দেশকণ্ঠ প্রতিবেদন : ২০৯ রানের মামুলি পুজি নিয়ে যতটুকু লড়াই করার বোলাররা সেটাই করেছেন। ৩ উইকেটে হেরে সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাই জয়ের বিকল্প নেই। বিশেষত যদি সিরিজে টিকে থাকতে হয় তাহলে জয় পেতেই হবে। এমন পরিস্থিতিতে তিন ম্যাচের সিরিজ জিততে হলে বাকি দুই ম্যাচই জিততে হবে। মাঠের বাইরে সাকিব-তামিমের মধ্যকার তিক্ত সম্পর্কটা মাঠেই প্রমাণ হয়েছে। তবে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার নাম ডট বল। প্রথম ওয়ানডেতে ডট বলই হয়েছে ১৭৫টি। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা স্কোরিং শট কম খেলেন, ১৯৯০ সালে এমন অভিযোগ করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন অধিনায়ক অ্যালান বোর্ডার। শারজাহতে অস্ট্রেলেশিয়া কাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেবারই প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের ফল ছিল পূর্বানুমিত। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের মনঃপূত হয়নি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আজহার হোসেন সান্টু, গাজী আশরাফ হোসেন লিপুদের ব্যাটিং। বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যবচ্ছেদ করে জানিয়েছিলেন ওয়ানডে ক্রিকেটে যা সবচেয়ে জরুরি, সেই স্কোরিং শটটাই নেই ব্যাটিংয়ে। বাংলাদেশের ব্যাটাররা ডট বল বেশি খেলেন। ৩৩ বছর বছর পরও সেই একই চিত্র দেখা গেল বুধবার।
হোম অব ক্রিকেট মিরপুরের পরিচিত উইকেটে ইনিংসের ৬১.৬২ শতাংশই ডট দিয়েছেন তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। ৪৭.২ ওভার ব্যাটিং তামিম বাহিনীর সংগ্রহ ২০৯ রান। ইংলিশ বোলার ক্রিস ওকস, জোফরা আর্চার, মার্ক উড, মঈন আলি, আদিল রশিদ, উইল জ্যাকসরা ডট বল নিয়েছেন ১৭৫টি। তামিম বাহিনীর স্কোরিং শট ছিল ৩২.৩৮ শতাংশ! ইনিংসে টাইগাররা বাউন্ডারি মেরেছেন ১৭টি এবং ছক্কা ৩টি। ইনিংসে একমাত্র হাফসেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন শান্ত। ক্যারিয়ার এটা তার প্রথম হাফসেঞ্চুরি। ৮২ বলে ৫৮ রানের ইনিংসটির স্ট্রাইক রেট ছিল ৭০.৭৩। ডট বলেরই খেসারত গুনলো বাংলাদেশ ৩ উইকেটে হেরে। মিরপুরের পরিচিত উইকেটে ইনিংসের ৬১.৬২ শতাংশই ডট দিয়েছেন তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। ৪৭.২ ওভার ব্যাটিং তামিম বাহিনীর সংগ্রহ ২০৯ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটে হরহামেশাই ৩০০ রান করছে দলগুলো। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ২৩ বার ৩০০’র উপর রান করেছে। ৪০০’র উপর স্কোর হয়েছে ২২টি।
সর্বোচ্চ দলগত স্কোর ইংল্যান্ডের ৪ উইকেটে ৪৯৮। অবিশ্বাস্য! বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ৮ উইকেটে ৩৩৩। প্রথম ম্যাচে পরিচিত উইকেটে টস জিতে ব্যাটিং করে ২০৯ রান করে ৪৭.২ ওভারে। ১০ ওভারের পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৫৪ রান করেছিল তামিম বাহিনী। শুরুর এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি টাইগাররা। উইকেটে বাউন্স ছিল বেশি এবং বল ঘুরছিলও। ইংলিশ তিন পেসার ওকস, আর্চার ও উডের গতি, সুইং ও বাউন্সের বিপক্ষে খুব সাবলীল ছিলেন না তামিমরা। টাইগার অধিনায়ক আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাটিং করেছেন। ৭১.৮৭ স্ট্রাইক রেটে ৩২ বলে ২৩ রান করেন। লিটন ছক্কা হাঁকানোর পরের বলে লেগ বিফোর হন। ৪৭.