স্পোর্টস রিপোর্টার : অঘটনের বিশ্বকাপে এবার শিকার হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শ্রীলংকার পর এবার ক্যারিবীয়রা পরাজয়ের স্মৃতি নিয়ে মাঠ ছাড়ল। স্কটল্যান্ডের কাছে ৪২ রানে আসর শুরু করল নিকোলাস পুরানের দল। এর আগে লংকানরা ৫৫ রানে পরাজিত হয়েছে নামিবিয়ার কাছে। প্রথম দুইদিন দুটি বড় দলের পরাজয় যেন অঘটনের বিশ্বকাপে রুপ নিয়েছে এবারের আসর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর শ্রীলংকা বর্তমান এশিয়া কাপ শিরোপাধারী দল। এখন নামিবিয়ার কাছ থেকে টাইগাররা যা শিখতে পারে সেটা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের একার যে ভার আর ধার, তার ধারে কাছেও নেই নামিবিয়া। সাকিব একা যতোগুলো উইকেট পেয়েছেন নামিবিয়ার সবাই মিলেও হয়তো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ততোগুলো উইকেট পায়নি। র্যাংকিংয়েও বাংলাদেশ নামিবিয়ার থেকে পাঁচ ধাপ এগিয়ে। তবে এই পাঁচ ধাপ দিয়ে ঠিক নামিবিয়ার থেকে মাঠের খেলা আর অভিজ্ঞতায় টাইগাররা কতো এগিয়ে তা বোঝা যাবে না। কারণ ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে নিয়মিত খেলা দেশের সংখ্যা গোটা দশেক। আর বাকি যারা খেলে তারা এই খেলাটাকে অতো সিরিয়াসভাবে নেয় না। নামিবিয়াও তেমনই একদল।
তবে সম্প্রতি উত্থান হলেও ক্রিকেট বাংলাদেশের মতো নামিবিয়ায় এতো প্রচলিত ও পরিচিত খেলা নয়। তারপরও নামিবিয়ার কাছ থেকে একটা জিনিস শেখার আছে। সেটা হলো মানসিক দৃঢ়তা আর সাহস। এশিয়া কাপে শ্রীলংকার বিপক্ষের ম্যাচটার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। দারুণ ব্যাটিং করে ১৮৪ রানের টার্গেট দিয়েও বাংলাদেশ সেবার লংকার বিপক্ষে ম্যাচ জিততে পারেনি। কারণ, বোলাররা অদক্ষ, সক্ষমতা নেই? মোটেও না, লঙ্কান ব্যাটারদের কাবু করার মতো যথেষ্ট বোলার ওই ম্যাচে টাইগার শিবিরে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ কেবল মনোবলে পিছিয়ে পড়েছিল। সাকিব তার দলকে সেভাবে ওই ম্যাচে চাঙা রাখতে পারেননি। বোলাররাও নার্ভ ধরে রেখে সঠিক বলটা করতে পারেননি। ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের শেষ ম্যাচেও পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইগারদের একই হাল। ১৭০ পেরোনো টার্গেট দিয়েও তারা ডিফেন্ড করতে পারেনি। কারণ, এতো রান করারও পরও ভাবতে পারেনি যে, পাকিস্তানকে তারা হারাতে পারবে। সাইফউদ্দিন মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচ ছাড়ার পর একরকম নির্বিষ হয়ে গেল বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপ। হাল ছেড়ে দিয়ে যেন হারের প্রস্তুতি নিল সবাই। এক সাইফউদ্দিন নার্ভ ধরে রাখতে না পেরে দিলেন ৩.৫ বলে ৫৩ রান।
যদি এই মিডিয়াম পেসার ৪ ওভারে ৪০ রানও দিয়ে যথেষ্ট খরুচে ওভারও করতেন, তবুও দল জিতে যায়। কিন্তু তিনি হেরে গেলেন মাইন্ড গেমে। কিন্তু এশিয়া কাপ জয়ী উড়ন্ত শ্রীলংকাকে ১৬৩ রানের মাঝারি টার্গেট দিয়ে নামিবিয়া ৫৫ রানের বড় জয় তুলে নিয়েছে। তার মানে কী ওদের বোলাররা টাইগারদের চেয়ে খুব ভালো? মোটেও না, ওরা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা-দুটোতেই মুস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন কিংবা এবাদতদের চেয়ে পিছিয়ে। ওরা কেবল জিতে গেছে মনের জোর আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তায়। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটার সঙ্গে এখনও মানিয়ে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও ফল মিলছে না। বাংলাদেশের জন্য এই ফরম্যাটটা যেন এক ধাঁধার নাম। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কেমন করবে বাংলাদেশ? পরিসংখ্যান কিন্তু খুব বড় আশা দেখাচ্ছে না। লজ্জার ব্যাপার হলো, টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশের চেয়ে পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে এখন জয় বেশি নামিবিয়ারও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলংকাকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দিয়েছে নামিবিয়া। এ নিয়ে টানা দুই বিশ্বকাপে আইসিসির দুই পূর্ণ সদস্যের বিপক্ষে (২০২১ সালে আয়ারল্যান্ড, এবার শ্রীলংকা) জিতলো দলটি। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পূর্ণ সদস্য দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় কেবল একটি। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল টাইগাররা।
এরপর আর কোনো বড় দলকে হারাতে পারেনি। অন্যদিকে শ্রীলংকাকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পূর্ণ সদস্য দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ম্যাচ জিতলো নামিবিয়া। জিম্বাবুয়ের জয় একটি, আফগানিস্তান আর আয়ারল্যান্ডেরও পূর্ণ সদস্যের বিপক্ষে বিশ্বকাপে আছে দুটি করে জয়। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি কি অঘটনের টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে? দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রীতিমত নাকানি চুবানি খাইয়ে জিতলো স্কটিশরা, জয়টা ৪২ রানের বড় ব্যবধানে। ক্যারিবীয়দের সামনে লক্ষ্য ছিল ১৬১ রানের। কাইল মায়ার্স শুরুটা ভালোই করেছিলেন (১৩ বলে ২০)। এভিন লুইসও সেট হয়ে গিয়েছিলেন (১৩ বলে ১৪)। পাওয়ার প্লের এক বল বাকি থাকতে ১ উইকেটেই ৫৩ রান তুলে ফেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে স্কটিশ বোলারদের তোপে আর ২৬ রান তুলতে আরও ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ক্যারিবীয়রা। দলের এই বিপদের মুখে একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন জেসন হোল্ডার। কিন্তু হোল্ডারের ৩৩ বলে ৩৮ রানের ইনিংসটা দলের পরাজয়ের ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কোনো কাজে আসেনি। ১৯তম ওভারে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন এই অলরাউন্ডার। ১৮.৩ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থামে ১১৮ রানে। এর আগে ওপেনার জর্জ মুনসের অপরাজিত হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে ৫ উইকেটে ১৬০ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় স্কটল্যান্ড। হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেন অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা অবশ্য দারুণ করেছিল স্কটল্যান্ড। ইনিংসের ৫.৩ ওভার যেতেই ঝমঝমিয়ে নামে বৃষ্টি। স্কটল্যান্ডের বোর্ডে তখন বিনা উইকেটেই ৫২ রান। বৃষ্টির পর ফের খেলা শুরু হলে লড়াইয়ে ফেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দেশকণ্ঠ/রাসু