• শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
    ৬ আশ্বিন ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০৯:৩২

সাফল্যেও সংকট কাটছে না মেয়েদের ফুটবলে

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : বাংলাদেশের ফুটবলকে যদি এখন দু’ভাগে ভাগ করা হয় তাহলেও একদিকে সাফল্য আর অন্যদিকে পাওয়া যাবে হতাশা আর ব্যর্থতা। আরেকটি খোলাসা করে বললে বলতে হবে, মেয়েদের ফুটবলে সাফল্য আর পুরুষ ফুটবলেও শুধুই হতাশার গল্প। সর্বশেষ সাফ অনুর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশীপেও রানার্সআপ হয়েছে বাংলাদেশ। সেখানে বিশ্ব ফুটবলে একেবারেই অচেনা সিশেলসের মতো দলের কাছে হারতে হয়েছে পুরুষ ফুটবল দল। মেয়েদের বয়সিভত্তিক দলটি রাশিয়া ও ভারতের মতো পরাশক্তির সাথে লড়াই করে দ্বিতীয় হয়েছে। আর জামাল ভুইয়ার দল তো এখন হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করেও সাফল্যের দেখা মিলছেনা। ব্রনাই না আসায় ত্রিদেশিয় টুর্নামেন্টটি হয়ে যায় দ্বিপাক্ষিক। সেখানে আফ্রিকার প্রতিনিধি সিশেলকে প্রথম ম্যাচে পরাজিত করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে হারতে হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরেই প্রথমবারের মতো মেয়েদের সাফ ফুটবলের শিরোপা জিতে বাংলাদেশ। সেই দলকে নানা সংবর্ধনা আর প্রতিশ্রতিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। এবার সবচেয়ে বড় কষ্টা তারা পেয়েছে অলিম্পিক গেমসের বাছাইপর্বে খেলতে যেতে না পেরে। আর্থিক কারণে মায়ানমারে অনুষ্ঠিত এই আসর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে লাল সবুজের দল।
 
এরকম হঠকারি সিদ্বান্ত দিয়ে রীতিমতো সমালোচনার তীরে বীদ্ধ হতে হচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে)। সত্যিই কি অর্থের অভাবে এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়নি বাংলাদেশ, নাকি পেছনে অন্যকিছু লুকিয়ে আছে! কারণ ফুটবল সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন বাফুফে নাকি কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে চাইছে। এ বিষয়ে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেছেন, ’অনেক চেষ্টা করেও টাকা জোগাড় করতে পারিনি। তাই অর্থের অভাবে নারী ফুটবল দল মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই পর্ব খেলতে যেতে পারছে না’। এরপরই দেশের ফুটবলে প্রশ্ন, আসলেই কি তাই? বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় ফুটবল দল কিছুদিন আগে দেশের মাটিতে ফুটবল সিরিজ খেলার জন্য ঘটা করে সৌদি আরবে গিয়ে ক্যাম্প করে এলো। খেলতে নেমে দুই ম্যাচের সিরিজ ড্র করল ১-১ ব্যবধানে। অন্যদিকে মাস ছয়েক আগে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেছেন সাবিনা খাতুনরা। বহু বছর পর ফুটবল নিয়ে মেতেছিল পুরো দেশ। এই মেয়েরা অলিম্পিকের বাছাই পর্বটাই খেলতে পারল না! মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই পর্বে বাংলাদেশ মুখোমুখি হতো ইরান, মালদ্বীপ ও স্বাগতিক মিয়ানমারের। দারুণ সুযোগ ছিল বাছাই পর্বের প্রথম পর্বটা পাড়ি দিয়ে দ্বিতীয় পর্বে খেলার।
 
