স্পোর্টস রিপোর্টার : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দলকে প্রস্তুত করতে একাধিক সিরিজ খেলার ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেই সব ম্যাচের ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশিয় সিরিজের চারটি ম্যাচের সবকটিতেই পরাজিত হয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। এরপর বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ অষ্ট্রেলিয়ায় দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের একটি পরাজিত হয়েছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬২ রানের পরাজয়ের পরের ম্যাচটি দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতেই পারেননি। বৃষ্টির কারণে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। সে হিসেবে প্রস্তুতি যে খুব একটা ভাল ছিল সেটি বলা যাবেনা। তাইতো বিশ্বকাপের জন্য কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তরও টিম ম্যাজেনম্যান্টের কেউ দিতে পারছেনা। একটা পর একটা ম্যাচে পরাজয়ের পরও বাংলাদেশ শিখছে বলেই মন্তব্য করেছেন দলের ক্রিকেটররা।
নিউজিল্যান্ডের টানা হারের পর অধিনায়ক সাকিব বলেছিলেন, এখানেও তিনি উন্নতি দেখতে পারছেনা। ঠিক একই কথা বলেছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এই ডানহাতি অলরাউন্ডার বলেছেন, পরাজয়ের ম্যাচের মধ্যেও অনেককিছু শেখা যায়। তারা নাকি মোহাম্মদ নবীর দলের বিপক্ষে সেটাই করেছেন।
তাই তো অনেকের কাছেই এই বিশ্বকাপেও শিক্ষা সফর বাংলাদেশ দলের বলে মন্তব্য করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কথা বলা হচ্ছে। এই যেমন সাকিব আল হাসানরা এবার হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। বিশ^কাপ স্কোয়াড নিয়ে দেশ ছাড়ার আগে মিথ্যে আশ^াসের বুলি আউড়াতে হয়নি। দলের অবস্থা যেমনই হোক, প্রতিটি মিশনের আগে সংবাদ সম্মেলনে তো আর বলা যায় না ‘আমরা ভাল খেলার চেষ্টা করে যাব!’ তাই দেশবাসীকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভাল কিছু করার উচ্চাশা জানাতে হতো। তবে বিশ^কাপের ঠিক আগ মুহূর্তে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাওয়া এবং অধিনায়ক সাকিব অনুপস্থিত থাকার অজুহাতে বিশ^কাপের অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলন ও দলগত ফটোসেশন এড়িয়ে তাই যেন স্বস্তির নিশ^াস ফেলেছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা এবং ক্রিকেটাররা। সম্প্রতি দলের টি-টোয়েন্টি খেলার যে ধরন এবং তার যে ফলাফল তাতে করে এই পালিয়ে বাঁচতে পারাটা অšন্ত ক্রিকেটারদের মানসিক শান্তি দিয়েছে। অনেকেই আবার তাদের এই কাজকে অতিমাত্রায় চালাকি হিসেবেও অবিহিত করেছেন।
তাই বড় কোন আশা নেই এবার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাকিবরা যে কিছুই করতে পারবেন না, সেটি বিশ^কাপ স্কোয়াড ঘোষণার পর বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেছিলেন আমাদের লক্ষ্য পরের বিশ্বকাপ, এবার আমরা নিজেদের উন্নতির চেষ্টা করব। অর্থাৎ আবারও এক শিক্ষা সফরে গেছে বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। বাংলাদেশ দলের জন্য এবার টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ শিক্ষা সফর তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কারণ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আগে কোন টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা হয়নি বাংলাদেশ দলের। শুধু অধিনায়ক সাকিব বিগব্যাশ টি-টোয়েন্টি আসরে কিছু ম্যাচ খেলেছেন, বাকিরা সেটাও খেলেননি। তাই এবার বিশ্বকাপেও শুধু অংশগ্রহণই বড় কথা বাংলাদেশ দলের