মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : ওয়ানডে সিরিজে অল্পের জন্য হোয়াইটওয়াশ করা সম্ভব হয়নি। এবার সেই লক্ষ্যটা টি-টোয়েন্টি পূরণ করার লক্ষ্য বাংলাদেশের। ৩১ মার্চ দুপুর দুইটায় তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামছে সাকিব আল হাসানের দল। অন্যদিকে আইরিশরা চাইবে ধবল ধোলাই এড়াতে। লাল সবুজ ক্রিকেটের এমন সুসময় খুব কমই এসেছে! টানা ম্যাচ জিতে চলেছে টাইগাররা। সেটাও আবার টি-টোয়েন্টিতে, যে ফরম্যাট এতদিন সাকিব আল হাসানদের কাছে ছিল গোলকধাঁধাঁ! নিজেদের খেলার ধরনে আমূল পরিবর্তন সেই টি-টোয়েন্টিতেই এখন ধারাবাহিক সাফল্য পেয়ে চলেছে দল। এই ফরম্যাটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার পর আয়ারল্যান্ডকেও সিরিজ হারালো তারা এক ম্যাচ হাতে রেখে। কিন্তু এই টানা সাফল্যে আবার আত্মতুষ্টি পেয়ে বসবে না তো? বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব সেই সুযোগই দেখেন না। তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বুধবার আয়ারল্যান্ডকে রীতিমতো উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে বৃষ্টির কারণে ১৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৭৭ রানের জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা। তাতে এক ম্যাচ হাতে থাকতেই সিরিজ নিশ্চিত হয় তাদের।
শেষ ম্যাচটিও জিততে চান অধিনায়ক সাকিব। ব্যাট হাতে ২৪ বলে অপরাজিত ৩৮ রানের ইনিংসের পর বল হাতে জাদু দেখিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট শিকার করে তিনি বনে গেছেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করায় আইরিশদের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির ম্যাচসেরা তিনিই। কিউই পেসার টিম সাউদিকে পেছনে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়ে খুশি সাকিব। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সাকিব বলেন, ‘বাংলাদেশি কেউ শীর্ষে আছে, এতে আমি অবশ্যই খুশি।’ বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক খুশি দলের সাফল্যেও, ‘শেষ কয়েকটি ম্যাচে আমাদের পারফরম্যান্সের যে ধারাবাহিকতা ছিল সেটা ধরে রাখতে চেয়েছিলাম। মাঠে সেটা করতে পেরেছি। বড় দল হতে হলে অবশ্যই মাঠে গিয়ে প্রথম বল থেকেই নিজেদের মেলে ধরতে হবে। আমরা সেটাই আলোচনা করেছি এবং সেভাবেই খেলেছি।’
সিরিজ জয় নিশ্চিত করেই তৃপ্ত নন সাকিব। জিততে চান শেষ ম্যাচটিও। তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলো ২-০ হওয়ার পর চেষ্টা করে প্রতিপক্ষকে ৩-০ ব্যবধানে হারাতে। আমরাও সেটা চেষ্টা করব। নতুন কয়েকজন খেলোয়াড়কে পরীক্ষা করে দেখতে পারি। যদিও তারা ভালো করতে ক্ষুধার্ত থাকবে।’ প্রথম ম্যাচে লিটন-রনির ব্যাটে রেকর্ডের পাতাও ওলটপালট হয়ে গেছে। লিটন দাস ও রনি তালুকদারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে হেরেছে আয়ারল্যান্ড। এতে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। ২০৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রান করেছে আইরিশরা। এতে বাংলাদেশ জিতেছে ৭৭ রানে। বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় আয়ারল্যান্ড। এরপরই নামে বৃষ্টি। মাঝে একবার বৃষ্টি বন্ধ হলে ১৯ ওভারের ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। পরে খেলতে নামার আগেই ফের বৃষ্টি নামায় খেলা ১৭ ওভার নির্ধারণ করা হয়। বৃষ্টির বাধায় ১৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০২ রান করে টাইগাররা।
