দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : বিষয়টা অনেকটা অনুমিতই ছিল, হলোও তাই। কাতার বিশ^কাপে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ক্লাববিহীন ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এবার সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে যোগ দিলেন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসেরে। তাকে বিশ^কাপে নিয়মিত খেলানো নিয়ে ঘটেছে নানা ঘটনা। সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ এরদোগান বলেছেন, ফিলিস্তিনের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানোর কারণেই বিশ^কাপে তাকে নিয়মিত খেলতে দেওয়া হয়নি। আর এখন ইউরোপের কোন ক্লাবে রোনালদোকে খেলানো হচ্ছেণা। সে হিসেবে অনেকটা বাধ্য হয়েই সৌদি আররে যোগ দিয়েছেন সিআর সেভেন। ৩৭ বছর বয়সী এই পর্তুগিজ তারকা এশিয়ার ক্লাবটির সঙ্গে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। টুইট করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আল নাসর ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ইএসপিএন জানিয়েছে, প্রতি বছর সাড়ে সাত কোটি ডলার বেতন পেতে পারেন রোনালদো। যা সত্যি হলে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ফুটবলার হবেন তিনি। আল-নাসরের দেয়া বিবৃতিতে রোনালদো বলেছেন, একটি ভিন্ন দেশে নতুন ফুটবল লিগের অভিজ্ঞতা নিতে আমি রোমাঞ্চিতবোধ করছি।
এছাড়া সৌদি আরবের পুরুষ ও নারী ফুটবলের উন্নয়নে আল নাসরের যে লক্ষ্য, সেটা খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সৌদি আরবের জয়ের প্রসঙ্গে টেনে রোনালদো বলেন, সৌদি আরবের সাম্প্রতিক বিশ্বকাপ সাফল্য বলে দিচ্ছে এই দেশটির ফুটবল নিয়ে লক্ষ্যটা অনেক বড় এবং প্রচুর সম্ভাবনাময়ী। আল নাসরে যোগ দিয়ে ইউরোপীয় ফুটবলে নিজের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে রোনালদো বলেন, আমি সৌভাগ্যবান যে, ইউরোপিয়ান ফুটবলে যা কিছুর জন্য খেলেছি তার সবই জিতেছি। এখন সেই অভিজ্ঞতা এশিয়ায় ভাগাভাগির সঠিক সময়। এদিকে ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট মুসালি আলমুয়াম্মার বিবৃতিতে বলেন, এটি ইতিহাস তৈরির চেয়েও বড় কিছু। রোনালদোর সঙ্গে এই চুক্তি শুধু আমাদের ক্লাবকেই নয়, আমাদের লিগ, আমাদের দেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে।
রোনালদো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতে চেয়েছিলেন। যে কারণে চলতি মৌসুমের শুরুতেই ম্যানইউ ছেড়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলে এমন কোনো ক্লাবে যেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন তিনি; কিন্তু কোনো ক্লাবই রাজি হয়নি সিআর সেভেনকে দলে নিতে। অগত্যা ম্যানইউতেই থেকে যেতে হয় তাকে। কিন্তু ম্যানইউতেও বনিবনা হচ্ছিল না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে, সতীর্থদের সঙ্গে এবং সবচেয়ে বেশি কোচের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। বিশ্বকাপের আগে এক সাক্ষাৎকারে কোচের বিরুদ্ধে সমস্ত ক্ষোভ উগড়ে দেন সিআর সেভেন। সে কারণে ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্কের অবণতি এবং বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে ম্যানইউর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন রোনালদো। এরপরই ফ্রি এজেন্টে পরিণত হন সিআর সেভেন। বিশ্বকাপেও পর্তুগাল দলে কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিলো রোনালদোর। যে কারণে দুই ম্যাচে পরপর সাইডবেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয় তাকে। যা ফুটবল হলে সমালোচনার সৃষ্টি করেছিল।
