মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : ২৪৬ রানের মামুলি সংগ্রহ নিয়ে ইংল্যান্ডের মতো দলের বিরুদ্ধে জয় আশা করা ছিল কঠিন। সেই কঠিন কাজটিই সাকিব ব্যাটের পর বোলিংয়ে সম্পন্ন করেছেন। ৫০ রানের জয়ে দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে দারুণ প্রস্তুতি নিয়ে রাখল জশ বাটলারের দল। ৭ বছর পর ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে তামিম ইকবালের দল।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ছিল একেবারেই ফাকা। বাংলাদেশের জন্য সম্মান রক্ষার হলেও সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেটা ইংল্যান্ডের জন্য ছিল কেবলই নিয়ম রক্ষার ম্যাচ। তবে বাংলাদেশের জন্য এটা ছিল মান বাঁচানোর লড়াই। অবশেষে মান রক্ষা করেছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দল।
পরে ব্যাট করে ২৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভালো শুরু করেছিলেন দুই ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় এবং ফিল সল্ট। তাদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বিনা উইকেটে দলীয় হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু এরপর স্কোরবোর্ডে আর ৫ রান যোগ করতেই ৩ উইকেট হারায় সফরকারীরা। ৫৫ রানের মধ্যে ইংলিশদের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে ফিরিয়ে ভালোভাবেই ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। সাকিব ২টি এবং এবাদত এক উইকেট তুলে নেন ১ রানের ব্যবধানে। এরপর স্যাম কারেন এবং জেমস ভিন্সের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। তবে কারানকে ২৩ রানে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন মিরাজ। কারেনের পর বাটলারের সঙ্গেও জমে যাচ্ছিল জেমস ভিন্সের জুটি। তবে সেটা করতে দিলেন না সাকিব। এই স্পিনারের আর্ম ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে উইকেট কিপারের হাতে ধরা পড়েন ভিন্স।
আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪৪ বলে ৩৮ রান। পরের ওভারেই বোলিংয়ে এসে মঈন আলীকে ফিরিয়ে দেন এবাদত হোসেন। লেগ স্টাম্পের ওপর করা দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে এই অলরাউন্ডারকে সরাসরি বোল্ড করেন এই টাইগার পেসার। ২ রানের বেশি করতে পারেননি মঈন। ১৩০ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানোর পর ক্রিস ওকসকে সঙ্গে নিয়ে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন জস বাটলার। তবে ২৬ রানে কাটা পড়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক। তাইজুলের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়লে রিভিউ নেন বাটলার, তবে তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। এরপর ওকস এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করেছেন। তবে সেটা কেবলই ব্যবধান কমিয়েছে।
লেজের সারির ব্যাটাররা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। আদিল রশিদ-রেহান আহমেদরা দ্রুত সাজঘরে ফিরে যান। এই দুইজনের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ৪৩ ওভার ১ বলে ১৯৬ রান তোলে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের হয়ে ৩৫ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট শিকার করে দলের সেরা বোলার সাকিব। এদিন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩০০তম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৮ ওভার ৫ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান করে বাংলাদেশ। যেখানে সর্বোচ্চ ৭৫ রান আসে সুপার সাকিবের ব্যাট থেকে। তাছাড়া হাঁফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। এর আগে শুরুতেই বিপর্যয় ঘটানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন লিটন দাস এবং তামিম ইকবাল। ১৭ রানের মাথায় দুই ওপেনার বিদায় নেয়ার পর বিপর্যয় কাটিয়ে তোলেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মুশফিকুর রহিম। দু’জনের ব্যাটেই দেখা মেলে হাফ সেঞ্চুরির। এরপর হাফ সেঞ্চুরি করেন সাকিব আল হাসানও। এই তিন হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করে শেষ ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের সামনে ২৪৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি টাইগাররা। ৪৮.৫ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় তারা। সর্বোচ্চ ৭৫ রান করেন সাকিব আল হাসান, ৭০ রান করেন মুশফিকুর রহিম এবং ৫৩ রানে রানআউট হন নাজমুল হোসেন শান্ত।
ব্যাটিং ইউকেটের ধারনা করা গেলেও বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড কোন দলই পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেনি। চট্টগ্রামের উইকেট শুকনো, শক্ত। ব্যাটিং বান্ধব। যে কারণে টস জিতেই ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন অধিনায়ক তামিম। কিন্তু ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারালেন লিটন দাস। প্রথম ওভারেই স্যাম কারানের বলে খোঁচা দিতে যান লিটন। কিন্তু ব্যাটের প্রান্ত ছুঁয়ে বল গিয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে। ইনিংসের পঞ্চম বলে স্কোরবোর্ডে এক রান জমা হতেই উইকেট হারান লিটন। যদিও তার নামের পাশে ৩ বল খেলেও কোনো রান নেই। এবারের সিরিজে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন খুব সম্ভাবনাময় ব্যাটারের স্বীকৃতি পাওয়া লিটন দাস।
প্রথম ম্যাচে ৭ রান। পরের দুই ম্যাচে দুটি ডাক মেরেছেন তিনি। লিটন আউট হয়ে যাওয়ার পর উইকেটে থিতু হতে পারলেন তামিম ইকবালও। বাংলাদেশ দলের অধিনায়কও আউট হলেন স্যাম কারানের বলে। ইনিংসের তৃতীয় এবং কারানের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে জিমস ভিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান তামিম ইকবাল। আউট হওয়ার আগে তিনি স্কোরবোর্ডে যোগ করে দিয়েছেন ১১ রান। খেলেছেন ৬টি বল। ১৭ রানের মাথায় এই দু’জন আউট হওয়ার পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে শান্ত এবং মুশফিক মিলে বাংলাদেশ দলকে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে যান। এ দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ৯৮ রানের দুর্দান্ত একটি জুটি। তাদের এই জুটির ওপর ভর করে বাংলাদেশের রান ১০০ পার করে। এরই মধ্যে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন শান্ত এবং মুশফিক দু’জনই। শান্ত ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন এই সিরিজেই। এবার পেলেন দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরির দেখা। ৬৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণের পর অবশ্য বেশিক্ষণ আর উইকেটে থাকতে পারেননি। দুর্ভাগ্যের রানআউটে কাটা পড়তে হয়েছে শান্তকে। ৭১ বলে ৫৩ রান করে রানআউট হয়ে যান তিনি। এরপর সাকিব একাই দলকে টেনে নিয়ে যান। আর সিরিজের একমাত্র জয়ে দারুণ ভুমিকা রাখেন। জিতে নেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
দেশকন্ঠ/আসো