স্পোর্টস রিপোর্টার : মাশরাফি বিন মর্তুজা মানেই বিশেষ কিছু। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) মানেই যেন মাশরাফির অধিনায়কত্বের সাফল্য। তিনটি শিরোপা জিতে নিজেকে অনন্য এক অবস্থানে নিয়ে গেছেন। এবার সাময়িক বিরতি দিয়ে আবারো বিপিএলে ফিরছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। এবার দল বদলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের আইকন খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। যদিও তার ফিটনেস নিয়ে চারিদিকে নানা কথা হচ্ছে। যদিও নতুন পরিচয়, নতুন দল, চেনা মাশরাফি লক্ষ্যেও সেই অবিচল। নিজেকে নিয়ে তাই বলছিলেণ, ‘এই ওজন নিয়েই খেলে ফেলব আমি, কোন চিন্তা করিয়েন না। পার্ট অব দ্য জোক...।’ মাশরাফি আসলে এমনই। গত বিপিএলের পর আর মাঠেই নামেননি তিনি। কোনো অনুশীলনও নেই তার। এতে শরীরটা ভারী হয়েছে। ক্রিকেটীয় কসরতের জন্য ধীরও হয়ে গেছে। তাতে কি! মাশরাফি অনেকটা সাহস নিয়েই বলে ফেললেন সামনের বিপিএলের জন্য এই শরীর নিয়েই খেলে ফেলবেন। এবারের টুর্নামেন্টে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি ফিউচার স্পোর্টসের দল সিলেট স্ট্রাইকার্সে খেলবেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। দলটির লোগো উন্মোচন ও পরিচিতি অনুষ্ঠানে নিজের খেলা ও দল নিয়ে আশার কথা জানালেন তিনি। বিপিএলে সবচেয়ে বেশি চারবার শিরোপা জয়ী অধিনায়ক তিনি। তবে কোনোবারই সিলেটের কোনো দলের হয়ে খেলেননি মাশরাফি।
বিপিএল শুরুর প্রায় তিন মাস আগে তা কাজে লাগানোর ব্যপারে প্রত্যয় জানালেন মাশরাফি। তার বিশ্বাস দলটির হয়ে সেরাটাই দিতে পারবেন। শরীরের ওজন নিয়ে একটা মজা করার পর মাশরাফি বলেন, ‘আমার ফিটনেস নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। অবশ্যই আমার ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ লম্বা সময়ের জন্য ক্রিকেটের বাইরে আছি। অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এখন যেহেতু দুই মাস পর টুর্নামেন্ট আছে। আমি কঠোর পরিশ্রম করব, নিজের সেরাটা দেব।’ বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত, বিপিএল মানেই মাশরাফি বিন মর্তুজার এক অন্য রকম রাজত্ব। প্রতিযোগিতার আট আসরে চারবারই তার হাতে শিরোপা। অধিনায়ক হিসেবে তার চেয়ে সফল নন আর কেউ। তাইতো অবধারিতভাবে তার কাঁধেই নতুন আসরের নেতৃত্ব। তবে এবার মাশরাফি নেই পুরোনো দলে। নামের পাশে যোগ হয়েছে নতুন দল। সঙ্গে নতুন পরিচয়ও। নতুন করে শুরু হতে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা বিপিএলে নতুন করে নাম লিখিয়েছেন ফিউচার স্পোর্টস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বিপিএলে সিলেট দলের মানিকানা কিনেছে। দলের নাম সিলেট স্ট্রাইকার্স। আনুষ্ঠানিক লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে মাশরাফিকেই অধিনায়ক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় সিলেট। বিপিএলে সিলেটের অবস্থান খুব শক্তিশালী নয়।
পরিসংখ্যানের আলোকে সবেচয়ে অসফল দল তারা। এর আগে যারা মালিকানায় ছিলেন তারা চেষ্টা করলেও ভালো কিছু উপহার দিতে পারেননি। বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক নিজের প্রথম সুযোগেই ভালো কিছু করে দেখাতে চান। এই দলে তার দায়িত্ব খেলার মাঠের থেকেও বেশি। সিলেটের দল গোছানোর কাজটা মাশরাফি নিজেও করছেন। প্রথম দানেই মাশরাফি মেরেছেন ছক্কা। পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমিরকে দলে ভিড়িয়েছে তারা। সঙ্গে থিসারা পেরেরাকেও দলে টেনেছেন। দল নিয়ে নিজের ভাবনা বেশ পরিস্কার মাশরাফির, ‘সিলেট