• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০১:০২

বিদায় ফুটবলের রাজা পেলে

  • ক্রীড়া -ফুটবল       
  • ০৩ জানুয়ারি, ২০২৩       
  • ৭০
  •       
  • ০৩-০১-২০২৩, ১৯:০৯:৫৩

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : দুদিনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাহিত হলেন ফুটবলের রাজা পেলে। বিদায় নিলেন এই নশ্বর পৃথিবী থেকে। আর জীবিত পেলেকে দেখা যাবেনা। এখন তার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে ফুটবল দুনিয়ার মানুষকে। মৃত্যু হয়ে গেছে আগেই। এবার ছিল শেষ বিদায়ের পালা। শেষবারের মতো ফুটবলের রাজা, কিংবদন্তি পেলের মৃতদেহ আনা হয় তার সারাজীবনের প্রিয় ক্লাব সান্তোসের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার পেলের মরদেহ এনে রাখা হলো ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চে। মৃত্যুর চারদিন পরে পেলের শেষ কৃত্যের প্রক্রিয়া শুরু হল। আগের দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার ভোরেই সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। সেখানেই তাকে ২৪ ঘণ্টা ধরে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পান ভক্ত ও সমর্থকরা। এরপর গতকাল তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। সোমবার সকাল থেকেই ভিলা বেলমিরোর আশেপাশে ভিড় জমতে শুরু করে। সবাই আগে গিয়ে পেলের মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে উৎসাহী। অনেক বড় ভিড়। এই ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। স্টেডিয়ামের মাঝে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে। তার কফিনের উপরের অংশ খুলে দেওয়া হয়। 
 
একটি সাদা চাদর জড়ানো রয়েছে পেলের শরীরের উপরের অংশ। তার কফিনের পাশে রাখা সাদা রংয়ের ফুলের তোড়া। পেলের কফিন বয়ে আনার সময় কাঁধে নেন তার ছেলে এডিনহো। পেলের কপালে হাত রেখে প্রার্থনা করে শ্রদ্ধা জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন ছেলে এডিনহো। এরপর পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আয়োকি একটি ক্রুশ পেলের দেহের উপরে রাখেন। পরে এডিনহোকে জড়িয়ে ধরেন। সকাল ১০টা থেকে সাধারণ মানুষের জন্যে স্টেডিয়ামের গেট খুলে দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের ভিড়ে হাজির ছিলেন ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি গিলমার মেন্দেস। তিনি বলেন, ‘খুবই দুঃখের মুহূর্ত। তবে এবার বুঝতে পারছি আমাদের দেশের সেরা ফুটবলারের প্রতি মানুষের ভালবাসা কতটা। আমার দফতরে পেলের স্বাক্ষর করা জার্সি রয়েছে। গোলরক্ষক হিসেবে তার একটি ছবিতেও স্বাক্ষর রয়েছে। এ ছাড়া প্রচুর ডিভিডি, ছবি এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে।’ 
 
১২ বছরের ছেলে বার্নার্ডোকে নিয়ে রিও ডি জেনিরো থেকে ৩০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে সাও পাওলোয় এসেছিলেন কার্লোস মোতা। তিনি বলেন, ‘আমার ছোটবেলা জুড়ে পেলের প্রভাব অপরিসীম। তার বিশ্বকাপ জয় ভোলা যাবে না। উনি গোটা দেশের আদর্শ।’ বার্নার্ডো বলছেন, ‘আমি কোনও দিন পেলেকে খেলতে দেখিনি; কিন্তু তার অনেক ভিডিও দেখেছি। উনি বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার।’ ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এবং দক্ষিণ আমেরিকা ফুটবল সংস্থার সভাপতি আলেসান্দ্রো ডোমিঙ্গেজকে দেখা যায় শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারাও। স্টেডিয়ামে তিনটি বিরাট পতাকা ছিল। তার একটিতে পেলের ছবি এবং ১০ নম্বর জার্সি আঁকা। অন্য একটিতে লেখা ছিল, ‘রাজা দীর্ঘজীবী হোন’। দুপুরের দিকে সাও পাওলোর বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে পেলের স্মরণে মিছিল করা হয়। সেই মিছিল যায় পেলের মায়ের বাড়ির পাশ দিয়ে। ছেলের মৃত্যুর খবর এখনও জানেন না শতায়ু মা সেলেস্তে আরান্তেস। 
 
