• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০১:৩৪

এক মালানেই স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে অবশেষে হাসিমুখে মাঠ ছাড়ল ইংল্যান্ড। এক ডেভিড মালানের কাছেই হারতে হলো বাংলাদেশকে। এই ব্যাটারের অপরাজিত সেঞ্চুরিই দিনশেষে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। অল্প পুজি নিয়ে বোলারদের লড়াইটা হতাশায় পরিণত হলো। ৩ উইকেটের হারে তামিম ইকবালের দলকে মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হলো। পুঁজি মাত্র ২০৯ রানের।
 
উইকেট যেমনই হোক, ওয়ানডে ম্যাচে এমন পুঁজি নিয়ে জেতার স্বপ্ন দেখা বাড়াবাড়িই ছিল। তবে বাংলাদেশের বোলাররা সাধ্যের সবটুকু নিংড়ে দিলেও কাজ হয়নি। জয়ের ভালো সম্ভাবনাই তৈরি করেছিলেন তারা। কিন্তু সেই সম্ভাবনা আর স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ করে দিলেন ডেভিড মালান। ইংল্যান্ডের বাঁহাতি এই টপঅর্ডার বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে হাঁকালেন লড়াকু এক সেঞ্চুরি। বলতে গেলে এক মালানের কাছেই হেরে গেলো বাংলাদেশ। ২১০ রান তাড়া করতে নেমে অবশ্য ১০৩ রানেই ৫ উইকেট হারিয়েছিল ইংলিশরা। এরপর মঈন আলিকে নিয়ে অনেকটা সময় কাটিয়ে দেন ডেভিড মালান। 
 
তখন ম্যাচটা ক্রমেই ইংল্যান্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ছিল। এমন সময় আবার আশা জাগান মিরাজ। ১৪ করা মঈনকে করেন বোল্ড। এরপর ক্রিস ওকস ৭ করে হন তাইজুলের শিকার। ১৬১ রানে ৭ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। পাল্লা তখন আবার ঝুঁকে পড়েছে বাংলাদেশের দিক। কিন্তু মালান অনেকটা মাথা ঠাণ্ডা রেখে সে জায়গা থেকে বের করে নিয়ে এলেন ম্যাচ। মিরপুরে বাংলাদ-ইঙ্গ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটি ৩ উইকেট আর ৮ বল হাতে রেখে জিতেছে ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচ সিরিজে তারা নিয়েছে ১-০ লিড। মালান ১৪৫ বলে ৮ চার আর ৪ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১১৪ রানে। অথচ ৬৫ রানে ইংল্যান্ডের ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে ডেভিড মালান আর উইল জ্যাকস প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ৫৭ বল খেলে গড়া তাদের ৩৮ রানের জুটিটি অবশেষে ভাঙেন মেহেদি হাসান মিরাজ। 
টাইগার অফস্পিনারের বলে তুলে মারতে গিয়ে ডিপমিডউইকেটে আফিফ হোসেন ধ্রুব’র ক্যাচ হন জ্যাকস। ৩১ বলে তিনি করেন ২৬ রান। অল্প পুঁজি নিয়ে শুরুটা কিন্তু দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। প্রথম ওভারেই সাকিব আল হাসানের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আর বল হাতে নিয়েই ইংলিশ শিবিরে কাঁপন ধরান সাকিব। ওভারের প্রথম বলটিতেই পেতে পারতেন উইকেট। সাকিবকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছিলেন জেসন রয়। তবে সেই ক্যাচটি সাকিব ধরে রাখতে পারেননি। শেষ বলে আরও একবার ভুল করে বসেন রয়। এবার সাকিবকে তুলে মারতে গিয়ে মিডঅফে ক্যাচ তুলে দেন ইংলিশ ওপেনার। তামিম ইকবাল ধরেন সেই ক্যাচ। এসে সাকিবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাতেন উদযাপনে। রয় আউট হন ৪ রানে। ৪ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। সাকিব প্রথম ওভারে আঘাত হানার পর অনেকটা সময় উইকেট টিকিয়ে রেখেছিল ইংল্যান্ড। অবশেষে নবম ওভারে এসে বাংলাদেশ শিবিরে হাসি ফেরান তাইজুল ইসলাম। 
 