এদিন খেলা শুরুর আগে দমকা হাওয়ার সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি দেখেছে আয়ারল্যান্ড। মাঠে নেমে তারা পড়ে গেছে লিটন দাস ও রনি তালুকদারের ঝড়ের কবলে। দুই প্রান্ত থেকেই দাপুটে ব্যাটিংয়ে আইরিশদের বোলিংয়ের পাশাপাশি রেকর্ডের পাতাও ওলটপালট করেছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। দশম ওভারে বেন হোয়াইটের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ আউট হন রনি তালুকদার। স্কোরবোর্ডে তখন ৯.২ ওভারে ১২৪ রান। উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান এটি। এর সঙ্গে দ্রুততম দলীয় ফিফটি ও সেঞ্চুরির রেকর্ডও হয়েছে এই ম্যাচে। গ্যারেথ ডেল্যানির কথা প্রথম ওভারে বাউন্ডারির দেখা পায়নি বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের সাফল্য বলতে ওটুকুই। দ্বিতীয় ওভার থেকে শুরু করে নবম ওভার পর্যন্ত বাউন্ডারিবিহীন ওভার আর একটিও কাটায়নি বাংলাদেশ। দুই পাশ থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে আইরিশ বোলারদের তুলাধুনা করেন লিটন ও রনি। মাত্র ২১ বলে পূরণ হয় বাংলাদেশের ৫০ রান। দ্রুততম দলীয় ফিফটির রেকর্ড এটি। আগের রেকর্ড ছিল আইরিশদের বিপক্ষেই ২০১৬ বিশ্বকাপে করা ২৪ বলে ৫০ রান। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ধরে রেখে ২২ বলে আসে পরের পঞ্চাশ।
সব মিলিয়ে ৪৩ বলে হয় দলীয় একশ রান। এই সিরিজের আগের ম্যাচেই ৫৩ বলে দলীয় একশ পূরণ করেছিল বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় শতরানের জুটি এটি। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম উইকেটে ১০২ রান যোগ করেন মোহাম্মদ নাইম শেখ ও সৌম্য সরকার। প্রায় দুই বছর পর সেটি ছাপিয়ে গেলেন লিটন ও রনি। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি এটি। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে ১৩২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এদিন, লিটন-রনির ৫৬ বলে ১২৪ রানের জুটির রান রেট ১৩.২৮। এই সংস্করণে বাংলাদেশের ৮২টি পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটির মধ্যে ওভারপ্রতি রান তোলার হিসেবে এটিই দ্রুততম। ২৫ রান ছোঁয়া উদ্বোধনী জুটিগুলোর মধ্যেও এই রান রেট সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৬ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই ১৩.০৭ রান রেটে ৬১ রানের জুটি গড়েছিলেন সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবাল। পরে ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফ্লোরিডায় তামিম ও লিটন ৬১ রানের জুটি গড়েছিলেন ঠিক ১৩.০৭ রান রেটেই।
সাম্প্রতিক সময়ে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে লিটন দাস বাংলাদেশ জাতীয় দলের অপরিহার্য ক্রিকেটারে পরিণত হয়েছেন। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি সব ফরম্যাটেই ওপেনার হিসেবে তার কোনো জুড়ি নেই। উদ্বোধনী জুটিতে তার ব্যাটিংয়ের গতি সর্বক্ষেত্রে প্রশংসা লাভ করেছে। ইংল্যান্ড সিরিজের পর চট্টগ্রামে সফরকারী আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ২য় টি-টোয়েন্টিতে ১৮ বলে ফিফটি করে রেকর্ডের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। তবে এতেও তেমন উচ্ছ্বসিত নন লিটন দাস। সেঞ্চুরি না পাওয়াটা তার জন্য বেশি কষ্টের, অনেক আক্ষেপের। আয়ারল্যান্ড দলের বিপক্ষে খেলায় তিনি ৪৪ বলে করেছেন ৮৩ রান। তার এমন বিধ্বংসী ইনিংস খেলার ম্যাচে বল হাতে সাকিবের ঘূর্ণিতে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ৭৭ রানে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে লিটন দাস সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার চেষ্টা থাকবে। তবে এই মুহূর্তে রনি তালুকদারের ব্যাটিং আমাকে বেশ উৎসাহিত করছে। জুটি হিসেবেও রনির সঙ্গে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। তার ব্যাটিং আমি বেশ উপভোগ করি।’
দেশকণ্ঠ/আসো