অনিরুদ্ধ ব্রতচারী : সাম্প্রতিক বাংলাদেশের গ্রাম দেখে এসে উন্নয়নের কথা বলা উচিত। যারা পত্র পত্রিকায় লিখেন, সামাজিক মাধ্যমে লিখেন, টেলিভিশনে কথা বলেন, এখানে সেখানে বক্তৃতা দেন তাদের উচিত নিজের চোখে দেখে এরপর সরকারের সমালোচনা করা। প্রতিদিন যারা নানান বৈপরীত্যের কথা বলেন তারা অজ্ঞানতার অন্ধকারে আছে অথবা জেনে বুঝে মিথ্যা কথা বলে জাতিকে ধোঁকা দিচ্ছে।
শহরে মানুষের মন বেশি নাজুক, সেনসেটিভ ও বিদ্রোহী হয় তাই সরকারের সিংহভাগ ব্যয় করতে হয় শহুরে মানুষের জন্য যাদেরকে সুশীল বলা হয়েছে! শহুরে মানুষের নিরাপত্তা, রাস্তা, পানি, ময়লা আবর্জনার ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ , পরিবহন, পণ্য, খাবার, ব্যবসা ইত্যাদির জন্য সরকারকে প্রচুর খরচ করতে হয় ।
এক গবেণায় দেখা গেছে প্রায় ৭৬ শতাংশ শহরের জন্য খরচ করতে হয়। কেননা সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা, আন্দোলন, বিদ্রোহ, মারামারি, দাঙ্গা ইত্যাদি এই শহরেই হয়। বিপরীতে গ্রামের মানুষ নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত, কে সরকার হল সে দিয়ে তাদের কিছু হয় না। কেননা তাদের মাটির জীবন তেমনই রয়ে যায়। তারা রাতে ঘুমায় ভোরে উঠে মাঠে যায় কাজ করে, ফসল ফলায়, মাঝে মধ্যে হাট বাজারে যায়। কদাচিৎ চিকিৎসা নিতে শহরে বা বাজারে যায়। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতেও কদাচিৎ শহরে যায়। এই লোকগুলো শহুরে মানুষের খাবার যোগায়, পণ্য কিনে ভ্যাট দেয়, শহুরে অর্থনীতির চাকা সচল রাখে। এরা রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যায় আর শহুরে মানুষের গাড়ির ধোঁয়া গিলে! শহুরে ধোঁয়া গিলে ওদের লাগানো গাছ ও ফসল।
আবহমান বাংলার যে 'আসমানীদের ' জীবন ছিল সে জীবনে এখন যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে ইতোমধ্যে সেগুলো কোন সংবাদ, বক্তৃতায় বা কথা মালায় দেখা বা শোনা যায় না! কারণ ওদের জীবনের পরিবর্তনের কোন অর্থ নেই শহুরে এই সব লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবীদের নিকট! অর্থ হলো তারা নিজেরা ( মানসিক ও আর্থিক) সুখে থাকলেই ভাবে জগতের সকল প্রাণী সুখে আছে। আবার কিছু আছে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে যারা ভালো করে তাদের বিরোধিতা করে এতে নানান রকম কথা ওকথা, রঙ্গ মাখিয়ে বলে, এবং এমনভাবে বলে যে অন্যরা বিশ্বাস করে , ক্ষতির শিকার হয়!