বাহাতি তাইজুলের ঘূর্ণি ডেলিভারি মিস করে লেগস্টাম্প হারান ফিল সল্ট। বোল্ড হওয়া ইংলিশ ওপেনার ১৯ বলে করেন ১২ রান। তাইজুল অল্প সময়ের ব্যবধানে তুলে নেন তার দ্বিতীয় উইকেট। বাঁহাতি স্পিনারের ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে এবার স্টাম্পিং হন জেমস ভিন্স (৬)। ১৩তম ওভারে ৪৫ রানে ইংল্যান্ড হারায় ৩ উইকেট। দুই স্পিনারের পর উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন পেসার তাসকিন আহমেদও। তুলে নেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইংলিশ অধিনায়কের উইকেটটি। তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন জস বাটলার (৯)। প্রথম স্লিপে দারুণ এক ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৭তম ওভারে ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা। এর আগে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৪৭.২ ওভারে ২০৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত করেন ৫৮ রান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩১ আর তামিম ইকবাল ২৩ রান। বাকিরা কেউ বিশের ঘরও ছুঁতে পারেননি। 
ওপেনার লিটন দাস ৭, মুশফিকুর রহিম ১৬, সাকিব আল হাসান ৮, আফিফ হোসেন ধ্রুব ৯ আর মেহেদি হাসান মিরাজ আউট হন মাত্র ৭ রান করে। শেষদিকে তাসকিন আহমেদের ১৪ আর তাইজুল ইসলামের ১০ রানে কোনোমতে দুইশ পার হয় টাইগাররা। ইংল্যান্ডের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন জোফরা আর্চার, মার্ক উড, মঈন আলি আর আদিল রশিদ।
 
অথচ একবার বাংলাদেশের পক্ষে তো আরেকবার ইংল্যান্ডের দিকে-যেন পেন্ডুলামের মতো দুলছিল ম্যাচের ভাগ্য। লো স্কোরিং ম্যাচে উত্তাপ ছড়াচ্ছিল প্রতিমুহূর্তে। তবে শেষ পর্যন্ত ডেভিড মালানের হার না মানা শতরানের ইনিংসে সওয়ার হয়ে ৩ উইকেটের জয় তুলে নিল ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচ সিরিজে সফরকারীরা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। মিরপুরে কদিন আগেই ভারতবধের সাক্ষী থেকেছে ক্রিকেটবিশ্ব। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে সাদামাটা একটা সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল টিম টাইগার্স। তবে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার দিনে মিরপুরের পিচে বল হাতে দাপট দেখালেন তাইজুল-তাসকিনরা। আর তাতে ইংলিশবধের আশা দেখছিল লাল-সবুজের সমর্থকরা। তবে এক মালানের কাছেই হেরে গেল তামিম ইকবাল বাহিনী। এদিকে হারা ম্যাচে মিরপুরের গ্যালারিতে দর্শক কম কেন সেই প্রশ্ন করেছেন মাঠে উপস্থিত অনেকেই। হোম অব ক্রিকেট মানেই যেন দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়, উল্লাস আর লাল-সবুজের শোভাযাত্রা। তবে এবার মিরপুর শেরে-ই বাংলা স্টেডিয়ামে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাই-ভোল্টেজ সিরিজের প্রথম ম্যাচে বুধবার মিরপুরের গ্যালারিতে তেমন দর্শক উপস্থিতি দেখা গেল না। যদিও ম্যাচের আগের দিন মঙ্গলবার টিকিট কিনতে দেখা গেছে হাজার হাজার দর্শককে। তবে বুধবারের চিত্রটা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও স্টেডিয়ামের অর্ধেকও পূর্ণ হয়নি। এমনকি মিরপুরের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডেও ছিল দর্শকদের কমতি। 
 
সবশেষ ঘরের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজেও মিরপুরের গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। তবে ইংল্যান্ড সিরিজে ঠিক তার উল্টোটা। বিশেষ করে সর্বনিম্ন দামের ২০০ টাকার ইস্টার্ন স্ট্যান্ড গ্যালারির দিকে তাকালে বোঝা যাচ্ছে ঠিক কতটা দর্শক কম হোম অব ক্রিকেটে! যেখানে এই গ্যালারিতে প্রতিটি ম্যাচেই উপচেপড়া ভিড় থাকে সেখানে প্রথম ম্যাচে শুধুই হাহাকার। যদিও বিকাল নাগাদ কিছুটা সিট পূরণ হলেও বেশিভাগ জুড়েই রয়েছে ফাঁকা। নানা সমস্যায় পড়ে এখন মাঠ বিমুখ হয়ে পড়েছে দর্শকরা। শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ। জয় ছাড়া বিকল্প নেই লাল সবুজ দলের।
দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।