দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : সারা দিনে ৬টি উইকেট নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামা দলের জন্য খারাপ নয়। তবে প্রথম দিনে তো অলআউটও হতে পারত ভারত! একদিনেই ক্যাচ পড়েছে তিনটি। দিনের শেষ বলে আউট হলেন যিনি, সেই আকসারকে আগে ফেরানো যেত রিভিউ নিলে। নিজেদের এসব ব্যর্থতার সঙ্গে কপালও এমন পোড়া যে, ইবাদত হোসেনের বল স্টাম্পে লাগার পরও পড়েনি বেলস! সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশের প্রাপ্তির তৃপ্তি যেমন আছে, অপ্রাপ্তির আক্ষেপও কম নেই। দিনশেষে ভারতের রান ৬ উইকেটে ২৭৮।
সেঞ্চুরিতে চোখ রেখে ৮২ রানে দিন শেষ করলেন যিনি, সেই শ্রেয়াস আইয়ার তো সৌভাগ্যের সঙ্গে সন্ধি করে নেমেছেন বলেই মনে হচ্ছে। ৩০ রানে তার ক্যাচ ছাড়েন সোহান, ৬৭ রানে সহজতম ক্যাচ ছেড়ে দেন ইবাদত। একটু পর ইবাদতের এক ডেলিভারি ছোবল দেয় তার স্টাম্পে। জ্বলে ওঠে জিং বেলস। কিন্তু স্টাম্প থেকে সরতে তো হবে! বিস্ময়করভাবে বেলস নড়লেও পড়েনি। এবার শ্রেয়াস রক্ষা পান ৭৮ রানে।
বাংলাদেশের এমন বিপরীতমুখি নানা অনুভূতির স্রোতের দিনে লড়াইয়ের ধারায় রয়ে গেছেন কেবল তাইজুল ইসলাম। দিনের প্রথম ব্রেক থ্রু তার হাত ধরে। বিরাট কোহলিকে দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ফিরিয়ে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত উইকেটও তার। শেষ বেলায় তিনিই পুজারাকে সেঞ্চুরির ১০ রান আগে থামিয়ে স্বস্তি ফেরান নিজ দলে। চট্টগামের উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হিসেবে পরিচিত হলেও এই ম্যাচের প্রথম ওভার থেকে দেখা যায় অসমান বাউন্স। বেশ কবারই বল থাকে ব্যাটসম্যানের হাঁটুর নিচে। উইকেট মন্থর তো বটেই, টার্নও মেলে শুরু থেকেই। তবে পরে সময়ের সঙ্গে একটু সহজ হয়ে আসে উইকেট।
দুই পেসারের ৫ ওভারের পরই আক্রমণে আনা হয় স্পিন। চোটের অস্বস্তির কাটিয়ে ম্যাচে নামা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আসেন বল হাতে। তবে নিজে স্রেফ এক ওভার করেই বিরতিতে গিয়ে বল তুলে দেন তাইজুলের হাতে। প্রথম সাফল্যও আসে তাইজুলের হাত ধরেই। ততক্ষণে ১৩ ওভার চলে গেছে। বাংলাদেশের বোলিং দেখে একটুও মনে হয়নি, উইকেট আসতে পারে। হুট করেই শুবমান গিল প্যাডল করার চেষ্টা করেন, বল তার ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় সহজ ক্যাচ। গিলের ওই শট দেখে আরেকপ্রান্ত থেকে বেশ হতাশা দেখান লোকেশ রাহুল। একটু পর তিনি বিরক্তির চরম প্রকাশ করেন নিজের ওপরই। খালেদ আহমেদের অফ স্টাম্পের বাইরের নির্বিষ এক বল যে স্টাম্পে টেনে আনেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক!
থিতু দুই ব্যাটসম্যানকে আউট করার পর বড় আরেকটি শিকারের দেখা পায় বাংলাদেশ। তাইজুলের ফ্লাইট ও ড্রিফটে বিভ্রান্ত হয়ে বিরাট কোহলি এলবিডব্লিউ হন ১ রানেই। ভারতের রান তখন ৩ উইকেটে ৪৮। বাংলাদেশ দারুণ উজ্জীবিত। তাইজুলের বাঁহাতি স্পিনে পাল্টা আক্রমণের জন্য ডানহাতি শ্রেয়াস আইয়ারের জায়গায় উইকেটে পাঠিয়ে দেয় বাঁহাতি রিশাভ পান্তকে। আগ্রাসী এই ব্যাটসম্যান নেমে শুরুতে একটু দেখে খেলার পরই আপন রূপে আবির্ভুত হন। চার-ছক্কায় বাড়তে থাকে রান।
তার পরও প্রথম সেশনে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনের দ্বিতীয় বলেই পুজারাকে জীবন দেন সোহান। নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বড় সুযোগ হারায় দল। আরেকপ্রান্তে অবশ্য উইকেট ধরা দেয় সেশনের শুরুর দিকেই। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা পান্তকে দারুণ এক স্লাইডারে বোল্ড করেন মিরাজ। ৬ চার ও ২ ছক্কায় কিপার-ব্যাটসম্যান করেন ৪৫ বলে ৪৬। এরপরই ভারতের প্রতিরোধ গড়া আর বাংলাদেশের হতাশার জুটি। পুজারা একপ্রান্ত আগলে রাখেন, শ্রেয়াস তার সহজাত ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকেন। দ্বিতীয় সেশনে আর কোনো উইকেট পায়নি বাংলাদেশ।
শেষ সেশনেও তাদের জুটি ছুটতে থাকে। সোহান-ইবাদতের সৌজন্যে রক্ষা পেয়ে আরও চওড়া হয়ে ওঠে শ্রেয়াসের ব্যাট। বাংলাদেশের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে ভারতের রেকর্ড রানও এসে যায়। দ্বিতীয় নতুন বলে শ্রেয়াসের স্টাম্পে বল লাগার পরও বেলস না পড়ায় হতভম্ব হয়ে যান বাংলাদেশ দলের সবাই।
শেষ পর্যন্ত ১৪৯ রানে জুটি থামে দ্বিতীয় নতুন বলের পঞ্চম ওভারে। সেঞ্চুরির সুবাস পাওয়া পুজারা বোল্ড তাইজুলের আরেকটি দারুণ ডেলিভারিতে। টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ৯০ ছুঁয়ে করতে পারলেন না তিনি। শ্রেয়াসকে এ দিন আর থামানো যায়নি। শেষ সময়ে তাইজুলের বলে আকসারের ব্যাট-প্যাডের ক্যাচের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। বাংলাদেশও নেয়নি রিভিউ। সেই আক্ষেপ অবশ্য দীর্ঘায়িত হয়নি। মিরাজ শেষ বলে ফিরিয়ে দেন আকসারকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ১ম ইনিংস : ৯০ ওভারে ২৭৮/৬ (রাহুল ২২, গিল ২০, পুজারা ৯০, কোহলি ১, পান্ত ৪৬, শ্রেয়াস ৮২*, আকসার ১৪; ইবাদত ১৭-১-৬৩-০, খালেদ ১২-২-২৬-১, সাকিব ১২-৪-২৬-০, তাইজুল ৩০-৬-৮৪-৩, মিরাজ ১৮-৪-৭১-২, ইয়াসির ১-০-৭-০)
দেশকণ্ঠ/আসো