দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়ায় কিছুটা আশার আলো দেখেছিলেন মাঠে উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শক। কিন্তু বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ব্যর্থতায় সবকিছু গুড়েবালি হয়ে যায়। নিজেদের পরিচিত মাঠের কোন ফায়দাই নিতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দিনের শেষভাগে ব্যাট করতে নেমে ৮ ওভারে ভারত বিনা উইকেটে ১৯ রান করেছে। ২০৮ রানে পিছিয়ে থেকে ২৩ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিংয়ে নামবে ভারতীয়রা। বৃহস্পতিবার ২২ ডিসেম্বর মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন পর দলে ফিরে এদিন অর্ধ-শতকের দেখা পেয়েছেন সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক।
ব্যক্তিগত ৮৪ রান করে শেষ বিকেলে রিশভ পান্টের ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন সাবেক এই টেস্ট অধিনায়ক। এর আগে দিনের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দলীয় ৩৯ রানে দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত এবং জাকির হাসান ফিরে গেলে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। তবে এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ব্যাটারদের আশা-যাওয়ার মিছিলে অনড় ছিলেন মুমিনুল হক। বাঁহাতি এ ব্যাটার খেলছিলেন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে। তবে শেষ বিকেলে অশ্বিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৮৪ রানে ফিরে যান সাবেক এই টেস্ট অধিনায়ক। ফলে ক্যারিয়ারে আরেকটি সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ থেকে গেল কক্সবাজারের এই ক্রিকেটারের। মুমিনুল ছাড়া এদিন বলার মতো বড় রান করতে পারেননি আর কেউই।
বিশেষ যাদের উপর বেশি ভরসা ছিল সেই মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্তরা উইকেটে সেট হওয়ার পরেও ফিরেছেন ইনিংস বড় করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে। শেষ টেস্টের মত ঢাকা টেস্টেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ নুরুল হাসান সোহান, করেছেন মোটে ৬ রান। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ক্রিজে, লাঞ্চ বিরতির পর ফিরে যান ১৬ রান করে। মেহেদী হাসান মিরাজও আশা দিয়ে ফিরেছেন ১৬ রান করে। শেষ দিকে তাসকিন আহমেদ, খালেদ আহমেদরা ভারতীয় বোলারদের সামনে দিশেহারা হয়ে পড়েন। ফলে ২২৭ রানেই থামতে হয় টাইগারদের। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট করে নিয়েছেন উমেশ যাদব এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এছাড়া জয়দেব উনাদকাট নিয়েছেন ২ উইকেট।
বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে মোটে ২২৭ রান। প্রথম দিনের শেষ বিকেলে ভারতের ২-৩টা উইকেট নিতে পারলে এই ম্যাচে বেশ ভালো অবস্থানে থাকতো বাংলাদেশ। সুযোগ যে আসেনি, তেমনও নয়। তবে শেষ বিকেলের ভয় জয় করে ফেলেছে ভারত। বারকয়েক জোরালো আবেদন থেকে বেঁচেছে, একবার তো আম্পায়ার আউটও দিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যায় লোকেশ রাহুলের দল। প্রথম দিন শেষে ৮ ওভার খেলে বিনা উইকেটে ১৯ রান তুলেছে ভারত। লোকেশ রাহুল ৩ আর শুভমান গিল ১৪ রানে অপরাজিত আছেন। তাসকিন আহমেদ প্রথম ওভার শুরু করেন মেইডেন দিয়ে। দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই প্রায় উইকেটের দেখা পেতে যাচ্ছিলেন সাকিব। শুভমান গিলের ড্রাইভ একটুর জন্য পয়েন্টে ক্যাচ হয়নি। পরের ওভারে এজ হয়ে কিপারের পাশ দিয়ে চলে যায় বল, আবার বাঁচেন গিল। সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাসকিনের বলে আরেকবার সুগোগ তৈরি হয়। বল ব্যাটে লেগে উইকেটের পেছনে গেছে মনে হওয়ায় রিভিউ নেয় বাংলাদেশ।
