স্পোর্টস রিপোর্টার : বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেট শুরুর দিনই সময় নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে আয়োজন কমিটি। খেলা শুরুর কথা ছিল বেলা ২টা ৩০ মিনিটে। খেলা শুরু হয়ে গেল ২টায়! ম্যাচ দেরিতে শুরু হওয়ার অনেক নজির থাকলেও হঠাৎ করে খেলার শুরুর সময় এগিয়ে আনার ঘটনা বিরলই বলা যায়। এতে ভোগন্তিতে পড়েছেন দর্শকরা। ম্যাচ শুরুর পর অধিকাংশ দর্শক মাঠে প্রবেশ করেন। এমনকি মিডিয়াকে এই খবর জানানো হয়েছে মাত্র দুই ঘণ্টা আগে। দীর্ঘদিন পর মাশরাফি মুর্তজা মাঠে নেমেছেন। তার খেলা দেখছে অনেক দর্শক মাঠে এসেছিলেন। উদ্বোধনী দিনে প্রথম ম্যাচটি ছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। পূর্ব নির্ধারিত সূচিতে আড়াইটার কথা বলা হলেও টিকিটের গায়ে ঠিকই দুপুর ২টায় খেলা শুরুর সময় ছাপানো হয়েছে। কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে দর্শকরা ভাবছিলেন মনে হয় ভুল হয়েছে! পরে অবশ্য বিসিবি পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক জানিয়েছেন, ‘সময় পরিবর্তনের বিষয়টি আসলে মিডিয়াতে জানানো হয়নি। এটা মিস কমিউনিকেশন। মিডিয়া জানলে হয়তো দর্শকদের ভোগান্তি হতো না।’
অসময়ের সময়ের বিজ্ঞপ্তি
কতটা অগোছালো হলে এমনটি করা যায়, তারই যেন প্রমাণ দিল বিপিএল গর্ভনিং কাউন্সিল। ম্যাচের সময়েল আগেই শুরু হয়ে গেল খেলা! সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সূচিতে বিপিএলের নবম আসরের প্রথম দিনের খেলা শুরুর সময় ছিল দুপুর আড়াইটা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। গণমাধ্যমের সূত্রে সেই সময়ই জানত সাধারণ মানুষও। কিন্তু দুপুর ১২টার দিকে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় বিসিবির মিডিয়া বিভাগ জানায়, ম্যাচ শুরুর সময় এগিয়ে আনা হয়েছে ৩০ মিনিট করে। শুক্রবার ছাড়া অন্যান্য দিনেও ম্যাচ এগিয়ে এনে দুপুর দেড়টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ম্যাচ শুরুর নতুন সময় জানানো হয়। বিলম্বে জানানোর দায় স্বীকার করে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেছেন, ‘আমরা ২৬ ডিসেম্বরই নতুন সময় ওয়েবসাইটে দিয়েছিলাম।’ যদিও বিসিবির ওয়েবসাইট খুঁজে কোথাও তা পাওয়া যায়নি।
খেলা শুরুর পর আর পরিবর্তন নয়
খেলা শুরু হয়ে গেলে কনকাশন ছাড়া খেলোয়াড় পরিবর্তন করা যাবে না। তবে ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে কেউ চোটে পড়লে প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়কের অনুমতি নিয়ে খেলোয়াড় পরিবর্তন করা যাবে। প্রথমে ব্যাটিং দলের কেউ চোটে পড়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে গেলে ফিল্ডিংয়ে বদলি নিতে পারবে। এ ব্যাপারে বিসিবির আম্পায়ার্স এডুকেটর ও সাবেক ক্রিকেটার এনামুল হক মনি বলেন, ’কনকাশন না হলে রিপ্লেসমেন্ট পাবে না। কাঁধ আর মাথায় খেলার সময় আঘাত পেলে কনকাশন সাব নিতে পারবে। কেউ হয়তো ডাইভ দিয়ে চোট পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে আম্পায়ার একজনকে অনুমোদন দেবে ফিল্ডিং করার জন্য। বিকল্প ক্রিকেটার উঠে গেলে চোট পরিচর্যা করে বোলিং করতে পারবে। এক্ষেত্রে নিয়মের কোন পরিবর্তণ করা হবেনা।