এই চুক্তির ফলে আগামী দুই বছর সৌদি ক্লাব আল নাসরে দেখা যাবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। দ্বিতীয় দফায় গেল বছরের আগস্টে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছিলেন রোনালদো। নিজে গোল করলেও দলের পারফর্ম্যান্সটা গিয়েছিল পড়ে। আগের বারের রানার্সআপরা গেল মৌসুমে লিগ শেষ করেছিল ছয়ে থেকে। ফলে ফসকে গিয়েছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগটাও। সে কারণে গত গ্রীষ্মে রোনালদো ম্যান ইউনাইটেড ছাড়তে চেয়েছিলেন, যেতে চেয়েছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা কোনো ক্লাবে। তবে তার সে চেষ্টা আলোর মুখ দেখেনি। শেষ পর্যন্ত কোথাও যেতে না পারায় ম্যান ইউতেই থেকে যেতে হয় তাকে। মৌসুম শুরুর পর থেকেই নতুন কোচ এরিক টেন হ্যাগের পরিকল্পনা থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। বেশিরভাগ ম্যাচ থাকতে হয়ে বেঞ্চে বসে। এমন পরিস্থিতিতে চটে গিয়ে রোনালদো বিস্ফোরক এক সাক্ষাৎকার দেন ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ ও কোচের বিরুদ্ধে। সেটাই ইউনাইটেডে তার দ্বিতীয় দফার বিয়োগাত্মক এক ইতি টেনে দেয়। এবার আল নাসরে যোগ দিলেন তিনি। তাতে ৩৭ বছর বয়সী এই তারকার ইউরোপীয় ফুটবলের ক্যারিয়ারটাও কার্যত শেষ হয়ে গেল। সৌদি এই ক্লাবের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ যখন শেষ হয়ে যাবে, তখন যে ৪০ ছোঁয়ার অপেক্ষায় থাকবেন তিনি!
এদিকে রোনালদোকে কেন মাঠে নামানো হয়নি, চমকে দেওয়া তথ্য এরদোয়ানের। কাতার বিশ্বকাপের সময় পর্তুগালের জাতীয় দলের কোচের সঙ্গে ঝামেলা হয় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। এর আগে ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডের কোচের বিরুদ্ধেও মুখ খুলে বিপদের মুখে পড়তে হয় রোনালদোকে। এবার এই মহাতারকাকে নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। কাতার বিশ্বকাপে রাজনীতির শিকার হয়েছেন পর্তুগিজ তারকা, এমন অভিযোগ করলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। বিশ্বকাপের নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে নকআউট পর্বে রোনালদোকে প্রথম একাদশে রাখেননি দলটির কোচ ফার্নান্দো স্যান্তোস। সেই ঘটনার রেশ ধরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিস্ফোরক তথ্য দিয়ে বলেছেন, রোনালদো রাজনীতির শিকার। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রোনালদোর সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মতো। পর্তুগাল রোনালদোকে নষ্ট করে দিচ্ছে। খেলার শেষ ৩০ মিনিটের জন্য তাকে নামানোর অর্থ, তাঁর মতো ফুটবলারের মনোবল নষ্ট করে দেওয়া। ওরা এভাবে রোনালদোর সব মানসিক শক্তি কেড়ে নিতে চেয়েছিল।’ মূলত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিতর্কে অতীতে ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রোনালদো। ইসরায়েলের সঙ্গে তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভাল নয়। ধারণা করা হচ্ছে সে কারণেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট কঠিন সময়ে রোনালদোর পাশে থাকার বার্তা দিলেন। শুধু ফুটবল নয়, ২০২২ সালে রোনালদোর ব্যক্তিগত জীবনেও দুঃখ ছিল। গেল এপ্রিলে সদ্যোজাত পুত্র সন্তানের মৃত্যু হয়। জন্মের কয়েকদিন পর মৃত্যু হয় তার পুত্র সন্তানের।
দেশকণ্ঠ/আসো