• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ১১:৪১

ফুটবলে ব্যর্থতা চলছেই আর কত দিন

বিশেষ প্রতিবেদন : আরেকটি টুর্নামেন্টে ব্যর্থতা দিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের। ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট দ্বি-পাক্ষিক হওয়ায় শিরোপা জয়ের প্রত্যাশাটা বেড়েছিল। কিন্তু অপেশাদার আর দুর্বল সিশেলকে হারাতে পারেনি জামাল ভুইয়ার দল। ব্রুনাই না আসায় আগেই রং হারিয়েছিল এবারের আসর। প্রথম ম্যাচে জয়ের পর শিরোপা জেতার রাস্তায়ই ছিল লাল সবুজের দল। কিন্তু ব্যর্থতায় সবকিছু উলট পালট হয়ে যায়। ফুটবলে এই ব্যর্থতার শেষ কোথায় সেই আলোচনাই চারিদিকে হচ্ছে।
 
দ্বি পাক্ষিক সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে সিশেলসের বিপক্ষে পেরে উঠল না বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ জিতলেও সিরিজটা তাই সমতায় শেষ করতে হলো স্বাগতিকদের। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশকে ১-০ গোলে হারিয়েছে সিশেলস। ম্যাচর প্রথমার্ধ গোলশূন্য ছিল। ৬৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা। ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন বক্সের মধ্যে উড়ন্ত বল পা অনেক ওপরে তুলে দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন। ভুটানি রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজান। স্পট কিক থেকে সিশেলসের মিশেল গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। পরে আর ম্যাচে ফেরা হয়নি জামাল ভূঁইয়া, তপু বর্মনদের।
 
পরাজয়ের পাশাপাশি ম্যাচ শেষে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির তৈরি হয়। হাতাহাতিতে জড়িয়ে যান দুই দলের ফুটবলাররা। সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ১-০ গোলে হারিয়েছিল সিশেলসকে। সিশেলসের বিপক্ষে যখন হতাশ করল বাংলাদেশ, ঠিক একই সময়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত। তারা টানা দুই ম্যাচে হারাল মায়ানমার ও কিরগিজস্তানকে। নিজেদের মাঠে কিরগিজস্তানকে ২-০ গোলে হারায় ভারত। দলটির হয়ে গোল করেন সন্দেশ জিঙ্ঘন ও সুনিল ছেত্রি। আগের ম্যাচে মায়ানমারকে হারানোয় এই ম্যাচ ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হতো ভারত। তবে সুনিলরা জয়ের জন্যই খেলতে নেমেছিল। আক্রমণাত্মক দল সাজিয়েছিলেন কোচ স্টিমাচ। সিরিজের প্রথম ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল একই ব্যবধানে। ফলে এই সিরিজ শেষ হলো ১-১ সতায়। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে সাত ধাপ পিছিয়ে আছে সিশেলস। বাংলাদেশের অবস্থান ১৯২, সিশেলসের অবস্থান ১৯৯তম স্থানে। সেই দলের বিপক্ষে এমন হারে বাংলাদেশি ফুটবল সমর্থকেরা হতাশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জামাল-তপুদের নিয়ে তাই সমালোচনার ঝড় বইছে।
 
র‌্যাঙ্কিংয়ে সাত ধাপ পেছনে, দলের অনেকেরই জীবিকার প্রধান মাধ্যম ফুটবল নয়। এমন দল নিয়ে বাংলাদেশে প্রীতি ম্যাচ খেলতে এসেছিল সিশেলস। আর তাদের সঙ্গেই বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতে হারের তিক্ত স্বাদ পেয়েছে। জামালদের এই হারে ফুটবলাঙ্গনে চলছে সমালোচনার ঝড়। দেশীয় ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তী আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও প্রথম হ্যাটট্রিকম্যান চুন্নু যারপরনাই হতাশ এই পারফরম্যান্সে, ‘এই ফুটবল মানুষ দেখতে চায় না। খুবই দুঃখজনক। এমন দলের সঙ্গে এই পারফরম্যান্স নিয়ে বলতেও খারাপ লাগছে। বিশ্লেষণ করতে গেলে অনেক বিষয়ই ওঠে আসবে। একটাই মূল, টোটালি কোয়ালিটির অভাব।’ মঙ্গলবার প্রায় একই সময় সাফ অনুর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবলে বাংলাদেশের ম্যাচ ছিল। সিনিয়র জাতীয় ফুটবলারদের চেয়ে তরুণীদের খেলায় মুগ্ধ বাংলাদেশের এই কিংবদন্তি। কথা বলেছেন সেই প্রসঙ্গেও, ‘সত্যি বলতে ছোট মেয়েদের খেলায় আমি মুগ্ধ’।
 
