স্পোর্টস রিপোর্টার : নিয়মিতভাবেই এখন ম্যাচ ফিক্সিং চলছে ঘরোয়া ফুটবলে। নিচের সারির লিগগুলোতে কি ধরনের ফুটবল খেলা হয় সেটা নিয়ে গত কয়েকবছর ধরেই চলছে আলোচনা। প্রায় নিয়মিতই পাতানো ম্যাচের অভিযোগ ওঠে থাকে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পেশাদার লিগ কমিটির নিয়মিত নজরদারির না করার সুযোগেই এমন অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। সে কারণে এবার অনুর্ধ্ব-১৬ ফুটবল টুর্নামেন্টে চার ক্লাবকে জরিমানা করেছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রা সংস্থাটি। বাফুফের ডিসিপ্লিনারী কমিটির চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এক ভার্চ্যুয়াল সভায় অনুর্ধ্ব-১৬ ফুটবল টুর্নামেন্টের চার ক্লাবকে আর্থিকভাবে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া গোপালগঞ্জ ক্লাবের প্রশিক্ষক নিপু দাশকে দুই বছরের জন্য ফুটবলের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। অনুর্ধ্ব-১৬ ফুটবল টুর্নামেন্টে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড জালিয়াতির করে একজনকে খেলানোর অভিযোগ ছিল গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষেও। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা ওয়ান্ডারার্স স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষের ম্যাচে এই জালিয়াতি করেছিল গোপালগঞ্জ। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর বাফুফে ডিসিপ্লিনারি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্লাবের প্রশিক্ষক নিপু দাশকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোচকে শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি ক্লাবটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
শুধু গোপালগঞ্জই নয়, অ্যাক্রিডিটেশন জালিয়াতির অভিযোগ ছিল অগণী ব্যাংক স্পোর্টস ক্লাবের বিপক্ষেও। গেল ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়ারী ক্লাবের বিপক্ষে অনিবন্ধিত ফুটবলারকে কার্ড জালিয়াতি করে খেলানোর চেস্টা করেছিল অগ্রণী ব্যাংক স্পোর্টস ক্লাব। ফলে এখানেও ক্লাবের প্রশিক্ষককে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি অগ্রনী ব্যাংক ক্লাবকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপে পৃষ্ঠপোষকতায় দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লিগের ক্লাব পূর্বাচল পরিষদকেও জরিমানা করা হয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর কদমতলা সংসদের বিপক্ষে ম্যাচে পূর্বাচল পরিষদের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন রাশেদ বাবু। আগের ক্লাবের পর দ্বৈত নিবন্ধনের কথা পরের ক্লাবের কাছে গোপন করেছিল সে। ফলে তাকে একে বছরের জন্য নিষিদ্ধ এবং ওই ম্যাচে কদমতলা সংসদকে ৩-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করে কমিটি। এদিকে বাদ যায়নি ওয়ারি ক্লাবও। তাদেরকেও জরিমানা গুনতে হচ্ছে। বাফুফে অনুর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টে কাওরান বাজার প্রগতি সংঘের বিপক্ষে ১১ সেপ্টেম্বরের ম্যাচে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠেই ঝামেলা বাধে। যার ফলে খেলা বন্ধ থাকে ৫ মিনিটের মতো। মাঠের বাইরে থেকে খেলা বন্ধ রাখতে দলের ম্যানেজার জহিরুল হক সুমন দলকে উৎসাহী করেছেন বলে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
যার ফলে ওয়ারি ক্লাবকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই ম্যাচে সমর্থকদের অশোভন আচরণের জন্য জরিমানা গুনতে হয়েছে কাওরান বাজার প্রগতি সংঘকেও। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে সমর্থকরা গেটের তালা ভেঙে মাঠে প্রবেশ করায় ক্লাবকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বলা যায় একটা টুর্নামেন্টে একাধিক ম্যাচে কয়েকটি অপরাধ সংগঠিত হওয়ায় বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি বিভিন্ন ক্লাবকে শাস্তি দিয়েছে। নিচের সারির লিগগুলোতে কি ধরনের অনিয়ম হয় একাধিক ক্লাবকে শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে সেটি আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। অনিয়ম আর জালিয়াতি সেখানে নিত্য দিনকার ঘটনা। নিয়ম মেনে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থেকে একজন কিশোর বড় ফুটবলার হওয়ার পথে নিজের অবস্থান পোক্ত করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ফুটবলে নানা অনিয়মের পাশাপাশি ম্যাচ পাতানোর অভিযোগও বেশ পুরনো। বাফুফের দেওয়া অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড জালিয়াতি করে অনিবন্ধিত ফুটবলারকেও নিয়মিত খেলানো হচ্ছে নিচের দিকের টুর্নামেন্টে, এমন অভিযোগও নতুন নয়। এটাকে বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে গন্য করা হচ্ছে। যার ফলে অনেকে আবার দুই ক্লাবের জার্সিতে মাঠে নামছেন দুবার করে! এসব ঘটনা নিয়মিত ঘটে থাকে বলে নতুন করে নজরদারি করারও যেন কেউ নেই। এসব জাল জালিয়াতির ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট ক্লাবের কোচরা। ঢাকায় প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লিগ (বিপিএল), পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্থর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের (বিসিএল) পর বয়সভিত্তিক ফুটবলে এমন অনিয়ম দেখে সাবেক ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলু হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
ফুটবলার উঠে আসার এমন প্রতিযোগিতায় প্রতারনা ও জালিয়াতি নিয়ে সোচ্চার এই সাবেক ফুটবলার বলেন, ’বাফুফে অনুর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্ট থেকেই তরুন আর প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় উঠে আসে। আর বয়সভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে ক্যারিয়ারের শুরুতেই যদি এমন প্রতারণার আশ্রয় নেয়ায় শুরুতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রতিভা। উঠে আসছেনা মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ও। এসব অনিয়ম বন্ধে বাফুফেকে আরও কঠোর হতে হবে। কোনভাবেই এসবকে পাত্তা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। দেশের ফুটবলের স্বার্থেই বিসিএল থেকে শুরু করে বয়সভিত্তিক এসকল টুর্নামেন্টে নিয়মিত মনিটরিংই পারে সমস্যার সমাধান করতে’। ভবিষ্যতের জন্য বার্তা দেওয়া হলেও খুব বেশি কাজে আসছেনা। সামনে কি অপেক্ষা করছে সেটাই বলা মুশকিল।
দেশকন্ঠ/আসো