- |
- |
- জাতীয় |
- আন্তর্জাতিক |
- বিনোদন |
- ক্রীড়া |
- মত-দ্বিমত |
- শিক্ষা-স্বাস্থ্য |
- বিজ্ঞান-প্রযুক্তি |
- কৃষি বার্তা |
- অর্থ-বাণিজ্য-উন্নয়ন |
- সাহিত্য-সংস্কৃতি-সংগঠন |
- সারাদেশ |
দেশকন্ঠ প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীরা পরবর্তীতে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে, যাকে পোস্ট-কোভিড-১৯ সিনড্রোম (পিসিএস) বা লং কোভিড হিসেবেও অভিহিত করা হয়। আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন তাদের নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে । পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে হবে।আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর ডি ব্লকের আইএনএম অডিটোরিয়ামে ‘লং টার্ম সিকুয়েল অফ কোভিড-১৯: অ্যা লংগিটুডিনাল ফলো-আপ স্টাডি ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানানো হয়।গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হবার প্রথম পাঁচ মাসের ফলোআপের ফলাফল সম্প্রতি গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ সাউথইস্ট এশিয়া প্রকাশিত হয়। এশিয়ার মধ্যে এটি প্রথম গবেষণা।বিএসএমএমইউ ও আইসিডিডিআরবি’র যৌথ উদ্যোগে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে।যৌথ গবেষণার ফল ও চিকিৎসার গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়েছে।
ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ‘লং কোভিড ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন ফর ফিজিশিয়ানস্’ শীর্ষক একটি নির্দেশিকাও উপস্থাপন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো: শারফুদ্দিন আহমেদ। দীর্ঘদিনের কোভিড জটিলতা ও সমাধানের জন্য বিএসএমএমইউর শিক্ষক, চিকিৎসক এবং আইসিডিআর’বির বিজ্ঞানীদের এই যৌথ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন তিনি।উপাচার্য বলেন, করোনা নিয়ে ব্যাপক গবেষণার সুযোগ রয়েছে। যাদের করোনা হয়েছে আবার যাদের করোনা হয়নি তাদের নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনায় মৃত্যুর হার বেশি আবার বাংলাদেশে অনেক কম কেন এরকম সেটা নিয়েও গবেষণা হতে পারে। করোনা পারে না এমন কিছু নাই। করোনার কারণে মানুষের স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে। চোখের দৃষ্টি শক্তিতে প্রভাব ফেলেছে। হৃদযন্ত্রে প্রভাব ফেলেছে। মানব দেহে বিদ্যমান রোগের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে।আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ গবেষণার ফলাফলের উপর তারমতামত প্রকাশ করেন।প্রফেসর ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত গবেষণালব্ধ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকদের জন্য লং কোভিড ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন উপস্থাপন করেন।
গবেষণার ফলাফলে জান যায়, ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় অবস্থিত কোভিড-১৯-মনোনীত দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া কোভিড-১৯ আক্রান (আরটি-পিসিআর দ্বারা শনাক্তকৃত) ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৩৬২ জন ব্যক্তিকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের কোভিড-পরবর্তী জটিলতা নির্ণয় করার জন্য সেরে ওঠার ১ মাস, ৩ মাস এবং ৫ মাস পর ফলোআপ করা হয়। তাদের ¯œায়ুবিক, হৃদযন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। গবেষণা দেখা যায়, ৪০ বছরের কম বয়সীদের তুলনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী কোভিড-১৯ মেনে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদযন্ত্রের জটিলতা এবং ¯œায়ুবিক জটিলতা সম্ভবনা দ্বিগুণ। এই রোগের দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাবগুলোও নারী -পুরুষ ভেদে পৃথক, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে কোডিড-পরবর্তী জটিলতার প্রকোপ দেড় থেকে চার (১.৫-৪) গুণ পর্যন্ত বেশি দেখা গেছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত এবং নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়েছিল এমন রোগীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার সম্ভাবনা হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় দুই থেকে তিন (২-৩) গুণ পর্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গুরুতর কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করা সত্ত্বেও রক্তে অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগারের সম্ভাবনা যাদের কম, হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়নি তাদের তুলনায় ৯ থেকে ১১ গুণ বেশি ছিল এবং তাই যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাদের বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। একটি শঙ্কার বিষয় হলো, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার ছিল প্রতি এক হাজার জনে ১০ জন। একইভাবে, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে কিডনি জনিত জটিলতা (হাই ক্রিয়েটেনিন এবং প্রোটিনিউরিয়া) এবং লিভার জনিত জটিলতা (বর্ধিত লিভার এনজাইন) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। উল্লেখ করার বিষয় হল, সময়ের সাথে সাথে উভয় গ্রুপের জটিলতাগুলোর বেশিরভাগ হ্রাস পেয়েছে। তবে শাসকষ্ট, দ্রুত হৃদকম্পন, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ, বিষন্নতা ইত্যাদির মতো কিছু সমস্যা রোগমুক্তির ৫ মাস পরেও মৃদু-কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়নি। এত বলা হয়, এই ফলাফলগুলো কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের ফলোআপ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। উচ্চ ঝুঁকির কারণে বয়স্ক এবং হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কোভিড ১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হবার ঘটনাও বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। কারণ এটি দেশে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
দেশকন্ঠ/এআর
পথরেখা : আমাদের কথা