মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অনেকটাই সিনিয়র ক্রিকেটারবিহীন চলছে বাংলাদেশ দল। একমাত্র সাকিব আল হাসানই কেবল দীর্ঘদিন ধরে লাল সবুজের জার্সি গায়ে খেলে চলেছেন। জাতীয় দলকে অবসর না বললেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমরা এখন আর কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে নেই। এই অবস্থার মধ্যে এখন চলছে বাংলাদেশের খেলা। অনেকটা লেজে গোবরে অবস্থা এখন শ্রীধরণ শ্রীরামের শীষ্যদের। তাইতো প্রশ্ন উঠেছে এই তিনজনের বিকল্প কে। যাদেরকে দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে তারা কতটা যোগ্য হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারছেন সেই প্রশ্ন এখন থেকেই যাচ্ছে। একটা সময় স্টিভ ওয়াহ অনেক দামি একটা কথা বলেছিলেন। সরে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় তখন, যখন সবাই বলবে, কেন চলে যাচ্ছ? সবচেয়ে বাজেভাবে বিদায় হলো, যখন সবাই বলবে কেন চলে যাচ্ছ না!! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে মুশফিক অবসরের ঘোষণা দেয়ার পর, এখনো তার টি-টোয়েন্টি অভিষেকের প্রথম অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীস এবং শেষ ম্যাচের সাকিব আল হাসানের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আবার মুশফিকের বিদায়ী বার্তায় তার প্রথম অধিনায়কের কোনো কথাই নেই। পরিসংখ্যান যাই বলুক, মুশফিক যা দিয়েছেন তা কম নয়। একইভাবে যা পেয়েছেন সেটিও এই ক্রিকেটের কল্যাণে। ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখলে, খেলোয়াড়রা এখন সহজে অবসর নিতে চায় না।
এদিকে ভিন দেশে একটু দৃষ্টি দিলে দেখা যায় রজার ফেদেরার গত চার বছরে টেনিসে তেমন কিছু জেতেননি। তবু টেনিস ছাড়ছেন না। কারণ কিছু না জিতেও গত চার বছরে সবচেয়ে বেশি আয় করা টেনিস খেলোয়াড় তিনি। ফেদেরার জানেন, খেলা ছেড়ে দিলেই এত এত পণ্যের সাথে তার এনডোর্সমেন্ট, বেশির ভাগই থাকবে না। একটিমাত্র ফেসবুক বার্তা। তার পরই আবেগঘন প্রতিক্রিয়া। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে গেলেন মুশফিক। ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারকে বিদায় বলে দিলেন। বিদায় বলার সময় গভীরতম আবেগ ও ভেতরের রক্তক্ষরণ রাখলেন নিজেরই ভেতর। মুশফিকের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় দিয়ে। শেষ হলো এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার দিয়ে। শেষ ম্যাচটি জিতলেও মুশফিক থাকতেন প্রশ্নের মুখে। ব্যাটিং-কিপিং কোনোটাতেই নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছিলেন না। জায়গা তাকে ছেড়ে দিতেই হতো। তাই নিজে থেকেই সরে দাঁড়ালেন।
