আরিফ সোহেল : এক ম্যাচে ৪টি অনন্য-অসাধারণ রেকর্ড; এ যেন ক্রিকেটের একটি বিরল দিন। অগ্নিঝরা মাসের ১৮ মার্চ রেকর্ডঠাসা এক বিস্ময়কর ম্যাচ দেখল বাংলাদেশ। এমন ভালো দিনের আশায় ক্রিকেটে অনেক দিনই কেটে যায়। প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই তেমন এক গৌরবময় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছিল ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান। ওয়ানডেতে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নটিংহ্যামে ৩৩৩ রান ছিল এতদিন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। জবাব দিতে নামা সফরকারীদের মাত্র ১৫৫ রানে; তাও৩০.৫ ওভারেই গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। রেকর্ড রানের ম্যাচে সর্বোচ্চ ১৮৩ রানের রেকর্ড জয় তুলে নিয়েছেন সাকিব-হৃদয়-মুশফিক-ইবাদত-নাসুম-তাককিনরা। এর আগে রানের হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ১৬৯ রানের। ২০২০ সালে এই সিলেটেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এসেছিল সেই জয়।
বিশাল রানের বোঝা মাথায় নিয়ে খেলতে নেমে শুরুটা মন্দ ছিল না সফরকারী আয়ারল্যান্ডের। এর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় তারা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেছেন জর্জ ডকরেল ৪৫। এছাড়া স্টিফেন ডেহেনে ৩৪ এবং পল স্টিল ২২ রান করেন। বাংলাদেশের হয়ে দুরন্ত বোলি করেছেন ইবাদত হোসেন ৪/৪২। এছাড়া স্পিনার নাসুম ৩/৪৩, তাসকিন ২/১৫ এবং সাকিব ১/২৩ তুলে নিয়ে সফরকারীদের বড় হারের পথ নিশ্চিত করেন। এই ম্যাচে মুশফিকুর রহীম ৬টি ক্যাচ নিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। উইকেটের পেছনে এর আগে ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে মুশফিক নিয়েছিলেন ৫টি ক্যাচ। ১৮ মার্চ ৬টি গড়লেন বিশ্ব রেকর্ডও।
এর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৫ রানে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল (৩)। আরেক ওপেনার লিটন দাস উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছিলেন। দারুণ তিনটি শটও দেখা যায় তার ব্যাটে। তবে ব্যক্তিগত ২৬ রানে ক্যাম্ফারের বল বুঝতে না পেরে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন। তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত বড় স্কোর গড়তে পারেননি। ৩৪ বলে ২৫ রান করে ম্যাকব্রেইনের বলে বোল্ড হয়ে যান।
সাকিবের পর হৃদয়- দুজনই ৯০ রান পেরোলেও সেঞ্চুরির দেখা পেলেন না। একাধিক ব্যাটসম্যান ৯০ পেরিয়েও সেঞ্চুরির দেখা পাননি, এক ম্যাচে বাংলাদেশের এমন ঘটনা এই প্রথম। অভিষেক ম্যাচে এর আগে ৫ ব্যাটার নব্বয়ের ঘরে আউট হয়েছেন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে তৌহিদ হৃদয়; আউট হয়েছেন ৯২ রানে। ২০০৬ সালে এউইন মরগান আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই ৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন।
৮১ রানে ৩ উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান এবং অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়। ৬৫ বলে ফিফটি তুলে নেন সাকিব। এরপর হাত খুলে মারতে থাকেন। এই ম্যাচেই দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ২২৭ ওয়ানডের ২১৫ ইনিংসে ৬৯৭৬ রান করেছিলেন সাকিব। ২৪ রান দূরে থেকে প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামেন তিনি। বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের ২০তম ওভারের পঞ্চম বলে ১ রান নিয়ে ৭ হাজার রান পূর্ণ করেন সাকিব। এই ফরম্যাটে ৩শ উইকেটও আছে এই অলরাউন্ডারের। ২০০৬ সালের আগস্টে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় সাকিবের। ইতোমধ্যে ৯টি সেঞ্চুরি ও ৫২টি হাফ-সেঞ্চুরির মালিক তিনি। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রান স্পর্শ করেন তামিম। ২৩৫ ম্যাচের ২৩৩ ইনিংসে ৮১৪৬ রান আছে তামিমের।
অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়ও ৫৫ বলে তুলে নেন ফিফটি। ৩৫তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর দুইশ ছাড়ায়। সবাই যখন সাকিবের সেঞ্চুরির অপেক্ষা করছে, ঠিক তখনই ছন্দপতন। হুমের করা অফস্টাম্পের অনেক বাইরের একটা বলকে জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা মারতে গিয়ে মাত্র ৭ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন সাকিব। তার ৮৯ বলে ৯৩ রানের ইনিংসে ছিল ৯টি বাউন্ডারি।
এরই সঙ্গে অবসান ঘটে তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে তার ১২৫ বলে ১৩৫ রানের চতুর্থ উইকেট জুটির। তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গী হন মুশফিক। ৬ বছর পর ছয়ে নামা মুশফিক শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী। তার ২৬ বলে ৩ চার ৩ ছক্কায় ৪৪ রানের ইনিংসটি থামে ক্যাচ গ্রাহাম হুমের বলে দিয়ে। একই ওভারে পঞ্চম বলে হুম বোল্ড করে দেন সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাক তৌহিদ হৃদয়কে। ৮৫ বলে ৮ চার ২ ছক্কায় ৯২ রানের ইনিংস খেলে ফিরেন অভিষিক্ত এই তরুণ। ৪৭তম ওভারে দলের স্কোর তিনশ ছাড়ায়। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান তোলে বাংলাদেশ।
দেশকণ্ঠ/আসো