এরপর সান্তোস স্টেডিয়ামে গিয়ে সেই মিছিল শেষ হয়। ফুটবলের রাজা ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকে শেষ বিদায় জানালেন ভক্তরা। গতকাল সাও পাওলো শহরের বাইরে অবস্থিত সান্তোস এফসির মাঠ ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে রাখা হয় পেলের কফিন। সেখানেই ভক্তরা ফুল দিয়ে তাকে শেষ বিদায় জানান। ফুটবলের রাজাকে শেষ বিদায় দিতে ভোর থেকেই ছিল ভক্তদের ভিড়। সান্তোস এফসিতেই খেলেছেন পেলে। দীর্ঘদিন। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৭৪ সালে পর্যন্ত ১৮ বছর। এ সময়ের মধ্যেই তিনি তিনটা বিশ্বকাপ জয় করেন ব্রাজিলের জার্সিতে। হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি। ভিলা বেলমিরোতেই পেলেকে খেলতে দেখে বিশ্ব ফুটবল মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। শতাব্দী সেরা ফুটবলারের তকমা পেয়েছেন তিনি। পেলেকে এ ক্লাবই শেষ বিদায় জানাল। ফুটবলের রাজাকে বিদায় জানানোর জন্য বিশেষ আয়োজন করে সান্তোস এফসি। তিনটা বিশাল পতাকা টানানো হয়। একটাতে ছিল পেলের বিশালাকারের ছবি। ১০ নম্বর জার্সি পরা ছবি ছিল এ পতাকায়। অপর পতাকায় লেখা ছিল ‘লঙ লিভ দ্য কিং’। তৃতীয় পতাকায় লেখা ছিল পেলে ৮২ বছর। স্টেডিয়ামে ১৬ হাজার মানুষ একসঙ্গে পেলেকে বিদায় জানানোর সুযোগ পেয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা পেলের কফিন ছিল সান্তোস এফসির মাঠে। 
 
ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় শুরু হয় পেলের বিদায় অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান শেষ হয় ২ ডিসেম্বর সকালে। টানা ২৪ ঘণ্টা পেলেকে শেষবারের মতো বিদায় জানানোর সুযোগ পাবেন ভক্তরা। ব্রাজিলের কিংবদন্তির শেষ বিদায়ে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে সাবেক ও বর্তমান তারকা ফুটবলারদের আসার কথা। পেলে ৮২ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান গত বৃহস্পতিবার। দীর্ঘদিন তিনি কোলন ক্যান্সারে ভুগেছেন। কাতার বিশ্বকাপ চলকালীনই তার পরিস্থিতি গুরুতর হয়। হাসপাতালে ভর্তি হন পেলে। সে সময়ই ব্রাজিল দলসহ ফুটবলপ্রেমীরা পেলেকে নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে বিশ্বকাপের শেষদিকে পেলের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে পেলের সুস্থতার খবরও জানানো হয়েছিল। শেষ রক্ষা আর হলো না। কোলন ক্যান্সারে ভুগেই তিনি ইহকাল ত্যাগ করলেন। 
 
ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসের এই মাঠ যেন ফুটবলের রাজা পেলের বাড়ির পাশের উঠান। এখানেই খেলতে খেলতেই তাঁর কিংবদন্তি হয়ে ওঠা। এই মাঠেই চিহ্ন এঁকেছেন অজস্র ফুটবলীয় রূপকথার। অসংখ্য গোল করে সান্তোসকে নিয়ে গেছেন সাফল্যের শিখরে। কত স্মৃতির আলপনা এই ভিলা বেলমিরোয়। শেষযাত্রার সময় তিনি এখানে আসবেন না, সেটি কীভাবে হয়! পেলেকে গতকাল সকালেই আনা হয়েছে সান্তোসের এই মাঠে। এখানেই রাখা হবে তাঁর কফিনবন্দী নিথর দেহ। সকাল থেকেই সান্তোসের সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন পেলেকে। গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত এখানেই রাখা হবে তাঁর কফিন। এরপর শুরু হবে শেষযাত্রা। সান্তোসের বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরানো হবে তাঁর কফিন। পেলেকে নিয়ে যাওয়া হতে পারে তাঁর পৈতৃক ভিটাতেও। সেখানে থাকেন তাঁর শতবর্ষী মা ডোনা সেলেস্তে আরান্তেস। তিনি খুব অসুস্থ। স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছেন আরও আগেই। পেলেকে সমাহিত করা হবে নেকরোপল একুমেনিকাতে। এখানেই সমাহিত হতে চেয়েছিলেন কিংবদন্তি। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পেলের শেষ ইচ্ছা ছিল নেকরোপল একুমেনিকার নবম তলায় তিনি শায়িত হবেন। যেখান থেকে ভিলা বেলমিরোর মাঠটা পরিষ্কার দেখা যায়। তবে তাঁর শেষকৃত্যে ছিলেন শুধুই পরিবারের সদস্যরা।
দেশকণ্ঠ/আসো
 
 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।