স্পোর্টস রিপোর্টার : অনেকটা নিশ্চিত থাকলেও চান্দিকা হাতুরুসিংহের বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হয়ে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত থাকলেও হঠাৎই অনিশ্চিয়তার ঘেরাটোপে বন্দি হয়ে পড়েছে। লাল সবুজ দলের মাস্টার মাইন্ড হতে অনীহা প্রকাশ করে সেটি বিসিবিকে জানিয়েও দিয়েছেন তিনি। সেখানে হঠাৎ করেই চলে এসেছে শ্রীধরন শ্রীরাম। টি-টোয়েন্টি দলের পরামর্শক হিসেবে বাংলাদেশে আসলেও এখন দৃশ্যপটে হাজির এই ভারতীয়। অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাথে তাঁর পাঁকা কথা হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু, তিনি শেষ মুহূর্তে বেকে বসেছেন।
বলা ভাল, বিসিবিকে ‘ব্যবহার’ করেছেন চান্দিকা হাতুরুসিংহে! পরিবারের সাথে সিডনিতে থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। আর হাতুরু সরে যাওয়ায় পথটা পরিস্কার হয়ে গেল শ্রীরামের জন্য। রাসেল ডোমিঙ্গোর পদত্যাগের পর বিসিবি হাতুরুসিংহেকে ফিরিয়ে আনতে চায় বলে জানা যায়। পাকা কথার পর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্নের কথা ছিল। আসলে, গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালে সিডনিতে বিসিবির সাথে তাঁর বৈঠক হয়। আর সেখানে বেশ কয়েকজন বোর্ড পরিচালকের উপস্থিতিতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে তিনি বাংলাদেশে ফেরার আগ্রহও প্রকাশ করেন। ডোমিঙ্গো চলে যাওয়ার পর হাতুরুসিংহের সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে আগায়। পারিশ্রমিক, চুক্তির মেয়াদ- সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু, আড়ালে যে হাতুরু বিসিবির এই প্রস্তাবটাকে ব্যবহার করছেন, সেটা বোঝা গেল এতদিন বাদে। লঙ্কান এই কোচ নিউ সাউথ ওয়েলসের একাডেমির কোচ হিসেবে পদন্নোতি পেয়েছেন। বেতনও বাড়িয়ে নিয়েছেন। তিনি নিউ সাউথ ওয়েলসের একাডেমির কোচ হিসেবে দায়িত্বই পালন করবেন। বিসিবির প্রস্তাবে না বলে দিয়েছেন তিনি। আসলে ঠিক না বলেননি। তবে, বিসিবি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সাবেক এই কোচের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। তিনি বিসিবি সংশ্লিষ্ট কারো ফোন ধরছেন না। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজের উত্তর দিচ্ছেন না। তাঁকে মেইল করেও পাওয়া যাচ্ছে না।
তার মানে এর অর্থ হল, হাতুরুসিংহে এখন আলোচনার বাইরে। ফলে, দৃশ্যপটে আবারও চলে এসেছেন ভারতের শ্রীধরন শ্রীরাম। শ্রীরামই বাংলাদেশ দলের সাদা বলের কোচ হতে পারেন এমনটাই জানা গেছে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছর। এই সময় হুট করেই ভালোমানের কোচ পাওয়াটা এখন বেশ কঠিনই বটে, আর বিসিবির জন্য সেটা প্রায় অসম্ভবই। ফলে, শ্রীরাম ছাড়া আর কোনো বিকল্পও নেই। তার সামর্থ্য নিয়ে বিসিবির কোনো সংশয় নেই। বিশেষ করে সাকিব আল হাসান নিজে তাঁর ব্যাপারে ইতিবাচক ‘ফিডব্যাক’ই দিয়েছেন বিসিবিকে। টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে শ্রীরামের অধীনে বাংলাদেশ দল এশিয়া কাপ, আরব আমিরাত সিরিজ ও নিউজিল্যান্ডে ত্রি-দেশীয় সিরিজ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে। কোথাও আহামরি কোনো সাফল্য না থাকলেও, দলের ইতিবাচক ইনটেন্ট প্রশংসা কুড়ায়। ওয়ানডে দল নিয়ে বাংলাদেশে শ্রীরামের অভিজ্ঞতা না থাকলেও বিশ্বকাপ ভারতে বলে বাড়তি ফ্যাক্টর হতে পারেন শ্রীরাম।