জন্য। অথচ ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে অন্য যেকোনো দলের চেয়ে অনেক পরে যাত্রা শুরু করলেও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অন্য দলগুলোর সঙ্গে একই সময়ে খেলা শুরু করেছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ দল যখন জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে সেটি এই ফরম্যাটের ইতিহাসে মাত্র নবম ম্যাচ ছিল। আর তাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দল খেলেছে ২০০৭ থেকে শুরু হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের প্রথম আসর থেকে সবই।
বড় তারকা আর বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা সময় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ক্রিকেটার। আসছে নভেম্বরে তার এই ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার বয়স ১৬ হয়ে যাবে। ১০৪ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। অথচ সাকিবও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেননি। এবার যে দলটি বিশ^কাপ খেলতে গেছে তাদের মধ্যে শুধু তাসকিন আহমেদ ও সৌম্য সরকারের অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে ২০১৫ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকার কারণে। তাই অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ, পরিস্থিতি ও উইকেটে বাংলাদেশ দলের ভাল করার আশা করাও বোকামি। আর গত বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে এই ১ বছরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের যে পারফরমেন্স তাতে একটি ম্যাচও জেতা আকাশ কুসুম কল্পনার নামান্তর হয়ে গেছে। যদিও নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তান ও স্বাগতিকদের বিপক্ষে দুটি করে ৪ ম্যাচ খেলে দলের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট ও অধিনায়ক সাকিব। কিউই ভূমিতে টানা ব্যর্থতার পর কাটাছেঁড়া করা দলকে নিয়ে রীতিমতো আলাদা টেস্টের মতো চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম। এরপর তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, বিশ^কাপে খেলার জন্য উপযুক্ত কম্বিনেশন আবিষ্কার করতে পেরেছেন তিনি। সাকিবও একই কথা বলেছেন।
পরিসংখ্যানের বিচারে অবশ্য এবারই প্রথম সুপার টুয়েলভ পর্বে সরাসরি খেলার সুযোগ সৌভাগ্যক্রমে পেয়েছে বাংলাদেশ দল। আগের ৭ আসরেই খেলেছে বাংলাদেশ। তবে ২০০৭, ২০০৯, ২০১০ ও ২০১২ সালের আসরে ৪ গ্রুপে ভাগ হয়ে ১২ দল খেলেছে। বাংলাদেশ শুধু ২০০৭ সালের প্রথম আসরে গ্রুপ পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে গ্রুপ পর্ব পেরোতে পেরেছে। এরপর এক ম্যাচও জেতেনি এবং গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। ২০১৪ সালে প্রাথমিক রাউন্ড শুরু হয় এবং সেবার দেশের মাটিতে প্রাথমিক রাউন্ডে হংকংয়ের কাছে হারলেও সুপার টেনে ওঠে। ২০১৬ বিশ^কাপে প্রাথমিক রাউন্ডে কোন ম্যাচ না হেরেই সুপার টেনে খেলেছে বাংলাদেশ। দুবারই সুপার টেনে সব ম্যাচ হেরেছে। সর্বশেষ ২০২১ সালে হওয়া সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রাথমিক রাউন্ডে স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে যায়। এরপরও প্রথমবার শুরু করা সুপার টুয়েলভ পর্বে উঠে জিততে পারেনি কোন ম্যাচই। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত গ্রুপ পর্ব কিংবা প্রাথমিক রাউন্ড পেরিয়ে কোন ম্যাচ জেতা হয়নি বাংলাদেশের। সবমিলিয়ে বিশ^কাপে ৩৩ ম্যাচ খেলে ৭ জয়ের বিপরীতে আছে ২৫ হার। গত বিশ^কাপের পর এই বিশ্বকাপে নামার আগ পর্যন্ত ১৮ ম্যাচ খেলে মাত্র ৪টি জয়। এবার কি করবে সেটাই দেখার বিষয়।
দেশকণ্ঠ/আসো