• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০১:১৪

মুশফিকের সেঞ্চুরি বড় জয় দেখছে বাংলাদেশ

দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : মুশফিক আর আগের মতো নেই, ব্যাটে নেই ধার, তাই অনেকেই শেষ দেখে ফেলেছিলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের। আয়ারল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফরের সময় থেকেই বোঝা গেছে সাবেক এই অধিনায়ক হারিয়ে যাননি। সেটা তিনি ব্যাট হাতেই জবাব দিয়েছেন, পাশাপাশি উইকেটের পেছনে থেকে ধরছেন দারুন কিছু ক্যাচও। আইরিশদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের দ্বিতীয় দিনে দারুণ এক সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন মুশি। তাঁর পুরো ইনিংসে যতটা দৃঢ়তা ছিল, সেঞ্চুরির শটটা সে হিসাবে কিছুটা নড়বড়ে। তাতে কী আসে যায়? থার্ডম্যান দিয়ে ওই চারে মুশফিক রহিম যে পৌঁছে যান তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে। মুশফিকের টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০ম সেঞ্চুরি। উদ্‌যাপনটা অবশ্য সাদামাটাই করেছেন মুশফিক। আকাশের পানে তাকালেন, হেলমেটে চুমো খেলেন; তারপর সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা থেকে সিজদা দিলেন। সেঞ্চুরি করে সাধারণত যেমন বুনো উচ্ছ্বাস করেন মুশফিক, সে হিসাবে উদ্‌যাপনের ধরন একটু ব্যতিক্রম ছিল বলাই যায়। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনের শুরুতে মুমিনুল হক আউট হলে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন সাকিব আল হাসান। তুলনায় মুশফিক একটু রয়েসয়েই ছিলেন।
 
তবে সেঞ্চুরির আক্ষেপ জাগিয়ে সাকিব ফিরে গেলেও একপ্রান্তে অবিচল ছিলেন মুশফিক। এই অবিচলতাই তাঁকে এনে দিয়েছে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৬তম ফিফটিকে মুশফিক রূপান্তর করেছেন ১০ম সেঞ্চুরিতে। গত ডিসেম্বরে ভারত সিরিজ থেকে ব্যাটের সঙ্গে কম সখ্য হচ্ছিল মুশফিকের। দুই টেস্টের চার ইনিংসে ৩০-এর ওপরে স্কোর ছিল না একটিও। ইনিংস শুরু করছিলেন, কিন্তু বড় করতে পারছিলেন না। তবে খারাপ সময়টা বেশি ত্বরান্বিত হতে দিলেন না মুশফিক। মুশফিকুর রহিমের ইনিংসটা বড় হচ্ছিল ধীরে ধীরে। তবে একটা সময় ধৈর্যচ্যুতি ঘটেই গেলো ডানহাতি এই ব্যাটারের। আইরিশ অফস্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনকে তুলে মারতে গিয়ে লংঅনে দুর্দান্ত এক ক্যাচ হলেন মুশফিক। ১৬৬ বলে গড়া মুশফিকের ১২৬ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংসটিতে ছিল ১৫ বাউন্ডারি আর ১টি ছক্কার মার। তিনটি জুটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। সাকিবের সঙ্গে ১৫৯, লিটনের সঙ্গে ৮৭ আর মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে ৪৫ রান যোগ করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।
 
বাংলাদেশ ৩৬৯ রানে অলআউট হয়ে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে রয়েছে ১৫৫ রানে।  মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের ১৫৫ রানের লিডের জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ঠিকই ধুঁকছে আয়ারল্যান্ড। দ্বিতীয় দিনশেষে ২৭ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে তারা। সাকিব ও তাইজুল ভাগ করে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ১৫৯ রানের দুর্দান্ত এই জুটি বাংলাদেশকে লিড নেয়ার পর্যায়েও নিয়ে এসেছিলো। সাকিবও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু এক-দুটা বলে রান করতে না পারলে হঠাৎ করেই যেন ধৈর্যচ্যুতি ঘটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। সাকিব আল হাসানেরও তেমনটা হয়েছে। ধৈর্যচ্যুতি ঘটার কারণে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে থাকা একটি বলে কট বিহাইন্ড হয়ে গেলেন তিনি। লেগ সাইডে ফিল্ডিং পুরোপুরি ফাঁকা রেখেছিলো আয়ারল্যান্ড। আর বোলার অ্যান্ড ম্যাকব্রাইন বল করছিলেন টানা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে। এই ফাঁদেই পা দেন সাকিব। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল টেনে এনে শট খেলতে চাচ্ছিলেন বারবার। অবশেষে বলটা মিস করলেন তিনি। ব্যাটের উপরের কানায় লেগে গিয়ে বলটি জমা পড়লো উইকেটরক্ষকের হাতে। দলীয় ১৯৯ রানের মাথায় আউট হলেন সাকিব। এ সময় তার নামের পাশে শোভা পাচ্ছিল ৯৪ বলে ৮৭ রান। এর আগে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারের ওপর ভর করে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছিলো বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের করা ২১৪ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতে কিছুটা বিপদে পড়ে টাইগাররা।
 