ভারতের হয়ে আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা শ্রীরাম ভারতের ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যুর কন্ডিশনের তারতম্যটা অন্য যে কারও যে ভাল জানেন। ফলে, আপাতত তাঁর পাল্লাটাই ভারি। এবার টাইগারদের ওয়ানডে দলের কোচ হতে পারেন শ্রীরাম। কথা দিয়েও শেষ পর্যন্ত বিসিবিকে ‘না’ করে দিয়েছেন এই লঙ্কান-অস্ট্রেলিয়ান। ফলে সাকিব আল হাসানদের কোচ হিসেবে আর আসা হচ্ছে না তার। এমন খবর নিশ্চিত করেছে বিসিবির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। এ বছরের অক্টোবরে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে চান্দিকার এমন ‘ইউটার্ন’ বিপাকে ফেলেছে ক্রিকেট বোর্ডকে। তবে কন্ডিশন বিবেচনায় বিকল্প হিসেবে এক্ষেত্রে কপাল খুলতে পারে শ্রীরামের। বাংলাদেশের সাদা বলের কোচ হিসেবে দেখা যেতে পারে এই ভারতীয়কে। বিসিবির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, চান্দিকা না বলাতে প্রাথমিক ভাবনায় আছে শ্রীরামের নাম। তবে এখনও কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। শ্রীরাম অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাসমান সাগরপাড়ে গত বছর বসেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর।
সেখানে অতীতের ব্যর্থতা ঘুচিয়ে নতুন শুরুর লক্ষ্যে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে টাইগারদের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনের সঙ্গে তার পরিচয় থাকায় বাংলাদেশে তাকে নিয়ে আসা। এবারও ঠিক একই কারণে শ্রীরামকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ানডে দলের ভারও বুঝিয়ে দেওয়া হতে পারে। কারণ একদিনের ক্রিকেটের বিশ্বকাপ আসর এবার বসতে চলেছে ভারতে। সেখানকার কন্ডিশন অনেকটাই বাংলাদেশের আদলে। তবুও খুঁটিনাটি অনেক বিষয় বিদেশীদের চিন্তার বাইরে থেকে যায়। তাছাড়া দেশটিতে বাংলাদেশ কখনও ৫০ ওভারের সিরিজ খেলতেও যায়নি। তাই সেখানকার আবহ অচেনাই টাইগারদের কাছে। এক্ষেত্রে শ্রীরামকে পেলে সেসব বিষয়ে সতর্ক হতে পারেন ক্রিকেটাররা। কারণ শ্রীরাম নিজেও একজন ভারতীয়। ভারতের হয়ে খেলেছেন ৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। রয়েছে শতাধিক প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট এ ক্রিকেট ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। হিমাচল প্রদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতেও খেলেছেন ২০১১ সাল পর্যন্ত। তাই ভারতের আলাদা রাজ্যের ভিন্ন ভেন্যুর কন্ডিশনও শ্রীরামের অজানা থাকার কথা নয়। সেই চিন্তা থেকেই বিসিবির ভাবনায় রয়েছে তার নাম। তার অধীনে কন্ডিশনের পাশাপাশি পাওয়ার হিটিংয়ের দিকেও ঝুঁক থাকবে টাইগারদের।
কেননা ভারতের বেশিরভাগ উইকেটই এখন ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্য। তাই শ্রীরাম কোচ হিসেবে এলে এ যাত্রায় বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে তামিম ইকবালদের। তবে তার অধীনে সফলতা পাওয়া নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এই সংস্করণে টেকনিক্যাল কনসালটেন্টের মোড়কে প্রধান কোচ করে আনা হয় তাকে। স্বল্প মেয়াদের চুক্তি থাকা এই কোচের অধীনে বাংলাদেশ খেলেছিল এশিয়া কাপ, আরব আমিরাত সিরিজ ও নিউজিল্যান্ডে ত্রি-দেশীয় সিরিজ। তারপর বিশ্বকাপ। কিন্তু কোথাও ছিল না আহামরি কোনো সাফল্য। এশিয়া কাপে সুপার ফোরে খেলার লক্ষ্য নিয়ে গেলেও বিদায় নিতে হয় গ্রুপ পর্ব থেকেই। শোচনীয় পরাজয় হয় আফগানিস্তানের বিপক্ষে। মূলত পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রীরাম চলে এসেছেন লাইমলাইটে।
দেশকণ্ঠ/আসো