কিন্তু আলট্রাএজে দেখা যায় এমন কিছুই হয়নি। তার ঠিক পরের ওভারে সাকিবের এলবিডব্লিউ আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেন রাহুল। এবারও বেঁচে যান তিনি। দেখা যায় বল স্টাম্পের ওপর দিয়ে চলে যেতো। এভাবেই বারকয়েক ভাগ্যের সহায়তায় বেঁচে দিন শেষ করেছে ভারত।
মুমিনুল আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের ইনিংসটা আর এগোয়নি। ৭৩.৫ ওভারে ২২৭ রানে গুটিয়ে গেছে সাকিব আল হাসানের দল। অথচ টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সূচনাটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। দুই ওপেনার জাকির হাসান এবং নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে বাংলাদেশ দল ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়িয়ে চলছিলো।
কিন্তু ১৫তম ওভারে এসেই ছন্দপতন ঘটলো। কুলদীপ যাদবের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া জয়দেব উনাদকাটের বলে ক্যাচ তুলে দেন জাকির হাসান। তার ক্যাচটি তালুবন্দী করেন লোকেশ রাহুল। আউট হওয়ার আগে জাকির করেছিলেন ১৫ রান। এর আগে দ্বিতীয় ওভারেই ক্যাচ তুলেছিলেন জাকির। মোহাম্মদ সিরাজ সেই ক্যাচ মিস করেন। পরের ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও এই আউটটি ছিল বিতর্কিত। বাইরে চলে যাওয়া বল প্যাড দিয়ে ঠেকান শান্ত। বলটা ছিল স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে। তবুও জোরালো আবেদন করেন অশ্বিন। তার জোরালো আবেদনের মুখে আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা। রিভিউ নেয়ার পর দেখা যায় বলটি অফস্ট্যাম্প হয়তো আলতো টাচ করে যেতো। কিংবা স্ট্যাম্প মিসও করতে পারতো। তবুও ফিল্ড আম্পায়ার আউট দেয়ার কারনে টিভি আম্পায়ারও সেটিকে আউটই ঘোষণা করেন। ২৪ রান করে ফিরে যান শান্ত। ভালো কিছুর আশা দেখাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসানও।
কিন্তু উমেশ যাদবের বলে মিড অফে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ধরা পড়েন চেতেশ্বর পুজারার হাতে। ৩৯ বল খেলে ১৬ রান করেন তিনি। সাকিব আউট হওয়ার পর মুমিনুল হকের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মুশফিকুর রহিম। এই জুটিটা আশা জাগাচ্ছিল। দু’জনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে ৪৮ রানের জুটিও গড়ে ওঠে। কিন্তু ভালো খেলতে খেলতেই হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলার অভ্যাসটা বের পুরোনো বাংলাদেশের ব্যাটারদের। মুশফিকুর রহিমের মত সিনিয়র ক্রিকেটারও খেই হারালেন। জয়দেব উনাদকাটের বলটি ছিল অফস্ট্যাম্পের ওপর। বলটি বুঝতে না পেরে ব্যাট ছুঁইয়ে দেন মুশফিক। সহজেই সেটি জমা পড়ে উইকেটরক্ষক রিশাভ পান্তের গ্লাভসে। ৩৯ বলে ১৬ রানের একটি ছোট্ট ইনিংস খেলে বিদায় নেন বাংলাদেশের মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিক। ১৩০ রানে পড়ে বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেট। এরপর লিটন দাসকে নিয়ে ৪২ রানের একটি জুটি গড়েন মুমিনুল।
লিটন ২৫ করে সহজ ক্যাচ হন অশ্বিনকে ফ্লিক করতে গিয়ে। মেহেদি হাসান মিরাজ উইকেটে টিকতে চেয়েছিলেন। তবে ৫১ বল খেলে ১৫ রানে তাকে ফিরতে হয় উমেশের শিকার হয়ে, উইকেটরক্ষকে ক্যাচ দিয়ে। ৬ রান করে নুরুল হাসান সোহান এলবিডব্লিউ হন উমেশ যাদবের বলে। তাসকিন আহমেদের উইকেটটিও নেন ডানহাতি এই পেসার। একটা প্রান্ত ধরে লড়াই চালিয়ে যাওয়া মুমিনুল হক সেঞ্চুরির সুযোগ মিস করেন। সাবেক টেস্ট অধিনায়কের আউটটা যদিও ছিল ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক। অশ্বিনের বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল তার গ্লাভসে লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক পান্তর হাতে। ১৫৭ বলে ১২ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় ৮৪ রান করেন মুমিনুল। সবমিলিয়ে মাত্র ২৫ রানে ৪টি উইকেট শিকার করেন উমেশ। ৭১ রানে ৪ উইকেট রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। বলা যায় সিরিজে ফেরার মিশনটা বেশ হতাশারই হয়েছে।
দেশকণ্ঠ/আসো