• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১১:৩২

একজন গোলাম রব্বানীর গল্প

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : বাংলাদেশ নারী ফুটবলে অনন্য আর অবিসংবাদিত এক নাম গোলাম রব্বানী ছোটন। সর্বশেষ গত পরশু অনুর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ দল। এই দলেরও কোচ ছিলেন ছোটন। দেশের মহিলা ফুটবল আর কোচ ছোটন যেন এক সূত্রে গাথা হয়ে গেছে। মহিলা ফুটবল মানেই কোচ ছোটন। আর সে সাথে শিরোপাও। অনূর্ধ্ব-১৪ এএফসি রিজিওনাল ফুটবলের দুই ট্রফি এবং হংকংয়ের জকি কাপ যোগ করলে মহিলা ফুটবলের সাতটি শিরোপা লাল-সবুজদের। একই সাথে সাফের বয়স ভিত্তিক ফুটবল মানেই ফাইনালে বা শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত বয়সভিত্তিক সাফের কোনো আসরেই আগে ছিটকে পড়তে হয়নি ছোটন বাহিনীকে। আরেকটি ফাইনালে অনূর্ধ্ব-২০ মহিলা সাফের ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিল নেপাল। সেখানে ৩-০ গোলে জিতে বছরটা শুরু করেছে লাল সবুজ দল। ২০১৫ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত এএফসি রিজিওনাল ফুটবল দিয়ে সাফল্য শুরু। এরপর ছোটনের কোচিংয়ে ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৫, ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ এবং ২০২১ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ ট্রফি জয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গত বছর সিনিয়র সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সে আসরেই প্রথমবারে মতো নেপাল ও ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জয়ের মুখ দেখা। ২০১৬ সালে তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি রিজিওনাল ফুটবলেও বাংলাদেশ দলকে চ্যাম্পিয়ন করান তিনি। সাথে অবশ্য ব্যর্থ হতে হয়েছে ছোটন ও বাংলাদেশ দলকে।
 
২০১৮ ও ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফের ফাইনালে ভারতের কাছে হার, গত বছর অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারা। গত বছর অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে শেষ ম্যাচে নেপালকে হারাতে পারলেই শিরোপা জিতে বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচটি ১-১-এ ড্র হয়। আর ভারতের জামশেদপুরে ট্রফিতে হাত ছোঁয়াতে শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের দরকার ছিল ২-০ গোলে জয়। কিন্তু জয়টি আসে মাত্র ১-০ গোলে। এবার ফুটবলে আবারও মেয়েদের হাত ধরে এলো সফলতা। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর জাতীয় দল সাফ চ্যাম্পিয়ন জয় করে পুরো দেশকে উৎসবে মাতিয়েছিল। এবার তাদেরই অনুজরা এনে দিল আরও একটি শিরোপা। গতকাল মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করে বাংলাদেশের মেয়েরা কমলাপুরের মাঠে ভিক্টরি ল্যাপ সম্পন্ন করেই কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনকে ঘিরে উৎসবে মেতে ওঠেন। কয়েক হাজার দর্শক মেয়েদের উৎসবে শামিল ছিল গ্যালারিতে। পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দের বন্যা। 
 
২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য দারুণ এক দিন। সেদিন আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয় করেছিল বাংলাদেশের যুবারা। তিন বছর পর একই দিনে এলো আরও একটি সাফল্য। ফাইনালে বেশ লড়াই হয়েছে। ম্যাচে দুই পক্ষেই চলছিল আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ। ফুটবলে মেয়েদের হাত ধরেই নিয়মিত আসছে সফলতা। গত বছর মেয়েদের মূল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেছে বাংলাদেশ। সাবিনা খাতুনদের অর্জনে উৎসব করেছিল পুরো দেশ। এরও আগে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে জয় করে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। হংকংয়ে ২০১৫ সালে জয় করে জকি ক্লাব গার্লস ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ফুটবল টুর্নামেন্ট। ২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০২১ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপও জয় করেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ফুটবলে মেয়েদের হাত ধরে আবারও সফলতা এলো। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পুষিয়ে রাখা আক্ষেপ ফুরানোর আনন্দ শামসুন্নাহারের। এবার যে তিনি দলের কোচও।
 
জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড় শামসুন্নাহার জুনিয়রের নেতৃত্বে এর আগে দুইবার বয়সভিত্তিক সাফের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু একবারো শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি। এবার আক্ষেপ ফুরলো কলসিন্দুরের এই মেয়ের। তার নেতৃত্বেই অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৫ গোল করে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন শামসুন্নাহার। দলকে শিরোপা জিতিয়ে আক্ষেপ ফুরনোর কথা জানালেন তিনি, ’এবারের শিরোপা জয় করার মধ্যদিয়ে অনেক শিহরণ অনুভব করছি। এর আগে দুই আসরে অধিনায়কত্ব করে ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি, এই প্রথম শিরোপা জিতলাম। আমাকে নিয়ে সবার একটা আক্ষেপ ছিল। বলত, তুমি কেন শিরোপা আনতে পারো না? তোমার হাতে ট্রফি নাই। এবার আমি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েছি, আশা করেছি, এবার ঘরের মাঠে খেলা, ট্রফিটা যেন ঘরেই থাকে। সবচেয়ে বড় পাওয়া অধিনায়ক হিসেবে আমি চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, আমার টিম চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এটা ভাগ্যের ব্যাপার’। তবে অর্জনের মধ্যে একটা কষ্ট আছে দলের। তিনি অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলের গোলরক্ষক কোচ। কিন্তু সেই কি না থেকে গেলেন উপেক্ষিত! টুর্নামেন্ট জুড়েই মাসুদ আহমেদ উজ্জ্বল ছিলেন রুপনা চাকমাদের দায়িত্বে। অথচ চ্যাম্পিয়ন পদক পেলেন না তিনি। বৃহস্পতিবার সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশ দল যখন শিরোপা উৎসবে মেতে উঠেছে, তখন মাঠ ছেড়ে গেছেন সাবেক এই ফুটবলার। তাকে যে রাখাই হয়নি পদক তালিকায়। কর্তাদের মঞ্চে ওঠার সুযোগ করে দিতেই কেটে দেওয়া হয়েছে তার নাম।
 
বাংলাদেশের এই দলটির কর্মকর্তাদের তালিকা বেশ দীর্ঘ। ২৩ সদস্যের ফুটবলারদের সঙ্গে রাখা হয়েছে ১৪জন কোচ-কর্মকর্তা। বাংলাদেশের এই দলের দল নেতা দুজন। ম্যানেজারের সঙ্গে আছেন দু’জন সহকারী ম্যানেজারও। এর বাইরে রাখা হয়েছে টেকনিক্যাল ডিরেরক্টর পল স্মলিকেও। বৃহস্পতিবার ফাইনালে ডাগআউটে অবশ্য সাতজন অফিসিয়ালের মধ্যে ছিলেন উজ্জ্বলও। অথচ পুরস্কার বিতরনীর সময় দেখা যায় পদক তালিকায় উঠে গেছেন দল নেতা-২ জাকির হোসেন চৌধুরী ও দুই সহকারী ম্যানেজার টিপু সুলতান এবং নুরুল ইসলাম নুরুর নাম। নিজের নামের ঘোষণা শুনতে না পেয়ে মাঠ ছেড়ে যান উজ্জ্বল। পরে অবশ্য খেলোয়াড়দের অনুরোধে পুরস্কার বিরতনীর পর মাঠে ফিরেছিলেন তিনি। তবে তার চোখে-মুখে ছিল হতাশার ছাপ।
দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।