কিন্তু তার ওয়ানডে ও টেস্ট ক্যারিয়ার থেকে যদি আগেভাগে ঘোষণা দিয়ে বিদায় নেন, তাহলে ভক্তকুলে স্বস্তি তৈরি হবে। মুশফিক মাঝে মধ্যে এমন কিছু বলেছেন যা তার অন্ধভক্তকেও আহত করেছে। হতাশ করেছে। অবসরের পরে মুশফিক শুধু বড় ক্রিকেটার হয়ে বাঁচবেন না আদর্শ হয়ে বাঁচবেন, সেটিও একটা প্রশ্ন। ক্রিকেটার হিসেবে তিনি যথেষ্ট বিত্তশালী। অধিনায়কত্ব করেছেন। দেশকে জিতিয়েছেন। মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পেয়েছেন। কিন্তু সামান্য সমালোচনার আঁচ গায়ে লাগলেই কেন যেন তিনি মার্জিতরূপে থাকেন না। ভাষার ছন্দপতন ঘটে। মনোভাবে পরিবর্তন না আনতে পারলে অবসরের পরও শুধু বড় ক্রিকেটার হিসেবেই বেঁচে থাকবেন। আদর্শ হিসেবে বাঁচতে হলে, ভক্ত-সমর্থক-মিডিয়ার অত্যাচার একটু সহ্য করতেই হবে। সহজে অবসর নিতে চান না মাশরাফি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না হোক, বিপিএল আছে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আছে। দুইয়ে মিলে কোটি টাকার ব্যাপার। মুশফিককে অবসর ঘোষণাতেও বলতে হয়, আমি কিন্তু বিপিএলে টি-টোয়েন্টি খেলব। পারছেন না জেনেও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। আর এই করতে গিয়ে আমাদের হিরোরা ভিলেন হয়ে ওঠেন। সাবেক খেলোয়াড় ও বর্তমান নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক রাজ তো বলেই দিলেন, ‘এশিয়া কাপের মাঝেই মুশফিক অবসর নিয়ে খারাপ হতো না।’ তামিম টি-টোয়েন্টি তে একদমই চলে না, চাচার জোরে খেলে।
এখন না হয় জাতীয় দলে খেলার এবিলিটি নেই তামিমের। তামিমের উচিত নতুনদের সুযোগ দেয়া ইত্যাদি। এখন আবার তারাই বলছেন, তামিম স্বার্থপর সুবিধাবাদী, বাংলাদেশ দলের এমন পরিস্থিতিতে তামিমকে দলে খুব প্রয়োজন, সাথে আবার এ কথাও বলছে তামিমের মতো একজন হিটার ব্যাটসম্যান টি-টোয়েন্টি তে খুব বেশি প্রয়োজন। কেন ভাই? তামিমকেই এখন কেন লাগবে। সে যখন অভিমান করে একটা ছুতোয় অবসরে যায় তখন কোথায় গিয়েছিল বিসিবির চাহিদা। বলা হয়েছিল তামিমের রিপে¬সমেন্ট আছে। এখন আবার মুশফিক। তাদের বিকল্প আছে তো বিসিবির কাছে। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝতে হয়। হাজার বার বলেও কি তামিমকে আর ফেরানো যাবে। বড় বড় বুলি আওড়িয়ে বলা হয়েছিল তামিম নতুনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়েছে। তারা এতই ভালো খেলবেন যে তামিমকে আর প্রয়োজনই হবে না। কোথায় সেই বিকল্প। তামিমের বিদায়ের সুর যেমন করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি সৃষ্টি হয়েছে মুশফিকের বেলায়। সব বেদনা ভুলে যাবে ভক্তরা যদি ২২ গজে আরেকজন তামিম-মুশফিক তৈরি হয়। এদিকে টি-টোয়েন্টি থেকে পঞ্চপান্ডবর চার জনের বিদায়। এখন বাকি রইল কেবল এক। তবে যেহেতু মাহমুদউল্লাহ বাইরে রয়েছেন তাই অনেকেই তার শেষটাও দেখে পেলেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পঞ্চপান্ডবের বিশেষ ভূমিকা ছিল। কারা এই পঞ্চপান্ডব? তা জানা সবারই। তারা হলেন, মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্ল¬াহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান। সময়ের আবহনে চিত্রে পরিবর্তন আসে। পঞ্চপান্ডবেও ভাঙন ধরেছে। আর তা অনেক আগে থেকেই। শুরুটা মাশরাফিকে দিয়ে। এরপর তামিম। সর্বশেষ সংযোজন মুশফিকুর রহিম। সাদা চোখে নাজুক পারফরম্যান্সের জন্য দায়ী ক্রিকেটাররা। বিসিবির কর্তারাও কি এর দায় এড়াতে পারেন? প্রশ্নটা কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ উচ্চকিত। কিন্তু নেই কোন উত্তর।
দেশকণ্ঠ/আসো