►মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল
দেশের ক্রীড়াঙ্গনের তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামকে বর্তমানে চেনা মুশকিল। বিশেষ করে কারও যদি স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ থাকে তাহলে অচেনাই মনে হবে। তবে বাইরে থেকে কিছুটা হলেও উন্নয়ন কাজের বিষয়টি টের পাওয়া যায়। গেল ডিসেম্বরে সংস্কার কাজের পর বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও তৈরি হয়নি। কাজ শেষ হতে হতে আগামী জুন মাস কেটে যাবে বলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সুত্রে জানা গেছে। সে হিসেবে ক্রীড়াপ্রেমি মানুষের জিজ্ঞাসা, কতদিনে প্রস্তুত হবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম? তবে জটিলতা তৈরি হয়েছে মাঠের ঘাস নিয়ে। জানা গেছে, মাঠ তৈরিতে মাত্র ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ শত কোটি টাকায় স্টেডিয়াম সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম অর্ধশত বছরেরও বেশি বয়স। ক্রিকেটের জন্য তৈরি করা হলেও এখন ফুটবল খেলাটাই বেশি হয়। তবে এই স্টেডিয়ামের আশপাশ দিয়ে যখন সাধারণ মানুষ চলাচল করেন তখন তাদের অনেকের মধ্যে একটা দীর্ঘশ্বাস ধ্বনিত হয়।
কারণ একটা স্টেডিয়াম আর কত সংস্কার করা হবে, মাঝে মধ্যে সেই প্রশ্নও করে থাকেন অনেকেই। এখন পর্যন্ত কত শত কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে তার শেষ নেই। এখন চলছে ১০০ কোটি টাকার সংস্কার কাজ। খেলার জন্য এই স্টেডিয়াম সংস্কারের কথা বলা হলেও যে মাঠে খেলা হবে সেই মাঠই ক্রীড়া পরিষদের কাছে অবহেলিত। ১০০ কোটি টাকার সংস্কার কাজে মাঠ উন্নয়নে মাত্র ১২ লাখ টাকা বাজেট। একটা স্টেডিয়ামে মাঠই হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাঠ ভালো না হলে খেলা সম্ভব না। মাঠে বৃষ্টি হলে দ্রুত পানি নেমে যাওয়া থেকে শুরু করে একটা মাঠ হতে হয় সবচেয়ে আধুনিক সুযোগসুবিধা সম্পন্ন। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, জাতির পিতার নামের এই স্টেডিয়ামটি আলাদা কদর পায় না, পায় না অগ্রাধিকারও। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ১২ লাখ টাকার বাজেট দিয়ে অবশিষ্ট প্রয়োজনীয় টাকা বাফুফে হতে খরচ করতে বলা হয়েছে।
স্টেডিয়াম উন্নয়ন প্রকল্পে শত কোটি টাকা খরচ করবে আর মাঠ উন্নয়ন করতে গিয়ে বাফুফের কাছে সাহায্য চাইবে। এটা দৃষ্টিকটু। প্রশ্ন হচ্ছে ১০০ কোটি টাকায় সংস্কার করতে গিয়ে আসল যে কাজ মাঠ উন্নয়ন করা, সেই মাঠই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নজরের বাইরে পড়ে গেল। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডামেশন (বাফুফে) এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব ড. মহিউদ্দিন স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন সংস্কার কাজ পরিদর্শন করতে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহ ছিলেন, বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ ছিলেন। সোহাগ জানিয়েছেন, তারা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে অবহিত করেন ১২ লাখ টাকায় মাঠ তৈরি করার জন্য বলা হয়েছিল, বাকি ৫-৭ লাখ টাকা বাফুফে হতে মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেটা করতে পারবে না বাফুফে। পুরোনো স্টেডিয়াম। বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করা হয়েছিল। বার বার এটিকে সংস্কার করা হয়।
সংস্কার করতে গিয়ে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তার সঙ্গে আর কিছু বাজেট যোগ করলে নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা যায় কি না, সেটা ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ভেবে দেখলে বঙ্গবন্ধুর নামের স্টেডিয়ামটি ফুটবল উন্নত দেশের স্টেডিয়ামের সঙ্গে তুলনা করা যেত। এদিকে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজে ঘাস নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) বাফুফে ঠেলাঠেলি চলছে। মাঠের বর্তমান অবস্থা বললে বলতে হবে, মাঠে ঘাস লাগানো হয়েছে। কিন্তু কোথাও ঘাস আছে, কোথাও মরে শুকিয়ে গেছে। ঘাসের নিচেও প্রচুর বালু রয়েছে। অনেকটাই এবড়োখেবড়ো অবস্থা। যা দেখতে অনেকটা ধু ধু মরুভূমির মতোই। মাঠটা সবুজ করে তুলতে আরও কিছু কাজ বাকি। সেই কাজ এনএসসি না বাফুফে করবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। একে অন্যের কোর্টে বল ঠেলছে। এনএসসি বলেছে, বাকি কাজটা বাফুফে নিজস্ব অর্থায়নে যেন করে নিলেই যেন হয়।
অন্যদিকে বাফুফে সাফ বলে দিয়েছে, তারা সেই দায়িত্ব নেবে না। বিষয়টা ব্যাখ্যা করে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে বলেছেন, ‘সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার আগে ও এখন পর্যণÍ বাংলাদেশ পুলিশের মাঠটা যারা করেছে, তাদের আমরা এনএসসির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছিলাম বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে মাঠ তৈরিতে। ওই প্র্রতিষ্ঠান বলেছে, মাঠে সম্পূর্নরুপে ঘাস লাগাতে ১৮-২০ লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু এনএসসি বলছে, মাঠের জন্য তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ লাখ টাকা। ভ্যাট বাদ দিলে যা দাঁড়ায় ১০ লাখ। বাকি টাকা বাফুফে খরচ করে যেন ঘাসের কাজটা করিয়ে নেয়। কিন্তু বাফুফে সেটা করবে না। আমরা এনএসসিকে পরিষ্কারভাবে আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছি।’ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কারে শতকোটি টাকার কাজ হচ্ছে, অথচ যে মাঠে খেলোয়াড়েরা দৌড়াবে, সেখানেই বরাদ্দ এত কম! গ্যালারি, ফ্লাডলাইট এত কিছু করে তাহলে কী লাভ! অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য তো মাঠ নয়, মাঠের জন্যই এত আয়োজন।
দেশের ফুটবলের হোম ভেন্যু হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের আগস্টে। ১৭ মাস হতে চলছে, এখনো কাজ শেষ হওয়ার লক্ষণ নেই। এখন ঘাস লাগানো নিয়ে এনএসসি-বাফুফে ঠেলাঠেলিতে মাঠ তৈরির কাজটা আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে বলেই মনে হচ্ছে। তা ছাড়া ফ্লাডলাইট আর ছাদের একাংশের জন্য সরকারের কাছে এরই মধ্যে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে এনএসসি। সেই বরাদ্দ কবে পাওয়া যাবে, কবে স্টেডিয়াম সংস্কার শেষ হবে, কেউ জানে না। তাইতো কতটা নিশ্চিত আর অনিশ্চিত সেটা নিয়ে হয়তো বলার সময় আসেনি। তবে ফুটবলপ্রেমি মানুষ চায় দ্রুতই কাজ শেষ হোক।
দেশকণ্ঠ/আসো