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকজনকে দেখলাম বলের ওপর অসম্ভব দখল। যেটা মানসম্পন্ন ফুটবলারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। দুঃখজনক হলেও সত্যি বাংলাদেশ সিনিয়র দলে (পুরুষ) এটি খুব অনুপস্থিত।’ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য্য কিছু দিন আগেও জাতীয় দলের কোচিং স্টাফ ছিলেন। স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়েরের গোলরক্ষক কোচ হিসেবে কাজ করেছেন বিপ্লব। সিশেলস ম্যাচের ব্যর্থতার পর এই সাবেক অধিনায়কের কাঠগড়ায়ও ফুটবলাররাই। ঘরোয়া লিগের পারফরম্যান্সের সঙ্গে জাতীয় দলের ম্যাচ পারফরম্যান্সের তারতম্য ধরা পড়েছে বিপ্লবের চোখে, ‘কোচ এবং ফেডারেশনের দোষারোপের সুযোগ নেই। ফেডারেশন যথেষ্ট সময় ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। আমি হ্যাভিয়েরের সঙ্গে ছিলাম। তার চেষ্টাও আন্তরিকতা দেখেছি। কোচরা কৌশল সাজিয়ে দেয়। মাঠে খেলতে হবে ফুটবলারদের। ফুটবলাররা দায়িত্ব না নিলে ফলাফল আসবে না।’ জাতীয় দলে সবচেয়ে বেশি ফুটবলার বসুন্ধরা কিংসের। বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজন নিজেও বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন। সিশেলসের সঙ্গে এই হারে তিনিও অনেকটা ব্যথিত, ‘প্রথম ম্যাচটি আমি দেখেছি। দ্বিতীয় ম্যাচের সময় ক্লাবের অনুশীলন থাকায় দেখতে পারিনি। পরবর্তীতে সিশেলসের গোলের মুহূর্ত দেখলাম। বাংলাদেশ দল যে প্রস্তুতি নিয়েছে এবং দেশের মাটিতে এমন হার সমর্থকদের জন্য কষ্টকর।’ কিংসের কোচ রাখঢাক রেখে খানিকটা মন্তব্য করলেও দেশীয় শীর্ষ কোচদের অনেকেই মন্তব্য করা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন। ফুটবলাররা যোগ্যতা-সামর্থ্যরে চেয়ে অনেক অর্থ পায় বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
 
জামাল-তপুদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই! ‘শৌখিন’ ফুটবলারদের নিয়ে গড়া দল সিশেলস। পূর্ব আফ্রিকার সেই দলটিই হারিয়ে দিল বাংলাদেশকে। যে হারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জামাল ভূঁইয়া, তপু বর্মনদের নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। দেশের ফুটবলের মান, ফুটবলারদের পেশাদারিত্ব নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সেই সঙ্গে হতাশ সমর্থকদের কেউ কেউ ফুটবলারদের আইনের আওতায় আনার দাবিও তুলেছেন। সেই দলের বিপক্ষে এমন হারে বাংলাদেশি ফুটবল সমর্থকেরা ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশের ফুটবল সমর্থকদের একটি গ্রুপে যেমন একজন লিখেছেন, ‘দেশের প্রতি নেই কোনো দায়বদ্ধতা। আমাদের খেলোয়াড়দের সাথে কোনো দায়বদ্ধতা নেই জাতীয় দল ম্যানেজমেন্টেরও! ৯০ হাজার দেশের একটা দল বাংলাদেশকে হারিয়ে দিল! লজ্জা কি হবে না এদের! যেমন বোনলেস কোচ তেমন আমাদের খেলোয়াড়রা!’ দর্শক-সমর্থকরা যা করেছেন এটাকে কষ্টেরই বহিঃপ্রকাশ বলা যায়।
দেশকণ্ঠ/আসো
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।