শহর থেকে শুরু করুন কোন এক গ্রামের উদ্দেশ্যে দেখবেন প্রশস্ত পিচ ঢালা পথ, প্রতি সেকেন্ডে ছুটছে নানান ধরনের যানবাহন, মোটর সাইকেল অর্থাৎ গ্রামের মানুষের সামর্থ্য হয়েছে এসব যানবাহন ব্যাবহার করবার। রাস্তা ধরে চলে যাবেন যে কোন গ্রামে আপনার শহুরে গাড়ির গায়ে কোন কাদা লাগবে না। এবড়ো থেবড়ো নয় যে গাড়ির ক্ষতি হবে। পাশে দেখুন এখন আর জীর্ণ শীর্ণ বেড়ার ঘর দেখা যায় না। হয় টিন নয়তো ইটের বাড়ি! এত সামর্থ্য হয়েছে যে ইটের বাড়ি করছে! গ্রামের মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন চোখ খুলে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের গায়ে জামা আছে করো করো পায়ে সেন্ডেল বা জুতা। দারুণ স্টাইলে চুল কাটা ছেলেটা বিশ্বের লেটেস্ট ফ্যাশন সম্পর্কে জানে। পাড়ার মোড়ে দেখুন চা, বিস্কুট, পাউরুটি ইত্যাদি খায়। সকালে নাস্তা খায়। সময় ধরে কাজ করে। করো বাড়িতে প্রবেশ করে দেখুন মোটর সাইকেল আছে। আরো দেখবেন টেলিভিশন, ফ্রিজ, ডিশ লাইন, ইন্টারনেট সব আছে। অনেকের বাড়ির মেঝে পাকা বা টাইলস করা! একেবারে নিরন্ন প্রান্তিক মানুষটি পেয়েছে পাকা ঘর। মাস গেলেই বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষা ভাতা ইত্যাদি ভাতা পাচ্ছে। আরো দেখবেন গ্রামের ভিতরের রাস্তা কোথাও পাকা বা কোথাও ইট বিছানো। এরপর আমার গ্রাম, আমার শহর বাস্তবায়ন করলে এই উন্নতি আরো ব্যাপক হবে। এজন্য সরকারের গ্রাম উন্নয়নের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার কোন বিকল্প নেই। এই সরকার থাকলে জনগণ উন্নত জীবন পায় এটা প্রমাণিত। কারণ, এখন গ্রামে স্যাটেলাইট ক্লিনিক এ সরকারের ডাক্তার আছেন যারা রীতিমত এম বি বি এস পাশ এবং আরো উচ্চ যোগ্যতা আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুদৃশ্য বিল্ডিং দেখুন, দেখুন আসবাব ও শিক্ষা উপকরণ। ছেলে মেয়ে একই সাথে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের গতি সমুন্নত রাখার সরকার দরকার। নইলে বাংলাদেশ ঠকবে।
সুশীল বা যারা এসব উন্নয়ন দেখে না বা দেখেও উল্টো বকে তারা জনগণের উন্নয়ন চায় না, বরং অন্য কারো বা কেবল নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়। এদের থেকে সাবধান। সরকার এত করছে, দিচ্ছে এর সাথে যদি এইসব সুশীলদের মেধা ও নাগরিক সামর্থ যোগ হয় তাহলে এসব উন্নয়ন সাস্তেইন হতে বাধ্য। সে রকম নাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দুর্বলতা বা রুগ্নতা দৃশ্যমান। বরং ইন্টারনেট বা ডিজিটাল যুগে জনগণ নিজে যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সে গতিতে নাগরিক তৈরির প্রতিষ্ঠান তথা পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এগুতে পারে নি। পারে নি সময়োপযোগী শিক্ষা সিলেবাস পদ্ধতি নিতে, শিক্ষক হবার যোগ্যতা, পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ দিতে। যে পরিমাণ বিনামূল্যে পুস্তক দেওয়া হয় সে অর্থ দিয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিলে জাতি বেশি উপকার পেতে পারে। কেননা এখন নাগরিকের সামর্থ আছে বই কেনার এবং প্রাইভেট টিউটরকে টাকা দেবার । সে হিসেবে শিক্ষক তৈরির নিয়ম পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ জোরদার করা যেতে পারে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে নাগরিকের আচরণিক পরিবর্তন না হলে অশান্তি বিরাজ করে, সম্পদের ক্ষতি করে। সমাজের শৃংখলা নষ্ট করে। একই সময়ে মাদক নেশা ইত্যাদির প্রবেশ ঘটে। এখন যে সব সামাজিক অপরাধ দেখা যায় সেগুলো আগেও ছিল কোন সুশীল এসব দূর করার কোন কাজ করেনি।
জাতি গঠনের অন্যতম শর্ত হিসেবে শিক্ষক তৈরি করে তাদের মাধ্যমে উন্নয়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জাতি গঠনের বিকল্প নেই। সেদিকে কঠোরভাবে নজর দেবার সময় এখন । নইলে এত কিছুর পরেও নাগরিকের সেই পুরনো বোধের ঘোর রয়েছে নইলে এসব উন্নয়নের মধ্য থেকেও কেন বিরূপ বা বিরুদ্ধ ভাবনায় ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে! কিছু পরিমাণ যাবে সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু ব্যাপক বা বেশি সংখ্যক বিপরীত মেরুতে যাবার কারণ নেই। অর্থাৎ সরকারের এসব ক্ষেত্রে নীতি ও বাস্তবায়নের দুর্বলতা রয়েছে। দেখা যায় যত জাতির জনক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা ও স্তুতি করা হয় তার সিকি ভাগ উন্নয়নের প্রচার দেখা যায় না।
দেশকণ্ঠ/আসো