আমাকে দলে নিয়ে সাফল্য পেতে, আমরা কিছুটা আগেভাগেই কাজ শুরু করে দিয়েছি। আর এটা নিশ্চিত আমি শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করব। সিলেট কখনও চ্যাম্পিয়ন হয়নি, এটা সত্য। কখন ভালো হয়েছে, কখনও ভালো করতে পারেনি। এই জন্য শুরু থেকেই আলোচনা হচ্ছিল, তখন বলেছি যে দলটাকে খুব স্ট্রং করতে। সঙ্গে কোর টিমটাও। যতটুকু সম্ভব করা হয়েছে। এখন নির্ভর করছে প্লেয়ার ড্রাফটে কারা আসবে। ডিসিপ্লিন, মাঠের ভেতরে পারফর্ম করা নির্ভর করে। দিনশেষে দল হিসেবে যখন খেলবো তখন বোঝা যাবে। আমরা আশাবাদী সবকিছুই ভালোভাবে হচ্ছে। বাকিটা সময়ের উপরই ছেড়ে দিতে হবে।’
বিদেশী ক্রিকেটার যারাই থাকুক না কেন মাশরাফির মূল নজর স্থানীয় ক্রিকেটারদের দিকে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্লেয়ার্স ড্রাফট অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ভাগ্য পরীক্ষায় খেলায় ভালো মানের খেলোয়াড় বেছে নিতে হবে তাকে। তার বিশ্বাস, বিপিএল জেতাতে হলে ভালোমানের স্থানীয় ক্রিকেটার লাগবে। ‘এই টুর্নামেন্টে কিন্তু বিদেশি খেলোয়াড়দের থেকে স্থানীয় খেলোয়াড়দের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। সাতজন খেলবে স্থানীয়। প্লেয়ার্স ড্রাফটে যদি আমরা মোটামুটি অবস্থানে থাকতে পারি খারাপ হবে না। আমাদের চারজন বিদেশি কিন্তু বোলিং পারে, তিনজন ব্যাটসম্যান। এখানে কিন্তু কম্বিনেশন করতে সহজ হবে।’ মাশরাফিকে যারা দীর্ঘদিন পর সামনে দেখেছেন তারা স্রেফ অবাক। খেলাধুলায় না থাকায় শারীরিক গড়নে এসেছে পরিবর্তন। ওজন বেড়ে নব্বই ছুঁই ছুঁই। পেটে জমেছে মেদ। ফিটনেস নেই বললেই চলে। বিপিএলের আগে নিজের পুরোনো রূপে ফিরে আসবেন বলেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক।
এদিকে হারের ভারে রণক্লান্ত বাংলাদেশ দল। হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে টাইগাররা। বলার মতো পারফরম্যান্স নেই, মাঠের ক্রিকেটে রেজাল্ট পক্ষে নেই, ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে। হারের মিছিলে থাকা দলটা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। টানা পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হারের তিক্ততা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আগামী ২৪ অক্টোবর বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে যাচ্ছে টাইগাররা। তবে আলোচনা-সমালোচনাকে পাশে রেখে বিশ্বকাপের মূল আসর শুরুর আগে ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে সতেজ থাকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার আশা, আসরের শুরুতে দুই-একটা ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশ দল ছন্দে ফিরবে। টাইগারদের পারফরম্যান্স ও বিশ্বকাপ নিয়ে সাবেক এ অধিনায়ক বলেছেন, ‘একটা নতুন টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমার মনে হয় সবার মানসিকভাবে সতেজ থাকা উচিত। শুরুর দিকে যদি আমরা একটা-দুটা ম্যাচ জিতে যাই, তাহলে হয়তো মোমেন্টাম ঘুরে যাবে। টি-টোয়েন্টি তে মোমেন্টাম সবকিছু। আমাদের সক্ষমতা আছে, এখন ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারলে ভালো ফল হবে।’ সাকিব বাহিনীকে সমালোচনার চাপে ফেলতে চান না মাশরাফি। তবে দলের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে গতকাল তিনি বলেছেন, ‘অবশ্যই দলের একটা চাওয়া-পাওয়া থাকে। দল একটা ফোকাস করে আগায়। তারা কী চাচ্ছে, তারাই বলতে পারবে। এখান থেকে বলা কঠিন। সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে শুভকামনা ছিল, থাকবে।’
দেশকণ্ঠ/আসো