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগটাই তো পেলেন না সাবিনা খাতুনরা। নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারে খেলতে যেতে হবে নিজস্ব অর্থায়নে। এ তথ্যটা বাফুফে কি আগে থেকে জানত না? জেনে থাকলে সেই ব্যবস্থা করা গেল না কেন? অনেকে অনেক কথা বলছেন ফুটবলপাড়ায়। কিন্তু সদিচ্ছা থাকলে সাবিনা খাতুনরা নিশ্চয়ই মিয়ানমারে গিয়ে খেলার সুযোগ পেতেন! নারী ফুটবলেও বর্তমানে অর্থ কম নয়। লিগ নিয়মিত মাঠে গড়াচ্ছে। ফুটবলাররা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা পাচ্ছেন। হাল আমলে ঘটা করে নারী ফুটবলের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের ঘোষণাও এসেছে। সেখানেও থাকছে প্রচুর অর্থের হাতছানি। এত কিছুর পর সত্যিই অর্থের অভাবে খেলা হলো না অলিম্পিক বাছাই পর্ব! ১৯৫০ সালে ভারত বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু তারা সেই টুর্নামেন্টে খেলতে পারেনি। সে সময় বুট পড়ে খেলতে অভ্যস্ত ছিলেন না দেশটির ফুটবলাররা। এরপর আর বিশ্ব আসরে খেলার সুযোগ পায়নি দেশটি। অর্থের অভাবই নাকি বড় কারণ ছিল। সেই বিশ্বকাপে অংশ নিলে ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসটা ভিন্নভাবেই হয়তো লেখা হতো! বাংলাদেশের মেয়েরা অলিম্পিকের বাছাই পর্ব খেলতে পারলে চূড়ান্তপর্বের পথও হয়তো খুলে যেত।
 
এদিকে আর ‘ভিক্ষা’ করতে চান না বাফুফে সভাপতি কাজি সালাউদ্দিন। নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল দক্ষিণ এশিয়া জয় করেছিল। উৎসবের আমেজে ভাসিয়েছিল গোটা দেশকে। সেই দলটাকে অংখ্য প্রতিষ্ঠান নগদ অর্থ দিয়ে করেছে পুরস্কৃত। সেসব আনন্দঘন মুহূর্তের পেরিয়েছে মাত্র ৬ মাস হলো। এরই মাঝে বাফুফে পড়েছে অর্থ সংকটে। সাবিনা খাতুনদের তাই অলিম্পিকের বাছাই খেলতে পাঠাতে পারছে না। তবে এবার আর কারও কাছে ধরনা দিতে চায় বাফুফে। অর্থের অভাবে অলিম্পিক বাছাইয়ে দল পাঠাতে না পারাটা মেনে নিতে পারছেন না বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তবে এবার আর তিনি কারও কাছে হাত পাততে চান না জানিয়ে বলেছেন, ‘এত দিন সবার কাছে ভিক্ষা চেয়েছি। এখন ভিক্ষার দরজাও বন্ধ হয়ে গেছে।’ বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী অর্থ পুরস্কার দিয়েছেন, সেনাবাহিনী দিয়েছে। আমাদের একটা স্পনসর আছে, ঢাকা ব্যাংক। ওরা বছরে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো দেয়। বসুন্ধরা এখন পর্যন্ত দিয়েছে ২৫ লাখ টাকা। আমাদের ক্যাম্পে খাওয়ার খরচ বছরে সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো। মেয়েরা সাফ জেতার পর অনেকে ঘোষণা দিলেও এখনও সবাই টাকা দেননি।’
 
গত মাসে সিঙ্গাপুরে প্রীতি ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করেছিল বাফুফে। শেষ মুহূর্তে ছোট দেশে যেতে অপারগতা প্রকাশ করায় সফরটি আর হয়নি। আগামী ৫-১১ এপ্রিল ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের নারী ফুটবলের এশিয়ান অঞ্চলের বাছাই খেলতে মেয়েদের মিয়ানমারেও পাঠাচ্ছে না বাফুফে। বাফুফে সুত্রে জানা গেছে, দল পাঠাতে বাফুফের প্রয়োজনীয় অর্থের সংকুলান না থাকায় গত সপ্তাহে তারা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। অর্থের সংকুলান করতে না পারায় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে না। এদিকে ফিফা ও পুরস্কারের টাকা কোথায় গেল সেই প্রশ্নও করছেন কেউ কেউ। কারণ নানা সময় অর্থ নিয়ে অনেক প্রত্যাশিত কথাও শোনা গেছে।
দেশকণ্ঠ/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।