মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বকাপের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা। সেই সঙ্গে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি ভরে নেওয়া। নিউজিল্যান্ডে সবম্যাচ হেরে বাংলাদেশ দলের পরীক্ষার খাতায় কত নম্বর যোগ হলো। প্রাপ্তি বলতে গেলে শূন্যই বলতে হবে। তবু দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরামের দাবি, বাংলাদেশ ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলে অনেক কিছু শিখেছে। সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রয়োগ করা হবে এমন বিভিন্ন কম্বিনেশন পরখ করে নেওয়া। পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে চারটি ম্যাচে হেরে ত্রিদেশীয় সিরিজে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শেষ করেছেন টাইগাররা। সবশেষ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে সাকিব বাহিনী। তবে এই ম্যাচে জয়ের দারুণ সুযোগ এসেছিল দলটার সামনে। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ হারলেও দুটিতেই জয়ের সুযোগ ছিল বলে জানিয়ে শ্রীরাম বলেন, ‘বাংলাদেশকে জয়ের জন্য সবকিছু একত্রিত করতে হবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের দুটি সুযোগ ছিল। প্রথম খেলায় আমাদের শেষ দশ ওভারে ১০০ রান করতে হয়েছিল এবং এই খেলায় শেষ দশ ওভারে ১০০ রান রক্ষা করতে হয়েছিল। আমরা কাছাকাছি এসেছি। উভয় খেলায় অল্প ব্যবধান। তবে এগুলো থেকে শেখার বিষয় রয়েছে। ভালো দল ম্যাচের শেষার্ধে এক ওভারে দশ রান স্কোর করে বা রক্ষা করে।’ যা বাংলাদেশের জন্য কিছুটা হলেও হতাশাজনক ছিল। তাইতো বাংলাদেশ এবারের আসরে কেমন করবে সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তবে দলেরও বড় কোন আশা নেই।
পরিসংখ্যান বলছে, এক বছরের মধ্যে আরেকটি বিশ^কাপের লড়াই শুরু হওয়ার অপেক্ষা এখন। অষ্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১৬ অক্টোবর শুরু হতে যাচ্ছে এবারের আসর। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর্দা উঠতে বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। এর মধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে অংশগ্রহণকারী দলগুলো। প্রথম রাউন্ডে অংশ নিবে বাছাইপর্ব থেকে পার হওয়া ৮টি দল। এখান থেকে দুই গ্রুপ থেকে ৪টি দল খেলবে সুপার টুয়েলভে। সবমিলিয়ে পুরো টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে ১৬টি দল। গত বছরই সপ্তম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার অষ্টম আসর মাঠে গড়ানোয় অপেক্ষায় সবাই। প্রস্তুতিতে বড় দলগুলোর মতো ছোট দলগুলোও সমানতালে নিজেদের সামিল করেছিল। বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছিল। স্বাগতিক দলের সাথে বাকি দুটি দল ছিল পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড পাকিস্তানে সিরিজ খেলে প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। ভারত অষ্ট্রেলিয়ার পর দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে কুড়ি ওভারের সিরিজ খেলে। এরপর যদিও ওয়ানডে সিরিজ খেলে শিখর ধাওয়ান ও বাভুমার দল। মারকাটারি ক্রিকেট হিসেবে এখন টি-টোয়েন্টির কদর সবচেয়ে বেশি। আইসিএল দিয়ে ফ্রাঞ্চাইজি লিগ শুরু হওয়ার পর প্রায় সব দেশেই এই লিগ আয়োজন করা হয়েছে।
টেষ্ট খেলুড়ে দেশের পাশাপাশি ’ছোট’ দল হিসেবে নেপালও ফ্রাঞ্চাইজি লিগের আয়োজন করে। ক্রিকেটে তাই টি-টোয়েন্টির কদর সবচেয়ে বেশি। অনেকের কাছে এটি ক্রিকেট নষ্টের মূল কারণ হিসেবে বলা হলেও দর্শকরা এখন মেতে আছে চার ছক্কার লড়াই দেখায়। টেষ্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেরই ভাগ্যে শিরোপা জুটেছে। এর মধ্যে এশিয়ার চার দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া বাকি তিন দেশই শিরোপা উল্লাতে মেতে ওঠার সুযোগ পেয়েছিল। ২০০৭ সালে প্রথম আসরে পাকিস্তানকে ৫ রানে পরাজিত করে প্রথম ও একমাত্র শিরোপা জিতেছিল ভারত। ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আসরে ইংল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে প্রথম আসরে না পারলেও এবার শিরোপা জয় করে। ২০১০ সালে তৃতীয় আসরে ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে শিরোপা জেতে। ২০১২ সালে চতুর্থ আসরে শ্রীলংকাকে ৩৬ রানে হারিয়ে প্রথম শিরোপা দেখা পায় ক্যারিবীয়রা। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ প্রথমবার স্বাগতিক হওয়া আসরে শ্রীলংকা ৬ উইকেটে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৬ সালে ভারতকে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয় করে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। ২০২১ সালে সর্বশেষ আসরে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপার দেখা পায় অষ্ট্রেলিয়া।
এবারের আসরে দল হিসেবে কাউকে এককভাবে ফেবারিট বলার কোন সুযোগ নেই। শিরোপা জেতার জন্য তাই কয়েকটি দলের দিকে নজর থাকবে। প্রস্তুতিতে কোন ঘাটতি রাখতে চায়নি কোন দলই। টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের আগে এবারের আসরের মতো কোনবারই এতটা জোর প্রস্তুতি নেয়নি কোন দলই। তাই তো জমজমাট আসর হবে অজিদের মাটিতে। স্বাগতিক হিসেবে প্যাট কামিন্সের দলের বিপক্ষে বাকি দলগুলোকে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে। কারণ পেস আর বাউন্সি উইকেটে তাদের সাথে কেবল ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড টেক্কা দিতে পারবে। সেখানে এশিয়ার দলগুলোর ভাল করার সম্ভাবনা কমই মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ দলের জন্য তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা বেশ কঠিন খেলা। যা টেষ্টর মতোই। যেখানে ওয়ানডে ক্রিকেটে সমীহ জাগানো দলে পরিণত হয়েছে তামিম ইকবালের দল, সেখানে সাকিব আল হাসানের টি-টোয়েন্টি দলটা বেশ ভঙ্গুর।
বিশেষ করে গত বিশ^কাপের আগে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের পর অষ্ট্রেলিয়াকে সিরিজ হারালেও সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়ে পুরোপুরি ব্যর্থই হয়েছে। বাংলাদেশে সিরিজ হারা দল দুটিই গত আসরের ফাইনালে খেলেছিল। সমালোচনার ঝড় বয়ে যাওয়া মিরপুরের উইকেট নিয়ে চারিদিকে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তাই দল হিসেবে শিরোপা জেতার মতো পরিস্কার ফেবারিট কাউকে বলা যাচ্ছেনা। স্বাগতিক হিসেবে অষ্ট্রেলিয়াকে কিছুটা এগিয়ে রাখার বাইরে খুব বেশি আশা দেখা যাচ্ছেনা অপরাপর দলগুলোর জন্য।
দেশকণ্ঠ/আসো