দেশকণ্ঠ প্রতিবেদক : ঢাকার মাঠে আম্পায়ারিং যেন নিত্যকার এক সমস্যার নাম। সেটি প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ থেকে শুরু করে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগেও অব্যহত রয়েছে। এবার চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) বাজে আম্পায়ারিং অব্যহত রয়েছে। এবার সাথে যোগ হয়েছে এডিআরএস সিস্টেম। মাঠে তাই খেলোয়াড়দের সাথে আম্পায়ারের বাদানুবাদ চলছেই। সেখানে সবার আগের নামটি সাকিব আল হাসানের। আর মাঠের বাইরে থেকে এই তালিকায় যোগ হওয়া নাম মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি শাস্তিও পেয়েছেন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জাকের আলি অনিকের আউট নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। এই ব্যাটার আউট হয়েছিলেন লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বলে। তার আউট নিয়ে পরে সংবাদ সম্মেলনে এসে মন্তব্য করেছিলেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। চিল্লাচিল্লি করলে সাসপেন্ড করবে- এমন মন্তব্যের পর জরিমানা গুনতে হচ্ছে তাকে। ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে জাতীয় দলের সাবেক এই সহকারী কোচকে। একই সঙ্গে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তাকে তিনটি ডিমেরিট পয়েন্টও দেওয়া হয়েছে! এতে অবশ্য সমস্যার সমাধান হয়নি।
ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমে অনুপযুক্ত মন্তব্য করায় এই শাস্তি পেলেন তিনি। সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ আনেন মাঠের দুই আম্পায়ার ডেভিড মিলন্স, মোরশেদ আলি খান সুমন এবং টিভি আম্পায়ার তানভীর আহমেদ ও চতুর্থ আম্পায়ার মুজাহিদুজ্জামান স্বপন। এরপর ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পালের কাছে সাজা মেনে নেওয়ায় আর আনুষ্ঠানিক শুনানির প্রয়োজন হয়নি। বরিশাল ম্যাচের পর সালাউদ্দিন বলেছিলেন, যেভাবে চলছে তাতে করে এডিআরএস থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো আমার মনে হয়। আম্পায়ার যেটা দিয়ে দেবে, সেটা দেওয়াই ভালো। এটা তো একেবারে লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করেছে, এমন না যে...। খালি চোখে যেটা আমরা দেখছি নট আউট, সেটা থার্ড আম্পায়ার আউট দিয়ে দিচ্ছে। কী করতে পারি? আমাদের তো কিছু করার নেই। আমরা মাঠে চিল্লাচিল্লি করি এটা কি চান? এমনিই সাসপেন্ড করে দেবে। ঠিক আছে। যেহেতু খেলা চলছে। প্রতিবাদ করেও তো লাভ নেই। আমরা লিখিত দেব বা প্রতিবাদ করবো সেটা করেও তো লাভ নেই। কোনো লাভ হবে না। আসলে কিছু করার নেই। হাত পা বাঁধা আছে।
বিপিলের নবম আসর মাঠে গড়ানোর আগেই জানা গিয়েছিল ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমে হক-আই না থাকার কথা। ফলে বল ট্র্যাকিং প্রযুক্তির অভাবে লেগ বিফোর উইকেটের সিদ্ধান্তে বাড়তে থাকে বিতর্ক। ঢাকায় বিপিএলের প্রথম পর্বে আলোচিত বিষয় ছিল বিসিবির এডিআরএস, যা স্পষ্টতার বদলে বাড়িয়েছে সংশয়। ঘটনার সূত্রপাত কুমিল্লার রান তাড়ায়। আগে ব্যাট করে ফরচুন বরিশাল ২০ ওভারে করেছিল ৬ উইকেটে ১৭৭ রান। জবাবে কুমিল্লার রান যখন ঠিক ১০০, তখন ইনিংসের ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জাকের আলীকে লেগ বিফোর উইকেট ঘোষণা করেন আম্পায়ার মোর্শেদ আলী খান সুমন। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন জাকের, টিভি রিপ্লেতেও দেখা যায় ইফতেখার আহমেদের করা বলটা পিচ করেছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে। তবুও টিভি আম্পায়ার তানভীর আহমেদ বহাল রাখেন মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। চার বলের ভেতর ২ উইকেট হারিয়ে সেই যে ব্যাকফুটে চলে যায় কুমিল্লা, তারা আর ধরতে পারেনি ফরচুন বরিশালকে।