০৫ স্ট্রাইক রেটে মুশফিক ৩৪ বলে ১৬, সাকিব ১২ বলে ৮, মাহমুদউল্লাহ ৬৪.৫৮ স্ট্রাইক রেটে ৪৮ বলে ৩১, আফিফ ১২ বলে ৯, মিরাজ ১৯ বলে ৭ রান করেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন ওভার প্রতি ৭, ৮ রান করে তুলছে দলগুলো। ১৫০, ১৬০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করছেন ব্যাটাররা। এদিকে কোচ হিসেবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ফিরে আসার পর সাকিবকে পাঁচ নাম্বারে ব্যাট করতে পাঠালেন, কিন্তু কেনসেই উত্তরই পাওয়া যাচ্ছেনা। জায়গাটা তার স্থায়ী হয়ে ছিল। নিজেকে এমনভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন সঙ্গে এমন কিছু করেছিলেন যে তাকে নড়ানো স্রেফ নিজেদের বিপদ ডেকে আনার মতোই। কিন্তু সময়-অসময়ে বিশেষ প্রয়োজনে তাকেও ছেড়ে দিতে হয়েছিল স্থান।
এবার যেমনটা হলো! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব আল হাসান নেই তার পছন্দের পজিশনে। তামিম ইকবাল একাদশে ফেরায় ফিরেছেন ওপেনিংয়ে। ওয়ানডে অধিনায়কের সঙ্গী লিটন দাশ। তিনে নাজমুল ইসলাম শান্ত। চারে মুশফিকুর রহিম। পাঁচ নম্বরে সাকিব। পাঁচ বছর আর ২৯ ইনিংস পর সাকিব এতোটা নিচে ব্যাটিংয়ে নামলেন। ১২ বলে ১ চারে ৮ রান করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে ফিরেন। সাকিবের ব্যাটিং পজিশন কেন নাড়াচাড়া হলো তা জানা থাকলেও বলতে চাইলেন না নির্বাচকরা। টিম ম্যানেজমেন্টর সিদ্ধান্তর কথা বললেন নির্বাচক কমিটির প্রধান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। ভারতের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতে সাকিব চার নম্বরে এবং শেষটায় তিনে নেমেছিলেন। তামিম না থাকায় মধ্যভাগে নির্ভরযোগ্য কাউকে রাখতেই সাকিবকে চারে পাঠানো হয়েছিল। সঙ্গে ঢাকা লিগে দুর্দান্ত পারফর্ম করে ফেরা এনামুল হক বিজয়কেও বাজিয়ে দেখা হয়েছিল। কিন্তু গোটা সিরিজেই এনামুল নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। ভালো করেননি ক্রমাগত সুযোগ পাওয়া শান্তও। তাইতো সাকিবই ছিল ভরসা। প্রথম ওয়ানডেতে ২৯ ও শেষটায় করেছিলেন ৪৩ রান।
এদিকে প্রথম ওয়ানডেতে এক ডেভিড মালানের শতকের পেছনে লুকিয়ে আছে নানা রহস্য। ইংলিশদের জন্য বাংলাদেশের কন্ডিশন কঠিন হলেও মালানের কাছে তা অপরিচিত নয়। ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) খেলেছেন প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে। প্রিমিয়ার লিগে এর আগে সাতটি ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলেছেন। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে সেটি নিয়ে স্মৃতিচারণা করে ম্যাচসেরা মালান বলেন, ‘তাদের হয়ে দুটি মৌসুম খেলা দুর্দান্ত ছিল, আমার খেলায় সাহায্য করেছে। ইংল্যান্ডে তো উইকেটের স্কয়ারে খেলা যায়। এখানে দিনের বেলা বল স্কিড করে, তবে পরে গতি কমে আসে। ফলে ইংল্যান্ডের চেয়ে ভিন্নভাবে স্পিন খেলা শিখেছিলাম। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর আগে তো এটি আমার খেলায় উন্নতি করতে দারুণ সহায়তা করেছে। ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে যত খেলবেন, খেলারও উন্নতি হবে। অতীতে সফল হোন বা না, ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে শেখার সুযোগটা দারুণ। এখানে কিছু অভিজ্ঞতা আছে আমার।’
দেশকণ্ঠ/আসো