার মোসাদ্দেক হোসেনের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান বাবরকে। এর ঠিক ১ বল পর হায়দার আলীকে দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড করেন তিনি। ১০১ রানে দ্বিতীয় উইকেট খোয়ায় পাকিস্তান। জয়ের একটা ক্ষীণ আশা জাগে বাংলাদেশ শিবিরে। সে আশাটা মিলিয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তান ওপেনার রিজওয়ান আর চারে নামা মোহাম্মদ নওয়াজের ব্যাটিংয়ে।
এই দুজনের ঝোড়ো ৬৪ রানের জুটি ভাঙে ইনিংসের ১৯তম ওভারে। সৌম্য সরকার সে ওভারে ৬ রান দিয়ে ম্যাচটা জেতার একটা সম্ভাবনা তৈরি করেন বাংলাদেশের জন্য। তবে শেষ ওভারে সাইফউদ্দিনের করা একের পর এক শর্ট বলে সে সম্ভাবনাটা মিলিয়ে যায়। সে ওভারে পাঁচ বলে তিনি দেন ১১ রান, ৩.৫ ওভার করে তিনি সর্বমোট দেন ৫৩ রান। পাকিস্তান এক বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয়। গতকাল ক্রাইস্টচার্চে ত্রিদেশীয় সিরিজে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারে ৬ বল খেলে কোনো রান নিতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। ভাগ্যিস নাসিম শাহ প্রথম বলটা ওয়াইড করেছিলেন, না হয় সে ওভারটা মেইডেন হিসেবেই লেখা থাকতো খাতায়। ’অবিশ্বাস্য প্রতিভাধর’ শান্তর ডট খেলার প্রবণতা তো ছিলই, দেহভাষ্যেও মিলছিল না ইন্টেন্টের দেখা। যার চাপটা পড়ছিল সৌম্য সরকারের ওপর। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এরপরও শান্ত ছিলেন খোলসেই, যে কারণে চাপটা ধীরে ধীরে বাড়ছিল বাংলাদেশের ওপর। ওপাশে আসা লিটন দাস খেলছিলেন অবশ্য হাত খুলে। সঙ্গে পাক বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিং বাংলাদেশের কাজটা একটু সহজ করে দিচ্ছিল। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে খোলস ছেড়ে বেরোতে গিয়েই বিদায় নেন শান্ত, ফেরার আগে ১৫ বলে করেন ১২ রান।
ভাগ্য ভালো তার এক বল আগে স্কুপ করে একটা চার আদায় করেছিলেন। নাহয় তার স্ট্রাইক রেটটা যে থাকত আরও নিচের দিকে! দুই ওপেনারকে হারিয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার প্লেতে তোলে ৪১ রান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে সাকিব-লিটন জুটির শুরু। প্রথম দিকে সাকিব একটু নড়বড়ে ছিলেন, লিটনের সঙ্গে একটু ভুল বোঝাবুঝিও হয়ে গিয়েছিল খানিকটা। তবে সেবার ভাগ্যগুণে বেঁচে যাওয়া লিটন এরপর স্বরূপ দেখাতে শুরু করেন। চার-ছক্কা তো আছেই, তা না পেলে অন্তত রানের চাকা অচল হয়ে পড়েনি একটু, এক-দুই রানে ইনিংস গড়ছিলেন সাকিবের সঙ্গে। ৩১ বলে ফিফটি পূরণ করেন লিটন। ৬টি চার আর ২টি ছক্কায় ৬৯ রান করে শেষমেশ থামেন তিনি। ১৩ অক্টোবর তার জন্মদিনটাও রাঙানো হয়ে যায় তাতে। ৫৫ বলে ৮৮ রানের জুটি ভাঙার পর সাকিব অনেকটা একাই লড়েছেন। ৭ ছক্কা আর ৩ চারে ৪২ বলে ৬৯ রান করে সাকিব যখন ফিরছেন, তখন বাংলাদেশের রান ১৬৭। ইনিংসে বল তখনো বাকি ৮টি। পরের আট বল থেকে কেবল ৬ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। যার ফলে সম্ভাবনা জাগিয়েও বাংলাদেশের রানটা আটকে যায় ১৭০ এর ঘরেই। ব্যাটিংয়ে শেষের ব্যর্থতায় যদি রান এত কম না হতো, তাহলে হয়তো ম্যাচের ফলাফলটাও ভিন্ন হতে পারত! সেটা হলে বাংলাওয়াশ সিরিজ থেকে খালি হাতে ফিরতে হতো না বাংলাদেশকে। সান্তনার জয় প্রত্যাশার ম্যাচে সহজ ক্যাচ ড্রপ লাগামহীন বোলিংয়ে ‘খলনায়ক’ হয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
পুরো ত্রিদেশীয় সিরিজে গতকালই সবচেয়ে ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। আলাদা করে বলতে হয় মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের কথা। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ ড্রপ, লাগামহীন বোলিং-সবমিলিয়ে বাংলাদেশের হারে ‘খলনায়ক’ এই অলরাউন্ডার। ১১তম ওভারে একটি নো বলসহ ১৯ রান খরচা করেন সাইফউদ্দিন। পাকিস্তান বাঁচে হাঁফ ছেড়ে। এই সাইফউদ্দিন ম্যাচে ৩.৫ ওভার বল করে খরচ করেছেন ৫৩ রান। উইকেট পাননি একটিও। যার ক্যাচ ছেড়েছেন, সেই রিজওয়ান ৫৬ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৬৯ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ বের করে নিয়েছেন। এদিকে ১৫ বলে ১২ করে ফিরলেন কোচ-নির্বাচকদের কাছে ‘প্রতিভাবান’ শান্ত। তার প্রতিভায় পাহাড়সমান আস্থা টিম ম্যানেজমেন্টের। তবে সেই আস্থার প্রতিদান তিনি দিতে পারছেন খুব কমই। ওপেনিংয়ে নেমে একবার ২৯ বলে ৩৩, আগের ম্যাচে ১২ বলে ১১ আর এবার ১৫ বল খেলে করলেন ১২ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ডট বল খেলাকে বলা হয় এক ধরনের অপরাধ। কিন্তু শেষ ম্যাচেও নিজের উপর আস্থার প্রতিদান দিতে পারেনি।
দেশকণ্ঠ/আসো