বল লেগ স্টাম্প লাইনের বাইরে পড়লে এলবিডব্লিউর জন্য বিবেচনাই হবে না, সেখানে আউট দিয়ে দেওয়াটা বিস্ময়কর লেগেছে সালাউদ্দিনের কাছে, আমি জানি না, হয়তো এলবি নিয়ে নতুন কোনো নিয়ম থাকলেও থাকতে পারে। অথবা বল একটু অন্যদিকে টাচ করেছে কিছু একটা। তাই আমার মনে হয় আম্পায়ার যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটা থাকাই ভালো। এমন এডিআরএস দরকার আছে বলে মনে হয় না। জাকের আউট হওয়ার আগে কুমিল্লার রান ছিল ৪ উইকেটে ১০০। ১৩তম ওভারের চতুর্থ বলে এবং ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেট হারানোটাই ছন্দপতন ঘটায় কুমিল্লার। শুধু এ ম্যাচেই নয়, কিছুদিন আগে রংপুর রাইডার্স-ফরচুন বরিশাল ম্যাচেও আউট হওয়ার পর এডিআরএস নিয়ে বাঁচতে না পারা এনামুল হক প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের। এর জন্য গুনতে হয়েছিল ম্যাচ ফির ১৫ শতাংশ জরিমানা। সালাউদ্দিন এসব নিয়ে তাই বেশি কিছু বলতে নারাজ, ‘এ মোমেন্টে আমি আসলে কিছু বলতে পারব না। কারণ এটা নিয়ে সমালোচনা চলছে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেও বলেছিলাম আমরা। কিন্তু খালি চোখে আমরা দেখছি নটআউট, সেটা আম্পায়ার আউট দিয়ে দিচ্ছে, তাহলে আর কী বলার আছে। দিন দুই আগে, ঢাকার এক পাঁচতারকা হোটেলে বিপিএলকে ভালো করার জন্য বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি এবং প্রভাবশালী ক্রিকেট বোর্ড পরিচালকরা।
এডিআরএস ও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্যের পর শাস্তি পেতে হলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে। এদিকে এডিআরএস পদ্ধতি বিপিএলে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয় গত মৌসুমে। গতবার ঢাকা পর্বে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কের পর চট্টগ্রাম পর্ব থেকে এটি চালু করেছিল বিসিবি। এবার প্রথম পর্ব থেকেই আছে এটি। ডিআরএসের বদলে এডিআরএস থাকবে, এ মৌসুম শুরুর আগেই জানানো হয় সেটি। তবে মৌসুমে ৬ দিনে ১২টি ম্যাচের মধ্যেই একাধিক বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এই এডিআরএস। যে বিতর্ক সরাতে এডিআরএসের আশ্রয় নেওয়া, সেটিই বরং নতুন বিতর্ক জন্ম দিচ্ছে বলে এর কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্নটা বড়ই হচ্ছে। গত মৌসুমে বিসিবি বলেছিল, বিপিএল আয়োজনে অনিশ্চয়তা, করোনাভাইরাসের কারণে পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান নেই, এসব কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ডিআরএস আনতে পারেনি তারা। এবার বিপিএল হচ্ছে, বিসিবি সেটি জানায় বেশ আগে থেকেই। তবে এবারও ডিআরএস আনতে ব্যর্থই হয়েছে বিসিবি। সেটি নিয়ে এ মৌসুম শুরুর আগে থেকেই বিসিবিকে বেশ বড়সড় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
এদিকে বিসিবির অদ্ভূদ ব্যাখ্যা দিয়েছে। মাঠে গড়ানোর আগেই বিতর্কের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে বিপিএল। ২০ ওভারের টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বিপিএলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। টাইগার টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ককে সমর্থন দেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। দেশের দুই লিজেন্ড ক্রিকেটার প্রশ্ন তোলার পর বিতর্ক নিয়েই শুরু হয়েছে বিপিএল। ম্যাচে আম্পায়ারিং নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। সমালোচিত ওই আউটের পর বিসিবি আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দিয়েছে। জানিয়েছে, টিভি আম্পায়ার বিপিএলের প্লেয়িং কন্ডিশন অনুসরণ করেছেন। এতে আইসিসির আইন বদলে গেছে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, বলের বেশির ভাগ অংশ বা ৫১ শতাংশ যদি স্ট্যাম্পের লাইনে থাকে, সেটিকে ইন লাইন ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু বিপিএলের প্লেয়িং কন্ডিশনে রয়েছে, বল ইন লাইন স্পর্শ করলে বলটি সঠিক।
দেশকণ্ঠ/আসো