কিন্তু অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের দৃঢ়তায় সে বিপদ কাটিয়ে ওঠে স্বাগতিকরা। ঝোড়ো গতিতে ব্যাট করে প্রথমে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন অধিনায়ক সাকিব। ঝোড়ো গতিতে না হলেও তার দেখাদেখি হাফসেঞ্চুরির মাইলফলক পার হন মুশফিকুর রহিমও। ৬৯ বলে ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। ৩৪ রান নিয়ে দিন শুরু করার পরপরই মুমিনুল হকের উইকেট হারিয়ে দারুণ বিপদে পড়েছিলো বাংলাদেশ। এরপর সেই বিপদ থেকে টাইগারদের টেনে তোলার গুরুদায়িত্ব পালন করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। আগের দিন নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হয়েছেন শূন্য রানে। তামিম ইকবাল আউট হন দিনের শেষ বলে ২১ রান করে। আর দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ১৭ রান করে বিদায় নেন মুমিনুল হকও। ৪০ রানের মধ্যে অভিজ্ঞ তিন ব্যাটার আউট হওয়ার পর বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে মুশফিক আর সাকিবের প্রতিরোধ। প্রথম দিন শেষ বিকেলে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারিয়ে অস্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করেছিলো টাইগাররা। রান ছিল ৩৪।
 
১৮০ রানে তখনও পিছিয়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বুধবার সকালে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হক এবং মুশফিকুর রহিমের ওপর প্রত্যাশা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ দু’জন ভালো একটা জুটি গড়বেন এবং বাংলাদেশকে একটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবেন, এ প্রত্যাশা নিয়ে সকাল সকাল মানুষ খেলা দেখতে বসেছিলেন। কিন্তু সকালের খেলা শুরু হতে না হতেই বোল্ড হয়ে যান মুমিনুল হক (৩৪ বলে ১৭)। মার্ক অ্যাডেয়ারের বলটি ছিল লেগ স্ট্যাম্পের ওপর ফুল লেন্থের। মুমিনুল এক পা এগিয়ে এসে স্কয়ার লেগের ওপর কাট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিচু হয়ে আসা বলটির লাইনেই যেতে পারলেন না। তার আগে দেখলেন নিজের স্ট্যাম্প উড়ে গেলো। একের পর এক সমালোচনা তাকে নিয়ে। বয়স বেড়ে গেছে। ব্যাটিং ভুলে গেছেন। এসব নানা সমালোচনায় জর্জরিত হয়ে টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দিয়েছেন আগেই। এবার হয়তো ওয়ানডে এবং টেস্ট ক্রিকেটকেও বিদায় জানাবেন কিছুদিনের মধ্যে। কিন্তু মুশফিকুর রহিম তার আগে বুঝিয়ে দিয়েলেন, তাকে নিয়ে হওয়া সমালোচনা অনর্থক। তিনি এর চেয়েও অনেক ভালো। ব্যাট হাতে সমালোচনার জবাব দিয়ে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। ৪০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন ধুঁকছিলো, তখন হাল ধরেন মুশফিক এবং সাকিব।
 
দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ১৫৯ রানের বিশাল জুটি। ৮৭ রান করে সাকিব আউট হয়ে গেলেও মুশফিক নিজের ইনিংসটাকে নিয়ে গেলেন তিন অংকের ঘর পর্যন্ত। ১৩৫ বলে ক্যারিয়ারের ১০ম টেস্ট সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন মুশফিকুর রহিম। প্রায় এক বছর আগে (২৩ মে, ২০২২) এই মাঠেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিক। এরপর অবশ্য খেলা হয়েছেই মাত্র দুটি টেস্ট। এবার আবারও মিরপুরের মাঠে জ্বলে উঠলেন মুশফিক। আইরিশ বোলিংকে উইকেটের চারদিকে খেলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। এখন বাংলাদেশ কত দ্রুত আয়ারল্যান্ডকে অলআউট করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে সেটাই দেখার বিষয়।
দেশকণ্ঠ/আসো
 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।