৪০ মিনিট মাঠে থাকা বাধ্যতামূলক
একজন ক্রিকেটার ব্যাটিং বা বোলিং করতে গিয়ে চোট পেলে বাইরে যেতে পারবে। এ ক্ষেত্রে পুরো সময় মাঠের বাইরে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না। টি-টোয়েন্টিতে একজন ক্রিকেটারকে ন্যূনতম ৪০ মিনিট ব্যাটিং বা ফিল্ডিং করতে হয়। ১৭০ মিনিটের মধ্যে নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে ৪০ মিনিট মাঠে থাকতেই হবে।
নকআউট পর্বে ডিআরএস
গত বিপিএল থেকেই ডিআরএসের ব্যবস্থা করতে পারেনি বিসিবি। বিকল্প ডিআরএস দিয়ে খেলা চালাচ্ছে। তবে এবার নকআউট পর্ব বা সুপার ফোর থেকে ডিআরএস থাকবে। ডিআরএস না থাকায় আম্পায়ারদেরও চ্যালেঞ্জটা বেড়ে যায় ম্যাচ পরিচালনার ক্ষেত্রে।
বিদেশির পরিবর্তে স্থানীয় খেলোয়াড়
বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারের পরিবর্তে দেশি ক্রিকেটারকে ফিল্ডিংয়ে নামানো যাবে। অর্থাৎ বিদেশির বদলি দেশি ক্রিকেটার ফিল্ডিং করতে পারবেন। তবে দেশি ক্রিকেটারের পরিবর্তে বিদেশিকে ফিল্ডিংয়ে নামানো যাবে না। কনকাশন সাবের ক্ষেত্রে বিদেশির জায়গায় দেশি নামতে পারবে।
অন্তত দু’জন বিদেশি থাকবেন
একটি দলকে ন্যূনতম দু'জন বিদেশি ক্রিকেটার খেলাতে হবে। কোনো কারণে দু'জন বিদেশি নামাতে ব্যর্থ হলে ১০ জন নিয়ে খেলতে হবে। স্বাস্থ্যহানিজনিত কারণে কোনো বিদেশি না নামাতে পারলে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ৯ জনের দল খেলবে। বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চারজনকে একাদশে রাখা যাবে।
সুশৃঙ্খল দলই বিপিএলে বেশি চ্যাম্পিয়ন
নানা সমালোচনার মধ্যে একটা ভাল পরিসংখ্যানের দেখা মিলেছে। কাগজে-কলমে কয়েকটি দলকে ফেবারিট বলা না গেলেও খেলাটা কুড়ি ওভারের বলেই তাদেরও পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। টুর্নামেন্টের অতীত রেকর্ড বলে, যে ফ্র্যাঞ্চাইজি সুষ্ঠু পরিকল্পনা আর সুশৃঙ্খলভাবে দল পরিচালনা করেছে, তারাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আগের আট সংস্করণে তিনবার করে ঢাকা ও কুমিল্লা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। একবার করে শিরোপা জিতেছে রংপুর আর রাজশাহী। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লাকে নিয়েই যেমন তাদের দলের তারকা ক্রিকেটার মোস্তাফিজুর রহমান কদিন আগে বলছিলেন, ‘কুমিল্লার সঙ্গে আইপিএলের দলের অনেক মিল পাই। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির পেশাদারি নিয়ে প্রশংসা করতেই হবে।’ বর্তমান রানার্সআপ ফরচুন বরিশালও বেশ সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিতভাবে দল সাজিয়েছে। গতবার থেকে তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তো আছেনই। এবার দলের থিংকট্যাংক হিসেবে যোগ দিয়েছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। সাকিব, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো জাতীয় দলের তারকা অলরাউন্ডাররা আছেন দলে। মিরাজের আক্ষেপ, দুবার ফাইনাল খেলেও একবারও শিরোপা জিততে পারেননি।
দেশকণ্ঠ/আসো
স্পোর্টস রিপোর্টার